সিয়াম ও অবন্তী
সিয়াম ও অবন্তী

ছাদে পরিচয়, যুগ পার সিয়াম–অবন্তীর

বিয়ের অর্ধযুগ পার করছেন চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ। এক সন্তানের বাবা তিনি। তবে স্ত্রী শাম্মা রুশাফি অবন্তীর সঙ্গে সম্পর্কের এক যুগ পার করে দিয়েছেন, যে সম্পর্কে আছে বিশ্বাস, আস্থা, ভালোবাসা, মায়া, নির্ভরতা। সিয়ামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অর্পিতার ছোট বোন অবন্তী। সেই বন্ধুরই উত্তরার বাড়ির ছাদে প্রথম দেখা অবন্তীর, যিনি কিনা এখন তাঁর জীবনসঙ্গী। প্রেম, ভালোবাসার ভেলায় চড়ে পার করেছেন এতটা পথ। এই সম্পর্কে দুজনকে কষ্ট স্বীকার করতেও হয়েছে। ব্যারিস্টারি পড়তে সিয়াম যখন লন্ডনে গেলেন, তখন দুজনের কষ্টটা ছিল একটু বেশি। সব পেরিয়ে তাঁরা এখন তাঁদের মতো করে ভালো আছেন। আর যে সম্পর্কে যত বেশি মোহ-মায়া আছে, সেই সম্পর্ক ততটাই গভীর বলে জানালেন সিয়াম।

সিয়াম ২০১২ সাল থেকে টেলিভিশনে নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্র, উপস্থাপনা করছেন। একটা সময় চলচ্চিত্রেও অভিনয় শুরু করেন। প্রথম চলচ্চিত্র ‘পোড়ামন টু’ দিয়ে সবার নজরে আসেন। চলচ্চিত্র ও ওটিটির ব্যস্ত এই তারকা বিনোদন অঙ্গনে কাজ শুরুর আগেই দাম্পত্য সঙ্গীর দেখা পেয়েছিলেন। সেই পরিচয়ের গল্পটা সিয়াম জানালেন এভাবেই, ‘অবন্তীদের উত্তরার বাড়ির ছাদে বন্ধুদের একটা আড্ডায় তাকে প্রথম দেখা। দিন–তারিখ এখনো মনে আছে, ২০১১ সালের ৩ নভেম্বর। যেহেতু অবন্তীর বড় বোন আমার বন্ধু, তাই অন্য বন্ধুরাসহ সেদিন আমাদের আড্ডা হয়। ওই সময়ে ওর আম্মু হজ করতে যান। প্রথম অবন্তীকে যখন দেখি, তখন সে কাঁদছিল। মা ভিডিও কলে কথা বলছিলেন, মেয়ে কাঁদছিল দেখে আমার কিছুটা অবাক লাগে। কান্নার কারণে প্রথম নজরে আসে।’

সিয়াম আহমেদ ও শাম্মা রুশাফি অবন্তী

জানা গেছে, ওই বছরের ঈদে আবার অবন্তীর বাড়িতে সিয়াম ও তাঁর বন্ধুদের আড্ডা হয়। ঈদের দুই দিন পরের সেই আড্ডায় তাঁরা বন্ধুরা মিলে বাজার করে নিয়ে যান। সবাই মিলে রান্নাবান্না করেন। খাওয়াদাওয়া করেন। আড্ডা চলে। তখনো সিয়ামকে ভাইয়া বলে ডাকতেন অবন্তী।

সেই গল্প এভাবেই জানালেন অবন্তী, ‘ঈদের দুই দিন পর এসেছিল, আমাদের রান্নাবান্না সেভাবে ছিল না। ওরা সবাই মজা করে রান্নাবান্না করে। আমিও সিয়ামকে বলেছি, ভাইয়া, আপনাকে চিকেন দিই? খিচুড়ি দিই? পরের বছর ২০১২ সালের জানুয়ারিতে একটা পিকনিকে আমাদের আবার দেখা।’

তখনো দুজনের মধ্যে মনের লেনদেন হয়নি। এর কিছুদিন পর আবার দেখা তাঁদের দুজনের। এবারও আরেক বন্ধুর ছাদে। সেদিন সব আড্ডা শেষে দুজনের একটা ছবি তোলা হয়েছিল। অবন্তীর বোনই চেয়েছিলেন ছবিটা তুলতে। কারণ, একটা ঘটনায় দুজনের মনোমালিন্য হয়। অর্পিতা চাইছিলেন না এটা আরও দীর্ঘ হোক।

সিয়াম বললেন, ‘অবন্তীর তোলা সেই ছবি আজও তার আয়নার পেছনে লাগানো আছে। আমার বন্ধুটা, ওর বোন হয়তো বুঝতেই পারেনি, এই ছবি সারা জীবনের জন্যই তোলা হয়েছিল।’

গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে সিয়াম আহমেদ ও অবন্তী

অবন্তীর সঙ্গে সিয়ামের দেখা হলেই কথাবার্তা, এই ধাপ পেরিয়ে তাদের মধ্যে একসময় ফোন নম্বর আদান–প্রদান হয়। এরপর ফোনে কথাবার্তা চলে। দুজনের সম্পর্ক ভালোবাসায় রূপ নেয়। তৈরি হয় নির্ভরতা। এমন সময় পড়াশোনার জন্য চলে যান লন্ডনে। এই সময়ে সম্পর্কটা কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যায় বলে জানান সিয়াম। তবে সেই চ্যালেঞ্জ অবন্তীর কারণে খুব চমৎকারভাবে উতরে যান সিয়াম। মা–বাবার একমাত্র সন্তান সিয়াম যেদিন পড়াশোনার জন্য দেশ ছাড়ছেন, সেদিন বিমানবন্দরে আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। মা-বাবা দুজনই কাঁদছেন। পাশে কাঁদছিলেন অবন্তীও।

সিয়াম বললেন, ‘আমি মা–বাবার একমাত্র সন্তান, আমার বাইরে যাওয়াতে তাঁরা কাঁদবেন স্বাভাবিক। কিন্তু অবন্তীর পাল্লা দিয়ে কান্নাকাটি দেখে আম্মু অবাক হন। তিনি কান্নাকাটি বন্ধ করে ওকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। আমি তো চলে গেলাম। মা–বাবা দেশে একা। প্রতি সপ্তাহে অবন্তী আসত। মা–বাবার সঙ্গে দেখা করত। নিজের মা-বাবার মতো ট্রিট করত। আমার তো ভাইবোন নেই। তখন বিষয়গুলো আরও ভাবাত। আস্তে আস্তে ওর প্রতি আমার ভালোবাসা আরও বেশি বাড়তে থাকে। একটা সময় তো আমরা বিয়ে করলাম। সেই বিয়ের ছয় বছর চলছে।’

সিয়াম ও শাম্মা রুশাফি অবন্তী

২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিয়ে করেন সিয়াম ও অবন্তী। তাঁদের সংসারে আছে জায়ান নামে তিন বছর বয়সী পুত্রসন্তান। প্রেম ও ভালোবাসাটা তাঁর কাছে কী, জানতে চাইলে সিয়াম বললেন, ‘আমার কাছে ভালোবাসা হচ্ছে সবই মোহ আর মায়া। যার মায়া যত বেশি থাকে, সে ভালোবাসার তত গভীরে থাকে। আলটিমেটলি একজন মানুষের জন্য মানুষের মায়া, সম্পর্কের জন্য, কিছু অনুভূতির জন্য মায়া। আমরা মানুষ হিসেবে যেটার জন্য খুব দুর্বল হয়ে পড়ি। এটা মানুষের জন্য যেমন হতে পারে, তেমনি পশু, পাখি ও প্রাণীর জন্যও হতে পারে। মা–বাবার জন্যও হতে পারে। সবই কিন্তু মায়া।’

কথায়–কথায় প্রেম, ভালোবাসা ও দাম্পত্য সম্পর্কের দিক প্রসঙ্গে সিয়াম বললেন, ‘আমার সম্পর্কের সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে, আমি অবন্তীর ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল, যেটার জন্য দরকার নেই, সে ক্ষেত্রেও। ও যখন আশপাশে থাকে না, তা–ও সবকিছু ওর সঙ্গে পরামর্শ করে করি। কথার কথা, আজ আমি কী পরে বের হব, এটা যদিও আমি জানি, তারপরও ওর মতামত নিই। জানতে চাই, বুঝতে চাই, ও আসলে আমাকে কীভাবে দেখতে চায়। তাকে উপলব্ধি করানো, তার মতামত আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে, আমার নিজের ভেতর থেকেও ভালো লাগে। আমার মনে হয়, আমার মতামত, আমার সিদ্ধান্ত—এসবে আমি একা নই। এমন একজন আছে, সে হচ্ছে অবন্তী-ই। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং এটাই সুন্দর।’