‘সাধারণ মানুষ কী খাবে বলে দেন সরকার। খাবারের লিস্ট দিয়ে দেন, আমরা কী খাব—আর পারছি না রাষ্ট্র।’ ১৭ সেপ্টেম্বর ওমর সানি তাঁর ফেসবুকে এমন একটি পোস্ট দেন। তাঁর পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, ওই দিন প্রথম আলোকে চিত্রনায়ক ওমর সানি বলেছিলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। মানুষ বাঁচবে কীভাবে? খাবেটা কী? এমনটা তো ছিল না। কেন এমনটা হলো? বাধ্য হয়েই লিখলাম।’ আবারও তাঁর ফেসবুক পাতায় একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ওমর সানি। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আগে মনের পানি দূর করেন, আমাদের শহরের পানি এমনি নেমে গেছে।’
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর টানা চার ঘণ্টা বৃষ্টি হয়। এতে করে ঢাকা শহরের বেশির ভাগ জায়গা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। রাস্তায় রাস্তায় পানিতে পড়ে অনেক ইঞ্জিনচালিত গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। বেশ কিছু এলাকায় পানি ওঠার কারণে যানবাহন, মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মনের খারাপ লাগা থেকেই এ ধরনের স্ট্যাটাস দিয়েছেন বলে জানান ঢাকাই ছবির এই নায়ক। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘খারাপ লাগা থেকেই এটি লিখেছি। এই যে বৃষ্টিতে শহরের অনেক জায়গা ডুবে গেল, পানিতে আটকে অনেক প্রাইভেট কার, বাস নষ্ট হয়ে গেল, দোকানপাট ডুবে গেছে—এসব দেখে খারাপ লেগেছে, মায়া লেগেছে। আবার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চারজনের মধ্যে তিনজনই মারা গেছেন। এটি মর্মান্তিক। এসব উপলব্ধি থেকেই এটি লিখেছি। এত কিছু ভাবি নাই, পাগল মন আমার, লিখে ফেললাম।’
এই নায়কের মন্তব্য, ‘অনেক কথাই তো বলা যায় না। কিছু কিছু বিষয় কবির ভাষায় বলতে হয়, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে হয়, কিছু নজরুলের ভাষায় বলতে হয়, কিছু নির্মলেন্দু গুণের ভাষায় বলতে হয়, কিছু হুমায়ূন আহমেদ সাহেবের ভাষায় বলতে হয়, জাস্ট ব্যাপারটা এমনই।’
ওমর সানি জানান জনগণ রাষ্ট্রের প্রজা। জনগণ যাতে ভালো থাকে, সেটি রাষ্ট্রকে দেখতে হবে। তিনি বলেন, ‘সুন্দর করে চলতে পারি, সেটাই আমরা চাই। কে কী করল, না করল, সেটি আমাদের দেখার নাই। জনগণ ভালো থাকলেই হলো। আমরা দলও করি না, কিছুই করি না। আপনারা হাজার বছর থাকেন, চৌদ্দ হাজার বছর ক্ষমতায় থাকেন, কোনো সমস্যা নাই।
আমরা ভালো থাকলেই হলো। আমরা সাধারণ মানুষ ভালো থাকলেই খুশি। দ্রব্যমূল্য ঠিক থাকুক, গ্রামের মানুষগুলো ভালো থাকুক, এই শহরটা সুন্দর থাকুক, ব্যস, এটুকুই। আমরা বললাম, গুলশান ভিক্ষুকমুক্ত। এটা করে দিয়েই তো লাভ নাই। কাজ করতে হবে। ভিক্ষা কখন করে মানুষ? ঘোষণা দেওয়ার পর যেন ভিক্ষুককে দেখা না যায়, সেই ব্যবস্থাটুকু আমরা করতে পারছি না।’
কয়েক ঘণ্টা টানা বৃষ্টির কারণে পানিতে ওই দিন রাজধানী প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। নিকট অতীতে এমন চিত্র দেখেছেন কি না, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এই অভিনেতা বলেন, ‘একচেটিয়া কথা বললে তো হবে না, এখানে স্পষ্ট করা দরকার। যে হারে বৃষ্টি হয়েছে, এ ধরনের বৃষ্টিতে উন্নত দেশেও জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। সেখানে ব্যবস্থা আছে, আমাদের এখানে হয়তো সেই ব্যবস্থা খুব একটা নাই। বাংলাদেশ নিয়মিতই বৃষ্টির দেশ। কিন্তু সেই ব্যবস্থা এখানে নিতে হবে। একবার থাইল্যান্ডের চিত্র দেখেছি। কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টিতে পানি জমে গেল। কিন্তু বৃষ্টি থামার দশ মিনিট পরে দেখলাম, রাস্তায় আর কোথাও পানি নাই।’
ওমর সানি আফসোসের সুরে আরও বলেন, ‘নিয়মিতই বৃষ্টির দেশ আমাদের। এখানে বন্যা ফেস করতে হবে, বৃষ্টি ফেস করতে হবে। তবে এই শহরজুড়ে এত খোঁড়াখুঁড়ি হয়, এত কিছু হয়। কিন্তু দ্রুতই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা তো আর হলো না। ভারী বৃষ্টি হলেই জনগণের দুর্ভোগ।’