কদিন আগেও শোনা গিয়েছিল, ঈদে মুক্তি পেতে পারে নয়টি চলচ্চিত্র। তবে এর মধ্যে প্রচারণা চালিয়েও ঈদের ছবি মুক্তির দৌড় থেকে একটি সরে দাঁড়িয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি, চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, পরিবেশক প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’, ‘শত্রু’, ‘লোকাল’, ‘জ্বীন’, ‘কিল হিম’, ‘পাপ’, ‘আদম’ ও ‘প্রেম প্রীতির বন্ধন’—এই আট ছবি মুক্তি পাবে। গত কয়েক বছরের হিসাবে ছবি মুক্তির এই সংখ্যা চমকে যাওয়ার মতো। কেউ বলছেন, একসঙ্গে এত চলচ্চিত্র মুক্তি একই সঙ্গে ইতিবাচক ও নেতিবাচক। সারা দেশে এখন যে পরিমাণ প্রেক্ষাগৃহ, তাতে তিন-চারটি ছবি মুক্তি পেলেই ঠিকঠাক ছিল।
এতগুলো ছবি মুক্তির কারণে বর্তমানে চালু ৬০টির মতো প্রেক্ষাগৃহের বাইরে ঈদে আরও শতাধিক বন্ধ প্রেক্ষাগৃহ চালু হবে।
এর বাইরে স্টার সিনেপ্লেক্স (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী), যমুনা ব্লকবাস্টার, লায়ন সিনেমাস, চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনের বিভিন্ন স্ক্রিনে প্রদর্শিত হবে ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পাওয়া এসব চলচ্চিত্র। সবার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রেক্ষাগৃহ বুকিংয়ে এগিয়ে আছে শাকিব খান অভিনীত ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’। সিঙ্গেল স্ক্রিন ও মাল্টিপ্লেক্স মিলিয়ে ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ ৯৮ টির মতো প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হবে। এরপরই আছে ‘শত্রু’ ৩৩টি, ‘কিল হিম’ ২৭টি, ‘জ্বীন’ ১৫টি, ‘পাপ’ ১৫টি, ‘লোকাল’ ১০টি, ‘প্রেম প্রীতির বন্ধন’ ১২টি, ‘আদম’ ৫টি। শেষ মুহূর্তে এ হিসাব বদলেও যেতে পারে।
এবারের ঈদে মুক্তি পাওয়া দুটি চলচ্চিত্রের পরিবেশনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। কয়েক দিন আগে হঠাৎ চাউর হয়, তাদের ‘জ্বীন’ ছবিটি মুক্তি পেলেও শেষ মুহূর্তে সরে যেতে পারে ‘পাপ’। তবে জাজ মাল্টিমিডিয়ার স্বত্বাধিকারী আবদুল আজিজ গতকাল জানান, তাঁরা দুটি চলচ্চিত্র নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে থাকছেন। এবারের ঈদে তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য সিনেপ্লেক্স, সেভাবেই তাঁরা এগিয়েছেন। দেশের কোনো সিঙ্গেল স্ক্রিনে সেভাবে তাঁরা থাকছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা, রাজশাহী ও বগুড়ার সিনেপ্লেক্সে চলবে ‘জ্বীন’ ও ‘পাপ’। এবারের ঈদে একসঙ্গে এত ছবি মুক্তির বিষয়ে আবদুল আজিজ বলেন, যার ছবি ভালো, সেটাই চলবে। আর যেটা খারাপ, সেটা চলবে না। তবে একসঙ্গে এত ছবি মুক্তির বিষয়টা ইতিবাচক যেমন, তেমনি নেতিবাচকও। ইতিবাচক হচ্ছে, এতগুলো ছবি মুক্তির মধ্য দিয়ে বাজার চাঙা হতে পারে। অন্যদিকে খারাপও হতে পারে। তবে যে ছবি শুরুতে লেগে যাবে, সেটা ভালো ব্যবসা করবে। আর যেটা চলবে না, সেটা পরবর্তী সময়েও টিকতে পারবে না। সে ধরনের ছবির ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
খুলছে মধুমিতা
শুধু ঢাকার নয়, দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রেক্ষাগৃহের একটি মধুমিতা। ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে অবস্থিত এই প্রেক্ষাগৃহ ছবি–খরায় ছয় মাসের মতো বন্ধ ছিল। মাঝে একবার শুধু সাত দিনের জন্য চালু করা হয়।
তখন ‘ওরা সাত জন’ ছবিটি প্রদর্শিত হয়। এই প্রেক্ষাগৃহের স্বত্বাধিকারী ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ মাঝে জানিয়েছিলেন, ভালো ছবি না পেলে তাঁরা আর প্রেক্ষাগৃহ চালু করবেন না। গতকাল নওশাদ জানান, ঈদে তাঁরা প্রেক্ষাগৃহ চালু করবেন। চলবে শাকিব খান অভিনীত ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’।
জানান, ‘শাকিব খানের ছবির আলাদা একটা তৈরি দর্শক আছে। অনেক দিন তার কোনো ছবি মুক্তি পায়নি। দর্শকেরও একটা আগ্রহ রয়েছে। টিজার ও গান মুক্তির পর বেশ সাড়া ফেলে ছবিটি। “কথা আছে” গানটি তো ভাইরাল। আমারও বেশ ভালো লেগেছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ছবিটি চালানোর।’
সিনেপ্লেক্সে অন্য রকম ইতিহাস
প্রতিষ্ঠার দুই দশক পার করছে স্টার সিনেপ্লেক্স। ঢাকা দিয়ে শুরু হয়ে তারা এখন চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে শাখা চালু করেছে। বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র স্টার সিনেপ্লেক্সের সব শাখায় প্রদর্শিত হয়েছে। এবার ব্যতিক্রম ঘটছে।
স্টার সিনেপ্লেক্সে ছয়টি বাংলা চলচ্চিত্র মুক্তি পাচ্ছে। এসব ছবির মধ্যে আছে ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’, ‘লোকাল’, ‘জ্বীন’, ‘কিল হিম’, ‘পাপ’ ও ‘আদম’। সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ছয়টি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নিয়ে এবারের ঈদ করছি আমরা। স্টার সিনেপ্লেক্সের সব শাখায় চলবে। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে, গত কয়েক বছরেও কোনো উৎসবে এতগুলো বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছে কি না, জানা নেই। আমরা তো এত শাখা চালু করেছি, চলচ্চিত্রও হচ্ছে, কিছু কিছু চলচ্চিত্র তো আমাদের টার্গেট করেই তৈরি করে। তাদের তো প্রমোট করতেই হবে। সবার সঙ্গে থাকতে হবে।’
ঈদ উপলক্ষে সারা দেশে বন্ধ থাকা শতাধিক প্রেক্ষাগৃহ চালু হচ্ছে। গতকাল এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন। এমনিতে ৫০-৬০টি চলমান ছিল। তিনি জানান, ঈদ এলেই ডিস্ট্রিবিউটররা বলেন, এই হল, ওই হল চালু করেন। মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি যখন চলচ্চিত্র পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, তখন ১ হাজার ৪০০ সিনেমা হল ছিল বাংলাদেশে। সর্বোচ্চ সিনেমা মুক্তি পায় ১৩টি। সুপার ফ্লপ ছবিটা ৬০-৭০টি হলে রিলিজ হয়। ওই সময় তো এখন আর নেই। এবার যেটা হচ্ছে, অসম প্রতিযোগিতা। ধীরেসুস্থে ছবি এলে ভালো হতো। পরিস্থিতি খুব সুখকর নয়।’
মুক্তির দিক দিয়ে কোন ছবি এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা আছে জানতে চাইলে মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘শাকিব খানের ছবিটি দর্শকের চাহিদায় থাকবে বেশি। হলে গিয়ে যদি পাবলিক খুশি হয়, তখন বিক্রিও বাড়বে। নায়কদের মধ্যে বাপ্পী এখনো পুরোপুরি অবস্থানে এসে পৌঁছায়নি। আদর আজাদ তো আরও নয়। ওদের নামে ছবি টানার মতো অবস্থা নেই। তবে গেলে ভালো হতো। আর অনন্ত তো নিজের ছবি নিজেই বানিয়েছে এত দিন। এবার তো টাকাপয়সা খরচ করে ছবি বানিয়েছে। কিন্তু ধীরেসুস্থে করলে ভালো হতো।’