যদি সোমাকে ভালো লাগে তবে সেটা হবে বাড়তি পাওয়া

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘মায়ার জঞ্জাল’ মুক্তি পাচ্ছে আজ। ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী পরিচালিত সিনেমাটি দিয়ে প্রায় দুই দশক পর বড় পর্দায় ফিরছেন অপি করিম। নতুন সিনেমাসহ নানা প্রসঙ্গে ‘বিনোদন’-এর সঙ্গে কথা বলেছেন অভিনেত্রী।

অপি করিম। ছবি: প্রথম আলো
অপি করিম। ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন

প্রথম সিনেমা ‘ব্যাচেলর’-এর পর দ্বিতীয়টি করতে ১৯ বছর লেগে গেল।

প্রথম কথা হচ্ছে, সে রকম কোনো চিত্রনাট্য পাইনি। যা–ও পেয়েছি, সময়ের কারণে করা হয়নি—পড়ালেখা, শিক্ষকতায় সময় দিয়েছি।

প্রশ্ন

এখন তো নানা ধরনের কনটেন্ট হচ্ছে, সেগুলো কি দেখেন?

অন্য কোথাও তো কাজ করছি না এখন, আমার আর্কিটেকচার ফার্মটা আছে; এ ছাড়া বাসায়ই থাকি। অবসর কাটে বই পড়ে আর ওটিটির কনটেন্ট দেখে। বেশির ভাগ সময় আমাদের কাজগুলোই দেখা হয়।

প্রশ্ন

কোন কাজগুলো ভালো লেগেছে?


গত কয়েক বছরের মধ্যে ‘মহানগর’, ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’, ‘কারাগার’-এর প্রথম কিস্তি ভালো লেগেছে। সাম্প্রতিক কাজের মধ্যে ‘গুটি’, ‘উনিশ২০’ ভালো লেগেছে।

মায়ার জঞ্জাল ছবির দৃশ্যে ঋত্বিক ও অপি
প্রশ্ন

আপনি বলছিলেন সিনেমায় এই দীর্ঘ বিরতির বড় কারণ চিত্রনাট্য পছন্দ না হওয়া। কোনো কাজে ‘হ্যাঁ’ বলার ক্ষেত্রে চিত্রনাট্য, চরিত্র নাকি পরিচালক, কোনটা দেখেন?

সব কটিই মাথায় থাকে। তবে এর মধ্যে কখনো কখনো কোনোটি অন্যটিকে ছাপিয়ে যায়। যেটা ‘মায়ার জঞ্জাল’-এর ক্ষেত্রে হয়েছে। এখানে নিজের চরিত্রের চেয়ে গল্প, নির্মাতা ও ঋত্বিক চক্রবর্তী বেশি প্রাধান্য পেয়েছেন।

প্রশ্ন

আপনি তো কাজের মধ্যে ছিলেন না। তাহলে ছবিটিতে যুক্ত হলেন কীভাবে?

তখন শিক্ষকতাসহ অন্যান্য কাজ নিয়ে অসম্ভব ব্যস্ত ছিলাম, আব্বার অসুস্থতাও ছিল। এর মধ্যেই আমাদের নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের অম্লানদা বললেন, কবিদা (ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরীর ডাকনাম) ঢাকায় এসেছেন, দেখা করবেন। দেখা করতে গেলাম, এরপর বাকিটা হয়ে গেল। ২০১৯ সালে ঢাকা, কলকাতা মিলিয়ে ছবিটির শুটিং হয়।

প্রশ্ন

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে দুই ছোটগল্প (‘বিষাক্ত প্রেম’ ও ‘সুবালা’) অবলম্বনে ছবিটি তৈরি হয়েছে, আগে পড়া ছিল?

গল্প আগেই পড়া ছিল, কিন্তু ভালো মনে ছিল না। যখন চিত্রনাট্যটা দেওয়া হলো, দুই গল্পকে যেভাবে মেলানো হয়েছে, সেটা আমাকে মুগ্ধ করে বেশি। ‘সোমা’ চরিত্রটি এমন নয় যে খুবই চ্যালেঞ্জিং, অনেক বেশি অভিনয়ের সুযোগ বা ওঠানামা আছে; সোমা খুবই শান্ত ধরনের চরিত্র। সেটা আরও সহজ করে দিয়েছিল পরিচালকের ব্রিফিং। সোমা কীভাবে, কোন গতিতে, কতটা উঁচু বা নিচু স্বরে কথা বলবে, কীভাবে চলবে—উনি এত সুন্দর করে বুঝিয়েছিলেন, সেটা কাজে দিয়েছে।

অপি করিম
প্রশ্ন

ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী, ঋত্বিক চক্রবর্তীদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

এই জার্নির প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি। শুটিংয়ে কোনো শব্দ ছিল না। একটা সময় মনে হতো, কোনো লাইব্রেরিতে কাজ করছি। পুরো জার্নিটা ছিল এফোর্টলেস। তা ছাড়া ঋত্বিকের মতো অভিনেতা যেখানে থাকেন, কাজ আরও সহজ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে শুটিংটা আমার জন্য বড় একটা অভিজ্ঞতা ছিল, শিক্ষণীয়ও বটে।

মায়ার জঞ্জাল ছবিতে সোহেল মণ্ডল
প্রশ্ন

অনেক দিন পরে আপনার কাজ আসছে। কয়েক দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনাকে নিয়ে কথা হচ্ছে। কেমন লাগছে?

কারও যদি ছবিটা ভালো লাগে, এটাই আমার জন্য বড় পাওয়া হবে। যদি সোমাকে ভালো লাগে তবে সেটা হবে বাড়তি পাওয়া।

প্রশ্ন

যখন নিয়মিত কাজ করতেন, তখনকার চেয়ে তো এখনকার কাজের ধরন বদলে গেছে। বিশেষ করে ওটিটি আসার পর। এই পরিবর্তনকে কীভাবে দেখছেন?

খুবই ইতিবাচকভাবে দেখছি। এখনকার কাজ অনেক বেশি সুশৃঙ্খল, রিহার্সাল হচ্ছে। আগে প্রেমের গল্পই হতো বেশি, এখন সব ধরনের কাজ হয়। এ ছাড়া কারিগরি মান, অভিনয়ের মান উন্নত হয়েছে। গল্প বলার ক্ষেত্রে এটা মানতে হবে, ওটা মানতে হবে—আগের মতো বাধ্যবাধকতা এখন নেই। এ কারণে অনেক ভালো ভালো নির্মাতা পাচ্ছি, যাঁরা নিরীক্ষাধর্মী কাজ করছেন। এমন কিছু বিষয় নিয়ে আসছেন, যা নিয়ে সমাজকে প্রশ্ন করা যায়। সব মিলিয়ে আমি আশাবাদী, আমাদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো আরও ভালো করবে।

প্রশ্ন

আপনাকে কি এখন অভিনয়ে নিয়মিত পাওয়া যাবে?

অবশ্যই। আমি তো অভিনয় ভালোবাসি, সেটা যে মাধ্যমেই হোক না কেন। সবকিছু মিলে গেলে অবশ্যই করব।

অপি করিম।ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন

টিভি বা সিনেমায় কাজ না করলেও মঞ্চে তো আপনি নিয়মিত ছিলেন। সামনে নতুন কোনো নাটক আসছে?

একটা কাজ করব, তবে এটা এখনই বলার সময় হয়নি।

প্রশ্ন

দুই বছর আগে মা হয়েছেন। মাতৃত্ব কেমন লাগছে?

এটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, এটা একটা অনুভূতি। এই যে হাঁটতে শিখছে, কথা বলতে শিখছে, শব্দ বলছে, এখন পুরো বাক্য বলছে, হাসি, অভিমান—ওর প্রতিটি অভিব্যক্তিই একেকটা অনুভূতি দেয়।