বহুল আলোচিত ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনে এখন আর কোনো বাধা নেই। প্রথম আলোকে আজ শনিবার দুপুরে জানিয়েছেন সাংবাদিক ও আপিল বোর্ডের সদস্য শ্যামল দত্ত। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ এখন দর্শকেরা দেখতে পাবেন। শিগগিরই ছবিটি মুক্তির ব্যবস্থা করবেন বলে জানালেন ফারুকীও।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সভাপতি ও সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে গঠিত সাত সদস্যের সেন্সর আপিল কমিটিতে সংসদ সদস্য ও অভিনয়শিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা, সাবেক অতিরিক্ত সচিব নূরুল করিম, অভিনেত্রী সুচরিতা ও সাংবাদিক শ্যামল দত্ত সদস্য হিসেবে এবং সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান সদস্যসচিব হিসেবে ছিলেন।
আজ শনিবার আপিল বোর্ডের সদস্যরা ছবিটি দেখেন। দেখা শেষে নিজেদের মধ্যে ছবিটির মুক্তি নিয়ে কথা বলেন।
এরপর দুপুর আড়াইটায় আপিল বোর্ডের সদস্য শ্যামল দত্তের সঙ্গে কথা হলে তিনি প্রথম আলোকে বললেন, ‘ছবিটি আমরা ছেড়ে দিয়েছি। এখন আর ছবিটি প্রদর্শনে কোনো ধরনের বাধা নেই। আমরা সবাই ছবিটি দেখেছি। যেহেতু “শনিবার বিকেল” ছবিটি হোলি আর্টিজানের ঘটনার হুবহু রূপায়ণ নয়, তাই এর মুক্তিতে কোনো বাধা নেই। কোনো দৃশ্য সংযোজন বা পরিমার্জন করারও প্রয়োজন নেই। এ ছবির ঘটনার সঙ্গে হোলি আর্টিজানে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার সঙ্গে সম্পর্ক নেই। এটি হোলি আর্টিজানের ঘটনার সরাসরি চিত্রায়ণ না, আমরা এ রকম একটা ঘোষণা পরিচালককে দিতে বলেছি। আমরা বলেছি, এরপর আপনি ছবিটি মুক্তি দিয়ে দিন।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি নিয়ে আপিল বোর্ডের শুনানি হয় আজ। এদিন সিনেমার নির্মাতা-প্রযোজকের বক্তব্য শোনেন আপিল কমিটির সদস্যরা; তার আলোকে সিনেমাটি নিয়ে মতামত দেন, ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিতে কোনো বাধা নেই।
আজ আপিল বোর্ডের সদস্যরা ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি দেখার আগে ১৫ সদস্যের সেন্সর বোর্ড ২০১৯ সালে সর্বসম্মতিক্রমে সিনেমাটি প্রদর্শনের উপযোগী নয় বলে মত দিয়েছিলেন।
‘ছবিটি আমরা ছেড়ে দিয়েছি। এখন আর ছবিটি প্রদর্শনে কোনো ধরনের বাধা নেই। আমরা সবাই ছবিটি দেখেছি। যেহেতু “শনিবার বিকেল” ছবিটি হোলি আর্টিজানের ঘটনার হুবহু রূপায়ণ নয়, তাই এর মুক্তিতে কোনো বাধা নেই। কোনো দৃশ্য সংযোজন বা পরিমার্জন করারও প্রয়োজন নেই। এ ছবির ঘটনার সঙ্গে হোলি আর্টিজানে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার সঙ্গে সম্পর্ক নেই। এটি হোলি আর্টিজানের ঘটনার সরাসরি চিত্রায়ণ না, আমরা এ রকম একটা ঘোষণা পরিচালককে দিতে বলেছি। আমরা বলেছি, এরপর আপনি ছবিটি মুক্তি দিয়ে দিন।’আপিল বোর্ডের সদস্য শ্যামল দত্ত
সে সময় সেন্সর বোর্ডের বরাতে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, সিনেমাটি ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ওপর নির্মিত। সেখানে দেশের সামরিক, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সদস্যরা যে জীবন দিয়ে অসহায় জিম্মিদের উদ্ধার করেছেন, দুজন পুলিশ সদস্য প্রাণ দিয়েছেন, সেটিই অনুপস্থিত। চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড প্রতিবেদনে সিনেমাটিতে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় মানুষের প্রাণ রক্ষায় জীবনদানের বিষয়টি অনুপস্থিতি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি, অপরাধ ও আইনহীনতা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও অশ্লীল সংলাপ নিয়ে সদস্যরা মতামত দেন।
১৮ জানুয়ারি প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আপিল বোর্ড সদস্যদের উদ্দেশে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘কমিটির সদস্যদের মধ্যে অনেক খ্যাতিমান মানুষ আছেন। আমরা তাঁদের বিচক্ষণতা দেখার অপেক্ষায় আছি। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষার দায়িত্ব এখন আপিল কমিটির কাঁধে এসে পড়েছে। আমরা কি বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে এমন দেশ হিসেবে পরিচিত করতে চাই, যেখানে শিল্পের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে?
এ ছাড়া বলতে চাই, আমার দেশের একটা ঘটনার ছায়া অবলম্বনে আমি ছবি বানিয়েছি। বিদেশি একজন চলচ্চিত্রকার তো সে ঘটনারই চিত্রায়ণ করেছেন। ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখে সেটা বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাবে। এটা শুধু আমাদের দেশের চলচ্চিত্রকারদের আত্মমর্যাদার প্রশ্ন নয়, বাংলাদেশেরই আত্মমর্যাদার ভার। আপিল কমিটি নিশ্চয়ই ব্যাপারটা গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।’ মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সেই আশার প্রতিফলন ঘটেছে। আপিল বোর্ডের সদস্যরা ছবিটির প্রদর্শনে নিজেদের মতামত দিয়েছেন।