বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শুরু থেকেই অন্তর্জালে সরব মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। চলমান আন্দোলন নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ফেসবুকে নিজের মনোভাব জানিয়েছেন নন্দিত এই নির্মাতা। গতকাল রাত ও আজ সকালে দেওয়া দুটি আলাদা ফেসবুক পোস্টে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজের মতো জানিয়েছেন ফারুকী।
আজ সকালে দেওয়া পোস্টে ফারকী লিখেছেন, ‘আজ জুলাই ৩৫। স্বাধীনতা থেকে অল্প একটু দূরে দাঁড়িয়ে আমরা। জোর কদম আগে বাড়ি চলো, এক সাথে।’
সবাই মিলে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে উল্লেখ করে ফারুকী লিখেছেন, ‘তারপর থাকবে রাষ্ট্র সংস্কারের লম্বা কাজ, প্রতিষ্ঠান সংস্কারের লম্বা কাজ, যাতে আর কোনো দিন আমাদের এই রকম বন্দিদশায় পড়তে না হয়। কেউ কেউ বলছেন, এই সংস্কার করবে কারা? আপনি করবেন। আমরা, আপনারা, সবাই করব।’
তরুণদের প্রতি নিজের আস্থার কথা জানিয়ে ফারুকী লিখেছেন, ‘খুলে বলি, সবাই জানে আমাদের সিস্টেমের সমস্যাগুলো কোথায়, ওভারহোলিং কোথায় কোথায় দরকার। এই কাজে দেশের ভেতর সিনিয়ররা তো আছেনই। তরুণদের কথাও আপনাদের একটু মনে করিয়ে দিতে চাই। ওরা নতুন বিশ্বদৃষ্টি নিয়ে বড় হচ্ছে। এত বড় আন্দোলনের পর ওদের সক্ষমতা নিয়ে নিশ্চয়ই আপনার মিনিমাম ডাউট থাকার কথা না। ওদিকে হ্যাশট্যাশ রিজার্ভ ব্রেইনড্রেইনও দেখছি। দেশের বাইরে পড়াশোনা করা একটা প্রজন্মও এই কাজে হাত লাগাতে চায়। অনেক তো হলো নৈরাজ্য। এবার সময় নতুনভাবে দেশটা সাজানোর। একটা মানবিক গণতান্ত্রিক সমাজ তৈরির। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হউক।’
এ ছাড়া গত রাতে ‘সেনাবাহিনী, সরকার এবং আন্দোলনরত ভাই-বোনদের উদ্দেশ্যে কয়টা কথা’ শিরোনামের আরেকটি দীর্ঘ পোস্ট দেন ফারুকী। সেখানে সবার উদ্দেশে নিজের চাওয়া জানান। ‘ইটস বেটার টু একসেপ্ট রিয়ালিটি’ লিখে সরকারের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন ফারুকী। তিনি লিখেছেন, ‘আপনাদের রাজনীতির এক ভয়াবহ পরাজয় ঘটেছে। স্বাধীনতার আগে আওয়ামী রাজনীতি আর আজকের আওয়ামী রাজনীতি দুইটার যে বিপরীত অবস্থান—এটা আগামী দিনের ইতিহাসের ছাত্ররা বিস্ময় নিয়ে পাঠ করবে। বাংলার মানুষ আজ ফ্যাসিজম থেকে মুক্তি চায়।
বাংলার মানুষ স্বাধীনতা চায়। এই সত্য মেনে নিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নিলে আপনাদের রাজনীতির বাকি ড্যামেজ হয়তো কিছুটা হলেও কন্ট্রোল করা যাবে। আর তা না করে মানুষ মেরে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করলে এক নিদারুণ ক্ষতি হবে। বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তানি কাউন্টার পার্ট এই রকম মানুষ মেরে টিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। ইতিহাসে তাদের অবস্থান আজ কোথায় সেটা নিশ্চয়ই আমার বলে দিতে হবে না।’
দীর্ঘ পোস্টের শেষে আন্দোলনরত ভাইবোনদের উদ্দেশে ফারুকী লিখেছেন, ‘আজকে আন্দোলনরত কেউ কেউ শাহবাগে পুলিশের দিকে তেড়ে যাওয়ার সময় তোমরা একদল যেমন মানবঢাল হয়ে পুলিশকে রক্ষা করেছিলে, এটাই হোক আগামীর বাংলাদেশ। আমরা জানি ক্ষোভের এক লক্ষ কারণ আছে। কিন্তু জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এ রকম ট্রানজিশনের সময় ক্ষোভকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
বিপক্ষের কাউকে হেনস্তা বা হামলার মতো ঘটনা ঘটলে আখেরে আমাদের প্রগ্রেস ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেউ অপরাধ করলে তার জন্য আইনি ব্যবস্থা আছে। ফ্যাসিবাদ নির্মূল করতে গিয়ে ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বললে আমরা আগাতে পারব কি? খেয়াল রাখতে হবে, অতি উৎসাহী কেউ ঢুকে যেন এইসব না ঘটাতে পারে। অথবা কেউ স্যাবোটাজ করছে কি না, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।’