পরীমনি
পরীমনি

আমি এক নতুন পরীমনি...

আজ ২৪ অক্টোবর আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনির জন্মদিন। এবার দিনটি ঘিরে কোনো ঝলমলে আয়োজন নেই। দীর্ঘ বিরতির পর শুটিংয়ে ফিরেছেন তিনি। পাশাপাশি নতুন নতুন কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার খবর দিচ্ছেন। বিচ্ছেদের পর নতুন করে জীবন সাজাচ্ছেন এই নায়িকা।

পরীমনি প্রতিবারই ধুমধাম করে নিজের জন্মদিন উদ্‌যাপন করেন। পাঁচ তারকা হোটেল ভাড়া করে, বড় আয়োজনে ঢালিউডের কোনো নায়িকাকেই এভাবে জন্মদিন পালন করতে দেখা যায় না। প্রতিবারই নিত্যনতুন পোশাকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আমন্ত্রিত অতিথিদের চমকে দেন। জন্মদিনের বেশ আগে থেকেই ভক্ত-অনুরাগীদের আগ্রহ থাকে তাঁকে ঘিরে। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। আজ জন্মদিন ঘিরে এই নায়িকার কোনো উচ্ছ্বাস নেই।

কারণ জানতে চাইলে সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে পরীমনি বলেন, ‘জন্মদিনটি আমার জন্য বরাবরই একটি বিশেষ দিন, আনন্দের দিন। প্রতিবারই আমি নানার হাত ধরে জন্মদিনের কেক কেটে আসছি। নানাই আমার বাবা, নানাই আমার মা, আমার সবকিছু। কিন্তু এবার নানা হাসপাতালে। তাঁর একটা ছোট্ট অস্ত্রোপচার হয়েছে। ১১ দিন ধরে হাসপাতালে। এক দিন পর আমার জন্মদিন। আর এই সময়ের মধ্যে নানা সুস্থ হয়ে জন্মদিনের উৎসবে যোগ দিতে পারবেন না। সুতরাং এই জন্মদিন জাঁকজমকভাবে করতে চাই না। বাসা ও শুটিং লোকেশনে হয়তো ঘরোয়াভাবে কেক কাটব। নানা সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরার কিছুদিন পর সবার সঙ্গে ওই আনন্দটা ভাগাভাগি করতে চাই।’

শুটিংয়ে ফেরা এবং রাজ্য
সন্তান রাজ্যের বয়স এখন ১ বছর ১ মাস চলছে। এর মধ্যে শুটিংয়ে ফিরেছেন পরী। শুটিংয়ে ফেরার আগে আগে বেশ মানসিক চাপে ছিলেন তিনি। পরীমনি বলেন, ‘শুটিংয়ে ফেরার আগে বেশ ভয়ে ছিলাম রাজ্যকে নিয়ে। কারণ, শুটিং চলাকালীন আমাকে কাছে না পেয়ে কান্নাকাটি করতে পারে। কিন্তু দেখলাম, রাজ্য কোনো ঝামেলা করে না। বরং বাসার চেয়ে শুটিংয়ে গিয়ে আরও বেশি খেলার সাথি পেয়েছে। সবার সঙ্গে খেলে। রাজ্য ফুটবল নিয়ে খেলতে বেশি পছন্দ করে। পরিচালক প্রতিদিন একটি করে বল কিনে দেন। হা হা হা...।  বল পেয়ে সে আরও আনন্দ নিয়ে খেলা করে।’

পরীমনি

রাজ্যকে নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘খেয়াল করে দেখলাম, আমি যা বলি, তাই যেন শোনে রাজ্য। ওর দিকে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি—ছেলেটা ভেতরে-ভেতরে বড় হয়ে গেছে। মনে হয়, মাকে বুঝতে পারে সে। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ওর পায়ে লোশন মাখিয়ে দিই। সে এ বিষয়টি হয়তো খেয়াল করেছে। কয়েক দিন আগে হঠাৎ করেই সে আমার পায়ে হাত বুলিয়েন দিচ্ছিল। প্রায় ২০ মিনিট ধরে সে এই কাজটি করেছে। হা হা হা..। আজ শুটিংয়ে প্রথম রাজ্যকে বৃষ্টি দেখালাম। ও আজ প্রথম বৃষ্টি ছুঁয়েছে; বৃষ্টিতে হাত দিয়ে খেলছিল।’

পরীমনি কাছে রাজ্য তাঁর এক পৃথিবী। রাজ্যকে নিয়ে তাঁর আবেগের শেষ নেই। তিনি বলেন, ‘এখন আমার আর কোনো চিন্তা নাই, প্যারা নেই। কারণ, আমার পাশে আমার সন্তান আছে, আমার  পৃথিবী আছে। ও যখন আমাকে স্পর্শ করে, ও যখন আমাকে চোখে–মুখে হাত দিয়ে আদর করে দেয়, এই অনুভূতির কোনো ভাষা হয়তো পৃথিবীতে তৈরি হয়নি, যেটি প্রকাশ করতে পারি।’

নতুন জীবন, নতুন সিদ্ধান্ত
রাজ্য পৃথিবীতে আসার পর বেশ কিছুদিন বিরতিতে ছিলেন পরীমনি। অনুদানের ছবি ‘ডোডোর গল্প’ দিয়ে ৮ অক্টোবর থেকে শুটিংয়ে ফিরেছেন। পাশাপাশি একের পর এক নতুন কাজ হাতে নিচ্ছেন।

রাজ্যকে কোলে নিয়ে পরীমনি। খালেদ সরকার

এরই মধ্যে ‘রঙিলা কিতাব’, ‘খেলা হবে’ নামে আরও দুটি ছবিতে সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আরও দুটি নতুন কাজের কথাবার্তা প্রায় চূড়ান্ত। তবে বিরতির পর গল্প, চরিত্র দেখে ছবি হাতে নিচ্ছেন তিনি। পরীমনি বলেন, ‘বলতে সমস্যা নেই, আগে যে কাজই এসেছে, করেছি। চরিত্র, গল্প নিয়ে ভাবিনি। হয়তো দশটি কাজের মধ্যে নিজের চরিত্রে একটি ফোকাস করে কাজ করেছি। অনেক সময় অনুরোধে ঢেঁকি গিলেছি। এখন আর সেটি কোনোভাবেই হবে না। গল্প, চরিত্র জেনেবুঝেই করছি এখন। যাতে একটি থেকে আরেকটি কাজের ভিন্নতা থাকে।’

‘নতুন শুরু’র জন্য প্রস্তুতিরও কমতি রাখছেন না পরীমনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন আমার ওজন ৫৮ কেজি। এটি “ডোডোর গল্প”-এর চরিত্রের জন্য ঠিক আছে। সামনে আরও ৬ কেজি কমাব। নিজেকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করছি। কারণ, এখন আমার কোনো পিছুটান নেই। সন্তান, নানা ভাই ও আমার কাজ—এ তিনটিই আমার জীবন।’

পরীমনি জানালেন, এখন জীবনটা অনেক আনন্দের, আরামদায়ক মনে হয়। বলেন, ‘এখন জীবনে কোনো অশান্তি নেই। সঙ্গে নানা আছে, রাজ্য আছে। আর কী চাই। আগে তো ঘুমানো, ঘুম থেকে ওঠা, কোনো কিছুই ঠিক ছিল না। রাতের বেলায় সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক সময় চলে যেতে। ঘুমের চৌদ্দটা বাজত। এখন রাতে জাস্ট পাঁচ মিনিটের জন্য ফেসবুকে থাকি। শুইলেই ঘুম চলে আসে। শান্তির ঘুম। শুটিং কল সাতটায় থাকলে ভোর পাঁচটায় উঠে যাই। বাচ্চার জন্য সবকিছু প্রস্তুত করে, ঠিক সময়ে বেরিয়ে পড়ি শুটিংয়ে। মাঝেমধ্যে আমি নিজেই ভাবি, আমি এক নতুন পরীমনি।’