তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রের পরিচালকের বিরুদ্ধে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে করা মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চলচ্চিত্রকার ও নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। সোমবার বিকেলে নাসির উদ্দীন ইউসুফসহ চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক, অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের একটি প্রতিনিধি দল তথমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে ছয়টি দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি দেন।
‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ঐক্য’ নামে নবগঠিত সংগঠনের পক্ষ থেকে তথ্যমন্ত্রীর কাছে যান প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। তাদের ছয়টি দাবি হলো– ১.‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রের পরিচালকের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ২. ‘শনিবার বিকেল’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি দিতে হবে। ৩. জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদান প্রদানে চলচ্চিত্র নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার করতে হবে। ৪. বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড বাতিল করতে হবে এবং প্রস্তাবিত চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইনের ক্ষেত্রে সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন প্রণয়ন করতে হবে। ৫. প্রস্তাবিত ওটিটি নীতিমালার ক্ষেত্রে সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ওটিটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। ৬. চলচ্চিত্র বা কনটেন্ট–বিষয়ক কোনো মামলা দায়ের করার আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের (যেমন: খসড়া ওটিটি নীতিমালায় প্লাটফর্মগুলোতে আলাদা কমিশন বোর্ড তৈরির প্রস্তাব আছে, এ জাতীয় কোনো কর্তৃপক্ষের) সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, তথ্যমন্ত্রী সবগুলো দাবির প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী হাওয়া সিনেমার পরিচালকের বিরুদ্ধে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে করা মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন।
ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের মামলায় কেউ না পড়ে সেই ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। শনিবার বিকেল চলচ্চিত্র মুক্তির ব্যবস্থাও নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এ জন্য হয়তো ছবিতে কিছু সংশোধন করতে হতে পারে। আমরা বলেছি, সেন্সর নীতিমালা আমাদের কাছে খুব কঠিন মনে হয়েছে, একে আরও সহজ করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, তিনি বিষয়টি দেখবেন।’
প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম, অভিনেতা তারিক আনাম খান, প্রযোজক গাউসুল আলম শাওন, নির্মাতা এস এ হক অলীক, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মেজবাউর রহমান সুমন, অভিনেত্রী আফসানা মিমি, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, সাংবাদিক নূর সাফা জুলহাজ প্রমুখ।
নতুন প্ল্যাটফর্ম প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ঐক্যের অন্যতম উদ্যোক্তা নূর সাফা জুলহাজ বলেন, নির্মাতা, লেখক, শিল্পী, কলাকুশলীদের সমন্বয়ে এই প্ল্যাটফর্ম। সংস্কৃতির সংকট ও সম্ভাবনাময় এই সময়ে সবচেয়ে বড় ঝুঁকির মুখে ভিজ্যুয়াল ইন্ডাস্ট্রি, অর্থাৎ ওটিটি ও সিনেমা। এ জায়গাগুলোতে যাতে গল্প বলার স্বাধীনতা ব্যাহত না হয়, মূলত সেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে এই সংগঠন।
গত বৃহস্পতিবার পাঁচ দফা দাবিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘গল্প বলার স্বাধীনতা চাই’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন করেন চলচ্চিত্র নির্মাতারা। এরই মধ্যে সংগঠিত হয়ে সংশোধিত রূপে ছয় দফা দাবিতে তথ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিলেন তাঁরা। সেপ্টেম্বর মাসে এসব দাবিদাওয়ার পক্ষে একটি সেমিনারের আয়োজন করতে যাচ্ছেন তারা।