সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগের (সিসিএল) দ্বিতীয় দিনের খেলায় পরিচালক দীপংকর দীপন ও মোস্তফা কামাল রাজের দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। হাতাহাতি, মারামারি এবং হুমকির মতো ঘটনা ঘটে বলেও জানান কয়েকজন অভিযোগকারী। এ নিয়ে দুই দলের অধিনায়কেরা এখন পর্যন্ত কোথাও মুখ খোলেলনি। অবশেষে আজ শনিবার বিকেলে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় দুই দলের দলনেতার। তাঁরাও বিস্মিত এই ঘটনায়। তবে আশা প্রকাশ করেছেন, সেলিব্রিটিরা একটা পরিবার, সেই পরিবারের সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে করছেন। চলুন শোনা যাক গতকাল রাতের ঘটনায় দীপন ও রাজ কী বলছেন।
দীপংকর দীপন
আমার কাছে পুরো ঘটনাটা ভীষণ একটা বিস্ময়। আমরা যেই মিডিয়া জগতে বাস করি, সেখানে আমাদের সংগঠন আছে, সমিতি আছে, তারা ব্যর্থ হলে আমাদের সিনিয়ররা আছেন। আমরা একসময় যেকোনো সমস্যা ও সংকটে যেতাম আমাদের শ্রদ্ধেয় মামুনুর রশীদ, তারিক আনাম খান এবং মোস্তফা মনোয়ার স্যারের মতো ব্যক্তিত্বদের কাছে। সে রকম একটা জায়গা থেকে কীভাবে শিল্পীদের নিয়ে আয়োজিত খেলায় মাঠে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে আক্রমণ করা হলো, শিল্পীদের মারা হলো! আঘাত করা হলো।
এদের কোথায় রাগ, কোথায় ক্ষোভ। এই রাগ ও ক্ষোভের উৎসের যে বহিঃপ্রকাশ, তার উৎস কোথায়? আসলে তারা কয়জন? হুট করে আমরা একটু ভুল জাজমেন্ট করে ফেলছি কি না। অল্প কিছু মানুষের জন্য সবাই বদনাম ঘাড়ে নিচ্ছি কি না। এই বিষয়টা আমাদের কর্তৃপক্ষকে ভাবতে বলেছি। এমন ঘটনায় কর্তৃপক্ষেরও ক্ষতি। শিল্পীদের সম্মানহানি। বদনাম আরও কত–কী। এই পুরো বদনামের ঘটনার পেছনে নির্দিষ্ট করে বললে আসলে কয়টা মানুষ দায়ী। সেই বিষয়গুলো একটু খতিয়ে দেখা দরকার। আমি নিজেও বিস্মিত।
খেলার সময় আমরা আমাদের নির্ধারিত জয়াগায় ছিলাম। নিজেরা আলোচনা করছিলাম। হাততালি দিচ্ছিলাম। কারণ, গতকাল একটা দুর্দান্ত ম্যাচ হয়েছে। যদিও আমরা হেরেছি। তারপরও সুন্দর একটা ম্যাচে আমাদের পরাজয় নিয়ে কিছু বলার ছিল না। এটা আমাদের থার্ড ম্যাচ ছিল বলে একটা এক্সপেরিমেন্টও করেছিলাম। ওরা কিন্তু জিতলও। তারপর কোথা থেকে ব্যাট হাতে তেড়ে মারতে আসল। পুরো ব্যাপারটায় আমরা সবাই শকড। প্রথমে তো কিছুক্ষণ সময় লাগছে কী হচ্ছে বুঝতে। আমরা ভাবতে পারিনি, সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে এ রকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের কোনো প্লেয়ার যাতে সামান্য পাল্টা আঘাত না করে, এ জন্য আমাদের সিনিয়ররা আপ্রাণ চেষ্টা করেছে।
আমরা ম্যাচ রেফারি ও টুর্নামেন্ট আয়োজকদের অফিশিয়ালি অভিযোগ জানিয়েছি। আমাদের বেশ কিছু দাবিও পেশ করছি। পুরো ব্যাপারটার সুষ্ঠু তদন্তও দাবি করেছি। কারণ, অনেক ক্যামেরার সামনে এমনটা ঘটেছে। এখান থেকে দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা খুবই সহজ। আয়োজকেরাও সেখানে উপস্থিত ছিল। তারা আমাদের কাছে সময় চেয়েছে। তারা বলেছে, যদি সমাধান না হয়, মাঠে কোনো বল গড়াবে না। আজ সারা দিন বিভিন্ন দফায় মিটিং হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন টিমের সঙ্গে তারা বসেছে। যোগাযোগ করছে। এখন আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। সেই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যা বলার বলব।
মোস্তফা কামাল রাজ
অভিযোগ আমার দলের খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে নয়। বাইরের কিছু লোকের বিরুদ্ধে। আমি মনে করি, আমরা সবাই মিলে একটা পরিবার। সেই পরিবারে অনেক সময় ঝগড়া হয়। এখানেও তেমন একটা ঘটনা ঘটছে। এটা আমরা নিজেরা সমাধান করছি। প্রতিটা পরিবারে অনেক কিছুই হয়। সে রকমই খেলার মধ্যেও উত্তেজনায় অনেক কিছু হয়ে যায়। তবে এখানে বহিরাগত কেউ ছিল না। সমর্থকেরাই ছিল। পুরো বিষয়ে আমি বিস্তারিত কিছুই বলতে চাই না। একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, মদ খেয়ে মারামারি হয়েছে এমনটা যে ছড়িয়েছে, এটা পুরোপুরি মিথ্যা।
আর রাজ রিপা নামের যিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁর ব্যাপারে বলব, তাঁর সঙ্গে আমার তো কথাই হয়নি। আর শরীফুল রাজ গায়ে হাত তুলেছে এমন অভিযোগ যে তিনি করছেন, এটাও ঠিক না। তার গায়ে হাত দেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। কারণ, আমরা তো তখন মাঠেই নাই। এই ধরনের কথা তো হওয়ারই কথা না। খেলায় জেতার দুই–তিন মিনিটের মধ্যে আমরা তো মাঠ থেকে বের হয়ে চলে আসি। আমরা ভাবিই নাই যে এই ধরনের ভয়াবহ একটা ঘটনা ঘটেছে। যাক এসব বলে কথা বাড়াতে চাই না। সোজা কথা হচ্ছে, এটা পুরোপুরি পারিবারিক ঘটনা। দীপংকর দীপন আমার বড় ভাইয়ের মতো, আমি ভুল করলে তাকে আমি সরি বলব। এটাই স্বাভাবিক। এটা পারিবারিক ব্যাপার, সেভাবেই সমাধান করব।