পবিত্র ঈদুল আজহায় মুক্তির তালিকায় থাকা সিনেমার মধ্যে আলোচনায় রয়েছে মেগাস্টার শাকিব খান অভিনীত সিনেমা ‘তুফান’। বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতের দর্শকেরাও ছবিটি দেখতে মুখিয়ে আছেন।
চলচ্চিত্র বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটিই এই ঈদের সবচেয়ে বড় আয়োজনের ছবি। এই সিনেমায় নিজেকে ভেঙেচুরে দর্শকদের সামনে ভিন্ন রূপে হাজির হচ্ছেন শাকিব খান। রায়হান রাফীর নির্মাণের মুনশিয়ানা নিয়েও দর্শকদের মধ্যে আলাদা আগ্রহ রয়েছে।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা–আই স্টুডিওজের প্রযোজনায় নির্মিত ছবিটির ডিজিটাল পার্টনার চরকি ও আন্তর্জাতিক ডিস্ট্রিবিউটর এসভিএফ।
গতকাল ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছবিটি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রযোজক, নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা।
ছবিটি মুক্তির আগেই দর্শকদের উন্মাদনায় মুগ্ধ শাকিব খান বলেন, ‘দর্শক এভাবেই আমাদের পাশে থাকলে তুফান ইতিহাস গড়বে।’
ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। ছবিতে আরও আছেন অভিনয়শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী, অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা, ওপার বাংলার অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী।
পশ্চিমবঙ্গের তারকা অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী বলেন, ‘মেগাস্টার শাকিব খানের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করতে পারা আমার জন্য এক বিরাট ব্যাপার ছিল।’
নাবিলার ভাষ্য, ‘এত বছর পর বড় পর্দায় ফিরছি তুফান দিয়ে। সবার এত সাড়া আর আগ্রহ দেখে মনে হচ্ছে, প্রথম সিনেমার পর এত বছরের অপেক্ষাটা বৃথা যায়নি।’
দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘শাকিব খানের সঙ্গে পর্দা ভাগ করার ইচ্ছা ছিল বহুদিনের। নির্মাতা ও প্রযোজককে ধন্যবাদ তুফান-এর এই যাত্রায় আমাকে যুক্ত করার জন্য।’
পরিচালক রায়হান রাফী বলেন, ‘তুফান এমন একটা ছবি, যেটা বাংলা সিনেমাকে বিশ্বদরবারে নতুনভাবে চেনাবে। অনেক সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে পরিবর্তন করে। তুফান তেমন একটি সিনেমা হতে যাচ্ছে। বাংলা সিনেমার স্কেলটাকে অনেক হাই করবে।’
পবিত্র ঈদুল আজহায় দেশজুড়ে মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। শাকিব খানের লুক, প্রীতম হাসানের গান, চঞ্চল চৌধুরীর উপস্থিতি—সব মিলিয়ে দর্শকদের আগ্রহের পারদ সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। দেশের প্রধান প্রধান মাল্টিপ্লেক্স ও বিভিন্ন প্রান্তের প্রেক্ষাগৃহগুলো এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে তুফান প্রদর্শনের।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা–আই স্টুডিওজ বলছে, চলতি বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা হবে ‘তুফান’। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একই প্রত্যাশা করছে ছবিটির ডিজিটাল পার্টনার চরকি ও ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউটর এসভিএফ।
দর্শকদের বিপুল প্রতিক্রিয়ায় এসভিএফের পরিচালক ও সহপ্রতিষ্ঠাতা মহেন্দ্র সোনি, আলফা–আই স্টুডিওজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার শাকিল এবং চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি বেশ আনন্দিত ও আশাবাদী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শাকিব খান, মিমি চক্রবর্তী, নাবিলা, চঞ্চল চৌধুরী ও পরিচালক রায়হান রাফী, সিনেমার প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল ও ডিজিটাল পার্টনার চরকির প্রধান নির্বাহী পরিচালক রেদওয়ান রনি।
৫ জুন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড থেকে ছবিটি মুক্তির অনুমতি পেয়েছে। ছবিটি নিয়ে সেন্সর বোর্ডের সদস্য বরেণ্য নির্মাতা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক কাজী হায়াৎ বললেন, ‘এটা হলমালিকদের কাছে খুবই আকাঙ্ক্ষিত একটা ছবি, প্রত্যাশিত একটা ছবি। ঈদের মধ্যে অনেক হলমালিক এই ছবি দিয়ে পয়সা পাবেন। আমার কাছে অনেক হলমালিকও ফোন করেছেন ছবিটি সম্পর্কে জানতে। একজন দর্শক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে বলব, ছবিটি আমার কাছে ভালো লেগেছে। ছবিতে প্রাণ আছে।’
সিনেমার টিজার প্রকাশের পর থেকেই আলোচনার ঝড় তুলেছে। হাঁটাচলা, গাড়ির বনেটে বসে থাকা, মেশিনগান চালানো—পর্দায় যেন অন্য শাকিবের দেখা মিলবে, এমন ইঙ্গিত মিলেছে। উপমহাদেশের মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমায় তারকাদের যেভাবে পর্দায় ‘সুপারস্টার’ হিসেবে হাজির করা হয়, ‘লার্জার দেন লাইফ’ভাবে দেখানো হয়, সেটা টিজারে নির্মাতা ভালোভাবেই করেছেন; যা দেখে অনেক ইউটিউবার, দর্শক মন্তব্য করেছেন, এ যেন এক অন্য শাকিব। এভাবে টিজারে আগে দেখা যায়নি তাঁকে।
ছবির প্রথম গান ‘লাগে উড়াধুরা’ গানটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই গানটি ভাইরাল। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের দর্শক-সমালোচকেরাও মেতে ওঠেন গানটি নিয়ে। ইউটিউব শর্টস, ফেসবুক রিলস, টিকটকসহ নানা মাধ্যমে হয়ে ওঠে বহুল চর্চিত বিষয়।
দেশ-বিদেশের কয়েক শ ইউটিউবার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর মেতে ওঠেন তুফান সিনেমার গানটি নিয়ে। সেখানে তাক লাগানোর মতো ছিল গানটি নিয়ে ইউটিউবারদের উচ্ছ্বাস। যাঁরা মূলত হিন্দি বা দক্ষিণি সিনেমা ও সিরিজের রিভিউ করেন, এমন অনেক ইউটিউবারের প্রশংসা পায় গানটি। তাঁদের বেশির ভাগই আগে শাকিব খানকে নিয়ে কোনো ভিডিও করেননি। তাঁদের কাছে আগে বাংলা সিনেমা মানেই ছিল কলকাতার জিৎ, দেব, অঙ্কুশদের নাম। তাঁরাই এবার চমকে উঠেছেন গানটিতে শাকিব খানকে দেখে।
‘লাগে উড়াধুরা’ গানটির কোরাস অংশের সুর রাজ্জাক দেওয়ানের ‘ঘুম ভাঙ্গাইয়া গেল রে মরার কোকিলে’ অংশ থেকে নেওয়া। ওই অংশটুকুর লেখা শরীফুদ্দিনের। আর গানের বাকি অংশ লিখেছেন রাসেল মাহমুদ, সুর ও সংগীত প্রীতম হাসানের। এতে দ্বৈতভাবে কণ্ঠ দিয়েছেন প্রীতম হাসান ও দেবশ্রী অন্তরা।
সিনেমার শীর্ষ সংগীত তুফান নিয়েও আলোচনার কমতি নেই। ২ মিনিট ১৩ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের গানটি সুর, সংগীতায়োজন ও প্রোগ্রামিং করেছেন নাভেদ পারভেজ। কথা লিখেছেন তাহসান শুভ। গানটি গেয়েছেন আরিফ রহমান জয়। এ ছাড়া গানের র্যাপ অংশে শোনা গেছে রাপাস্তা দাদুর কণ্ঠ।