‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা মুক্তির পর রাতারাতি তারকা বনে যান চিত্রনায়ক সালমান শাহ। সে বছর চলচ্চিত্র অঙ্গনে সালমান শাহকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। ওই বছর থেকে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সব আয়োজনেও সরব ছিলেন এই সুপারস্টার। পরে ১৯৯৩ সালে সেলিব্রেটি ক্রিকেট লিগে অংশ নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে ছিলেন এই ঢালিউড নায়ক।
সেবার চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে খেলা হয়। সেই তারকাদের ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন সালমান শাহ। ৩০ বছর পর ধারণকৃত ভিডিও বক্তব্য নতুন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে। ভক্তদের প্রশংসা কুড়াচ্ছেন এই প্রয়াত চিত্রনায়ক। সেই ভিডিও বার্তা দেখে ৩০ বছর পর আবেগাপ্লুত হয়ে গেলেন তাঁর মা নীলা চৌধুরী। বললেন, ‘কী সুন্দর করে, গুছিয়ে কথা বলত আমার ছোট ইমন।’
ভিডিওতে সালমান শাহকে বলতে শোনা যায়, ‘আজকে আমাদের খেলাটা শুধুই আনন্দের জন্য। যে কারণে আমরা সব শিল্পীরা, ডাইরেক্টররা একসঙ্গে হয়েছি। ডাইরেক্টরদের তো দর্শকেরা স্ক্রিনে দেখতে পান না। এখন মাঠে দেখতে পাচ্ছে। খেলা নিয়ে আমাদের প্রচণ্ড মনোবল, আমরা খেলা নিয়ে জিততে পারব।’ কথা বলার সময় তিনি ভক্তদের কাছে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেন নতুন হিরো হিসেবে। তখন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা মুক্তি পেয়েছে।
এ সময় শিল্পী হিসেবে সালমান শাহ সবার মধ্যে ঐক্যের কথা বলেন। একে অন্যের পাশে থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রথম হিরো হিসেবে এসেই আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান, এই কারণেই যে ১৪০০ সাল, বাংলা নতুন শতাব্দীর উৎসবটা পেয়েছি। এবং আজকের এই ক্রিকেট ম্যাচটা পেয়েছি। আমি আমার যে ভক্ত দেখছি, সেটা দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আর আমি আশা করব যেন শিল্পীদের মধ্যে এমন সহযোগিতা, আন্তরিকতা এবং শিল্পীদের মধ্যে যেন সব সময় এমন ইউনিটি থাকে, এটা আমি সব সময় আশা করব। একজন শিল্পীর বিপদে যেন আমরা দৌড়ে পাশে আসি। এই ধরনের মানসিকতা যেন আমার মধ্যে সব সময় থাকে।’
সেই খেলায় স্টেডিয়ামজুড়ে সালমান শাহকে নিয়ে দর্শকদের তুমুল আগ্রহ দেখা যায়। খেলার ফাঁকে শত শত ভক্ত তাঁকে দেখে হাত বাড়িয়ে দেন। উদ্দেশ্য—একটিবার প্রিয় তারকার হাতের সঙ্গে হাত মেলানো। কেউ আবার খাতা নিয়ে হাত বাড়িয়ে দেন। ধৈর্য নিয়ে সালমান সেই খাতায় অটোগ্রাফ দেন। ভক্তরা ঘিরে ধরেন ছবি তোলার জন্য। সেদিনের সেই ঘটনা নিয়ে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী কথা বলতে গিয়ে আপ্লুত হলেন। ছেলেকে নিয়ে গর্বের কথা বললেন।
নীলা চৌধুরী বলেন, ‘ইমন গুছিয়ে খুব সুন্দর করে কথা বলত। তোমরা এই ভিডিও দেখলেই বুঝতে পারবে। কত ছোট ছেলে কী সুন্দর করে কথাগুলো বলছে। ও সব সময় সবার সঙ্গে গুছিয়ে সুন্দর করে কথা বলত। এটা ছিল শৈশব থেকে শেখা। এ জন্য ওকে স্কুল–কলেজের সবাই খুব স্নেহ করত। ওকে আমরা সেভাবেই বড় করেছি। তা ছাড়া একে অন্যের পাশে দাঁড়ানো, মনমানসিকতায় বড় হয়ে থাকার শিক্ষা পরিবার থেকেই দিয়েছি। অহংকার ওর মধ্যে ছিল না। ওই শিক্ষা দিই না। তোমরা দেখো, একজন খাতা বের করে দিচ্ছে তাকে সে অটোগ্রাফ দিচ্ছে। একজন এসে বলছেন ছবি তুলবে, তুলছে। ভক্তদের ভালোবাসা নিয়ে ওর আগ্রহ সব সময় দেখেছি। সে সব সময় কী হতো বলত। ছেলেটা ছিল সহজ–সরল, সাদা মনের মানুষ। এককথায় ওর মধ্যে সিমপ্লিসিটি ছিল। যে কারণে ও সব সময় গোছানো ছিল।’
শৈশব থেকেই খেলাধুলা অনেক পছন্দ করতেন সালমান শাহ। খেলা নিয়ে পরিবার থেকে সব সময় উৎসাহ দিতেন সালমানের মা-বাবা। খেলার নানান সামগ্রী সালমানের সংগ্রহে ছিল। এ জন্য আলাদা রুমও ছিল। নীলা চৌধুরী বলেন, ‘খেলাধুলা করা ওর অনেক পছন্দের ছিল। পড়াশোনায় ফাঁকি দিয়েও খেলা চেষ্টা করত। সুযোগ পেলেই স্টেডিয়ামে চলে যেত। ওই যে সেলিব্রেটি ক্রিকেট। ওটাও একটি স্টেডিয়ামে হয়েছে। সেই খেলার জন্য সিনেমার মতোই এই জন্য কী কী লাগবে জোগাড় করেছিল।’
সালমান শাহ সুযোগ পেলে বাসা, স্কুল, কলেজে খেলায় মেতে উঠতেন। বাসায় নিয়মিত খেলার চর্চা করতেন। সাইকেল নিয়ে বাইরে বের হলেও অনেক সময় ব্যাগে থাকত ব্যাট-বল। শুধু ক্রিকেটই নয়, তাঁর পছন্দের খেলার মধ্যে ফুটবল ছিল অন্যতম। অভিনয় শুরুর পরও সালমান শাহকে বিভিন্ন শুটিং ইউনিট বা শুটিংয়ের পিকনিকগুলো মেতে উঠতেন খেলায়। নীলা চৌধুরী বলেন, ‘ক্রিকেট ও ফুটবল—দুটোই ইমনের পছন্দের খেলা ছিল। অনেক বল, ব্যাট ওর ছিল। আমরা কখনো কখনো বাইরে ঘুরতে গেলেই ওর খেলার সবকিছু কিনে আনতাম। একবার ভারতে ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ক্রিকেটের পুরো সেট ইমনের জন্য নিয়ে এসেছিলাম। খেলার কিছু পেলে তার আর কিছু চাওয়ার থাকত না। সব সময়ই তাঁর মধ্যে ছেলেমানুষি স্বভাবটা ছিল।’