সালমান শাহ অভিনীত ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ ছবিটি তাঁরা দেখেছিলেন হলে বসে। একজন ঢাকার অভিসারে, অন্যজন মাগুরার পূর্বাশায়। দুজনেরই সেটা ছেলেবেলার গল্প। একজন বাবার সঙ্গে প্রায়ই হলে ছবি দেখতেন, বেশির ভাগই নায়ক রুবেলের ছবি। অন্যজন দেখতেন মায়ের সঙ্গে, বেশির ভাগই সালমান শাহর ছবি। সময়ের সঙ্গে দুজনই ছেলেবেলা ফেলে এসেছেন, বড় হয়ে হয়েছেন ঢাকাই সিনেমার নায়ক। একজন জয় চৌধুরী, অন্যজন সাঞ্জু জন। দুজনের ক্যারিয়ারের বয়স এক দশকের বেশি হলেও আগে সেভাবে নজর কাড়তে পারেননি। তবে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দুজনকে বাণিজ্যিক ছবির ভবিষ্যতের তারকা মনে করছেন অনেকে।
জয় চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হবেন। ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটই ছিল ধ্যানজ্ঞান। সাকিব আল হাসানের জেলা মাগুরার ছেলে জয় ক্লাব পর্যায়ে ক্রিকেট খেলেছেন। ক্রিকেটার থেকে কীভাবে নায়ক বনে গেলেন? গত বুধবার বিকেলে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে সে গল্পই বলছিলেন জয়, ‘অভিনয় করার স্বপ্নটা ওভাবে দেখিনি, কিন্তু বাংলা ছবি সব সময়ই ভালো লাগত। ছোটবেলা থেকেই আম্মু-আব্বুর সঙ্গে ছবি দেখা হতো। তবে স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার। মাগুরার জেলা দলে খেলেছি। বিকেএসপি, সূর্যতরুণ ক্লাবে তৃতীয় বিভাগ লিগ খেলেছি। দুটো কি তিনটা ছবি মুক্তির পর দেখলাম, কীভাবে যেন চলচ্চিত্রই ধ্যানজ্ঞান হয়ে গেছে।’
সাঞ্জু জন অবশ্য শোবিজেই কাজ করতেন। মডেলিং করতেন ২০০৬ সাল থেকে। ২০১১ সালে অভিনয়ের প্রস্তাব পান। সাঞ্জু জন গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিষান চলচ্চিত্র মূলত যৌথ প্রযোজনার ছবি বানাত। সেই সময় তাদের বডিবিল্ডার টাইপ হিরো দরকার ছিল। (চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী) কাবিলা মামা হুট করে আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, “কিষান চলচ্চিত্রে যা।”গেলাম। আমাকে দেখে প্রযোজকের পছন্দ হয়। সিলেক্ট করেন। ২০১২ সালে ছবিটা মুক্তি পায়। ‘বাংলার পাগলু’ নামের ছবি দিয়ে আমার চলচ্চিত্রযাত্রা শুরু।’
জয় চৌধুরীর প্রথম চলচ্চিত্র ‘এক জবান’। এফ আই মানিক পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পায় ২০১২ সালে। প্রযোজক ও খল অভিনেতা ডিপজলের প্রেরণায় অভিনয় শুরু জয়ের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ডিপজল চাচ্চু সাভারের ফুলবাড়ীতে তাঁর বাড়িতে রেখে আমাকে এক বছর অভিনয়, নাচ, ফাইটিংয়ে গ্রুমিং করান। তখন অভিনয়ের শখ ছিল না, পেশাও ছিল না। চাচ্চুর ইচ্ছাতেই করা। তিনি বলেছিলেন, “তোকে নিয়ে একটা ছবি করব, বাংলা ছবি।” ছবি হলো। এর পর থেকে তো অভিনয় রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে।’
গত ঈদে জয় অভিনীত ‘প্রেম প্রীতির বন্ধন’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। ছবিটি খুব অল্পসংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। পরে অবশ্য প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা বেড়ে যায়। ছবিটির প্রতি দর্শকের আগ্রহ বাড়াতে হলেগুলোতে ছুটে গেছেন জয় চৌধুরী। তিনি জানালেন, ছবিটি নিয়ে দর্শকের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন।
আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে সাঞ্জু জনের ‘সুলতানপুর’। ছবির পরিচালক সৈকত নাসির আগেই জানিয়েছিলেন, ছবিটি দিয়ে ভিন্নভাবে সাঞ্জু জনকে চিনবেন দর্শক। ছবিটি নিয়ে সাঞ্জু জন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই চরিত্র আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। নতুন ধরনের চরিত্র, আমার বাস্তব জীবন থেকে একেবারেই বিপরীত। এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে নতুন কিছু শেখার সুযোগ হয়েছিল।’
১১ বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে ১৭টি সিনেমা করেছেন জয়। এর মধ্যে সাতটি মুক্তি পেয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে আছে ‘এক জবান’, ‘ক্ষণিকের ভালোবাসা’, ‘ভালোবাসলে দোষ কি তাতে’, ‘আজব প্রেম’, ‘হিটম্যান’, ‘চিনি বিবি’, ‘অন্তর জ্বালা’ ও ‘প্রেম প্রীতির বন্ধন’। অন্যদিকে সাঞ্জু জন অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা দেড় ডজন। ‘দ্য স্টোরি অব সামারা’, ‘আমি তোমার হতে চাই’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘লোকাল’-এ অভিনয় করেছেন, তাঁকে দেখা গেছে ওয়েব ফিল্ম ‘আলপিন’-এ। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা কয়েকটি কাজের তালিকাও জানালেন সাঞ্জু জন। এর মধ্যে ‘সুলতানপুর’ ছাড়াও সেন্সর হয়ে আছে ‘বন্ধন’, ‘কুস্তিগির’, ‘যার নয়নে যারে লাগে ভালো’, ‘হৃদ মাঝারে তুমি’র।
দুজনের এখনকার স্বপ্ন চলচ্চিত্র ঘিরেই। তাঁরা শোনালেন সেই স্বপ্নের কথাও। জয় বলেন, ‘সব সময় মনে করি, যে সিনেমাই করছি, এটাই আমার জীবনের শেষ সিনেমা। এমন ছবি করতে চাই যেন মানুষ আমাকে মিস করে।’ সাঞ্জু জন বলেন, ‘আমাদের দেশের সিনেমাগুলো নিয়মিত দেশের বাইরে দেখানো হবে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে। এমন স্বপ্ন দেখি।’