সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেরা হয়েছিলেন। মঞ্চে অভিনয় করতেন। টিভিতে অভিনয় করতেন। উপস্থাপনা করতেন। করতেন মডেলিং। নেমেছিলেন সিনেমায়ও। চিত্রনায়িকা পরিচয়েই বেশি পরিচিত মাসুকা আলম রাকা। ২০০১ সালে ভালোবেসে বিয়ে করেন সহশিল্পী ওস্তাদ জাহাঙ্গীরকে। বিয়ের পর কিছুদিন মিডিয়ায় সময় দেন। ২০০৫ সাল থেকে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। তাঁর অভিনীত শেষ ছবি কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘পিতা পুত্রের গল্প’। ২০১১ সালের পর আর রুপালি পর্দায় দেখা দেননি তিনি।
রাকা স্বামী-সন্তানের সঙ্গে থাকেন ঢাকার কলাবাগানে। তানজোয়ার আলম ও রেজোয়ান আলম নামে দুই ছেলে রয়েছে তাঁর। ২০২০ সালে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাকা বলেছিলেন, ‘সন্তান হওয়ার পর পরিবারে সময় দেওয়া দরকার হয়ে পড়েছিল। কোনো অভিমানে মিডিয়া থেকে দূরে যাইনি। আমার তেমন আক্ষেপও নেই নিয়মিত কাজ করতে পারিনি বলে।’
রাকার বাবা আবদুল মান্নান ছিলেন নবকুমার ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ। তিনি ছিলেন শিক্ষকনেতা। তাঁর মা কামরুন্নাহার মান্নান লেখালেখি করতেন। তিনিই মেয়েকে অভিনয়, নাচ, আবৃত্তি শিখিয়েছেন। তখন রাকা কলেজের ছাত্রী। পত্রিকায় মঞ্চকর্মী আহ্বানের বিজ্ঞাপন দেখে মেয়েকে নিয়ে অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদের কাছে যান মা। রাকার বাবার পরিচয় পেয়ে মমতাজউদদীন জানান, আবদুল মান্নান তাঁর বন্ধু। তখনই রাকাকে একটি চরিত্র দিয়ে দেন। পরদিন তাঁর শো। নাটকের নাম ছিল ‘সাতঘাটের কানাকড়ি’।
ছয়-সাত বছর ‘থিয়েটার’ করেছেন রাকা। ‘রূপবান’, ‘রাক্ষুসী’, ‘চন্দ্রাবতী’ প্রভৃতি নাটকে অভিনয় করেছেন। তখন তিনি আবৃত্তি করতেন। কামরুল হাসান মঞ্জুর সঙ্গে তাঁর দ্বৈত অ্যালবাম ‘দুজনে মিলে কবিতা’ বেরিয়েছিল ১৯৯৩ সালের বইমেলায়। প্রযোজক আহসান হাবীবের আমন্ত্রণে রাকা বিশেষ অডিশন দিয়ে ঢোকেন বিটিভিতে। তাঁরই সঙ্গে অডিশন দেন আফসানা মিমি, ত্রপা মজুমদাররা। বিটিভির নাটকে অভিনয় করেছেন রাকা।
তাঁর অভিনীত ধারাবাহিকের সংখ্যা চারটি। এগুলো হচ্ছে ‘তথাপি’, ‘আপন নিবাস’, ‘মাটির মায়া’ ও ‘অতন্দ্র প্রহর’। এগুলোর মধ্য ‘মাটির মায়া’ নাটকে ‘মঙ্গলী’ চরিত্রের জন্য বেশি সাড়া পেয়েছিলেন রাকা। তাঁর অভিনীত সাপ্তাহিক একক নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘সোনার বলয়’, ‘সেই আমরা’, ‘মন সাজিয়ে’, ‘বিচ্ছিন্ন ভালোবাসা’, ‘চাঁদনীগড়ে কয়েক দিন’, ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ প্রভৃতি। প্যাকেজ আমলে নাটক পরিচালনাও করেছেন রাকা।
‘সুন্দরী মিস বাংলাদেশ’ বললে একনামে রাকাকে চিনতে পারেন দর্শক। ১৯৯৫ সালে রানার্সআপ হয়ে পরিচিতি পান রাকা। নাটক করতে করতেই সিনেমার প্রস্তাব পান তিনি। তাঁর প্রথম সিনেমা ‘সুন্দরী মিস বাংলাদেশ’ মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে। এরপর রাকা অভিনয় করেন প্রায় দেড় ডজন ছবিতে। এসব ছবির মধ্যে রয়েছে ‘কুংফু নায়ক’, ‘পেশাদার খুনী’, ‘বিদ্রোহী মাস্তান’, ‘লাল চোখ’, ‘জ্বলন্ত বিস্ফোরণ’, ‘মরণনিশান’, ‘লোহার শিকল’, ‘ক্যাপ্টেন মারুফ’ প্রভৃতি। ২০০১ সাল পর্যন্ত নায়িকা হয়ে অভিনয় করেছেন। শেষের দিকে কিছু ছবিতে চরিত্রাভিনেত্রী হয়ে অভিনয় করেছেন।
সিনেমায় রাকা অ্যাকশন দৃশ্যে বিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। তিনি মার্শাল আর্টে ব্ল্যাকবেল্টধারী। বিটিভিতে ‘আত্মরক্ষায় মার্শাল আর্ট’ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে তিনি আলোচিত হয়েছিলেন। ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে সহকারী উপস্থাপক হওয়া ছাড়া শহরের নানা অনুষ্ঠানে উপস্থাপক হয়ে মাইক্রোফোন হাতে নিতেন রাকা। আবৃত্তির সঙ্গে তো জড়িত ছিলেনই। মূকাভিনয়ও করতেন। করেছেন বিজ্ঞাপনচিত্রও। ঋতুপর্ণ ঘোষের নির্দেশনায় বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন।