চলতি বছরের ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় আলাউদ্দিন মাজিদ (বামে) ও চলচ্চিত্র পরিচালনায় গিয়াস উদ্দিন সেলিম (ডানে)
চলতি বছরের ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় আলাউদ্দিন মাজিদ (বামে) ও চলচ্চিত্র পরিচালনায় গিয়াস উদ্দিন সেলিম (ডানে)

ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পেলেন সেলিম ও মাজিদ

চলতি বছরের ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালনায় গিয়াস উদ্দিন সেলিম ও চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় আলাউদ্দিন মাজিদ। ২৬ অক্টোবর ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। ফজলুল হক ছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও প্রথম চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা ‘সিনেমা’র সম্পাদক। তিনি বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’ও নির্মাণ করেছিলেন।

ঢাকার তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আই স্টুডিওতে আয়োজন করা হয় এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, চলচ্চিত্র প্রযোজক হাবিবুর রহমান খান, ইমপ্রেস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুকিত মজুমদার, রন্ধনশিল্পী কেকা ফেরদৌসী প্রমুখ।

ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চলতি বছরের ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়।

পুরস্কারপ্রাপ্তির পর গিয়াস উদ্দিন সেলিম ও আলাউদ্দীন মাজিদ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ফজলুল হক স্মৃতি কমিটির প্রতি। গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘ফজলুল হক স্মরণে এই সম্মাননা পাওয়া আমার জন্য খুবই সম্মানের। দেশে গুণীজনের সম্মান কম, তাই তো গুণী ব্যক্তি কম জন্মান। সেই সঙ্গে যথাসময়ে কাজের যথাযথ মূল্যায়ন দেওয়া হয় না দেশে, যার উত্তম উদাহরণ ফজলুল হক সাহেব। তিনি বেঁচে থাকতে আমরা তাঁকে, তাঁর কর্মপরিকল্পনাকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারিনি। এখন আমাদের উচিত, তাঁর শিল্পকে, কর্মকে, নতুন চিন্তাকে সবার সামনে তুলে ধরা। সে ক্ষেত্রে পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে আমরা বর্তমান প্রজন্মকে তাঁর সম্পর্কে জানাতে পারি। যার মাধ্যমে তাঁর সব কর্ম প্রজন্মের কাছে জীবিত থাকবে। এটি আমাদেরই কাজ, আমাদেরই করতে হবে। নয়তো একটা সময় ফজলুল হকের স্মৃতি আমাদের থেকে হারিয়ে যাবে।’

চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক আলাউদ্দীন মাজিদ বলেন, ‘চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন ফজলুল হক সাহেব। সেই পেশার জন্যই ফজলুল হকের নামে এই পুরস্কার পাওয়া খুবই সম্মানের। তাই ফজলুল হক তাঁর সহধর্মিণী রাবেয়া খাতুন ও তাঁর পুরো পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

এদিন প্রয়াত ফজলুল হক ও তাঁর সহধর্মিণী রাবেয়া খাতুনের স্মৃতিচারণা করেন তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা রন্ধনশিল্পী কেকা ফেরদৌসী। তিনি মা–বাবার সঙ্গে কাটানো ছেলেবেলার নানা স্মৃতির কথা স্মরণ করেন। সেই সঙ্গে তাঁর বাবা ফজলুল হক জীবিত থাকা অবস্থায় যে সম্মাননা পাননি, তা নিয়েও আক্ষেপ প্রকাশ করেন।

এ ছাড়া ইমপ্রেস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও ফজলুল হক এবং রাবেয়া খাতুনের জামাতা মুকিত মজুমদার তাঁর শ্বশুরকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘খুব অল্প বয়স থেকেই ফজলুল হক সাহেবকে চিনতাম। তিনি আসলেই অন্য ধরনের মানুষ ছিলেন, তাঁর চিন্তাভাবনাও সময়ের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিল। তিনি যেমনটা বন্ধসুলভ আচরণ করতেন সব বয়সী মানুষের সঙ্গে, ঠিক তেমনি তাঁর নতুন নতুন চিন্তাভাবনাও আমাদের আকর্ষণ করত।’

পুরস্কারটি প্রবর্তন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন। পুরস্কার প্রদানের পাশাপাশি ফজলুল হককে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘সম্মুখপথের যাত্রী’ (দ্য ফ্রন্টিয়ারম্যান ফজলুল হক) প্রদর্শিত হয়। ষাটের দশকের শুরুতে ফজলুল হক ‘প্রেসিডেন্ট’ নামে একটি শিশুতোষ সিনেমা তৈরি করেছিলেন, যা পাকিস্তান আমলে পুরস্কৃতও হয়েছিল।
‘প্রেসিডেন্ট’ ছবিতে অভিনয় করে পুরস্কৃত হয়েছিলেন আজকের স্বনামধন্য মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর। পরে তিনি ‘উত্তরণ’ নামে আরও একটি সিনেমা পরিচালনা করেন। পত্রিকা সম্পাদনা বা চলচ্চিত্র পরিচালনা—কোনোটাতেই তিনি থেমে থাকেননি। পরে অন্যান্য ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। এ দেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা ও চলচ্চিত্র নির্মাণের একেবারে সূচনা পর্বে ফজলুল হকের অবদান স্মরণীয়। তাঁর অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য ‘ফজলুল হক স্মৃতি কমিটি’ প্রতিবছর একজন চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও সেরা চলচ্চিত্র পরিচালককে পুরস্কৃত করে আসছে।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন চলচ্চিত্রের এই গুণী মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানাতে তাদের একটি মূল মিলনায়তনের নামকরণ করেছে ‘ফজলুল হক স্মৃতি মিলনায়তন’। চলচ্চিত্র ও গণমাধ্যমে কাজ করতে আগ্রহীদের জন্য সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ফজলুল হক ইনস্টিটিউট অব মিডিয়া স্টাডিজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

উল্লেখ্য, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন ফজলুল হকের সহধর্মিণী। জ্যেষ্ঠ পুত্র ফরিদুর রেজা সাগর শিশুসাহিত্যিক ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।