মিশা সওদাগরের দুই ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে কী করছেন

স্ত্রী ও দুই সন্তানের সঙ্গে মিশা সওদাগর। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
স্ত্রী ও দুই সন্তানের সঙ্গে মিশা সওদাগর। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

বিয়ের পর অনেক অনিশ্চয়তা নিয়ে শুরু হয়েছিল দুজনের পথচলা। পথ চলতে চলতে খল অভিনেতা মিশা সওদাগর ও তাঁর স্ত্রী জোবায়দা রব্বানী মিতা এক ছাদের নিচে দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় কাটিয়ে দিলেন। জনপ্রিয় এই খল অভিনেতার আজ ৩১তম বিবাহবার্ষিকী। বিশেষ এই দিনে তাঁর কাছে জানতে চাই, ‘সংসারজীবনে ৩১ বছর একসঙ্গে কাটানোর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে কী?’ একবাক্যে তিনি উত্তর দেন, ‘বিশ্বাস।’ শুরু থেকে এই দম্পতির একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস যেমন ছিল, এখনো তেমনই রয়ে গেছে। এ বিশ্বাস কখনো কেউ ভাঙেননি।

ক্যারিয়ারে খল অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি পেলেও তিনি পরিবারের কাছে নায়ক। তিনি একজন স্বামী, একজন বাবা। অভিনয়ের বাইরে পরিবারকে নায়কের মতো আগলে রেখেছেন। পরিবারকে সময় দিয়েছেন। নিজের আদর্শে সন্তানকে বড় করেছেন। ‘বিয়ের পর আমার স্ত্রী জোবায়দা রব্বানী মিতাকে নিয়ে কোনো দিন কোনো চিন্তা করতে হয়নি। আমাদের দুজনের একই অবস্থা। আমরা একে অন্যের মান–অভিমান, ভালোবাসা বুঝতে পারি। এভাবেই যেন জীবনটা কেটে যায়, সেটা চাই,’ বলেন এই অভিনেতা।

স্ত্রীর সঙ্গে মিশা সওদাগর। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

বিশেষ এই দিন নানাভাবে স্মৃতিকাতর করে অভিনেতাকে। একসঙ্গে জীবন শুরুর পথ ছিল বন্ধুর। ক্যারিয়ারের মতোই সংসারে সংগ্রাম করেছেন। নিজেকে জাত অভিনেতা হিসেবে ভক্তদের কাছে পরিচিত করেছেন। অভিনয়ে যেমন ছিলেন সিরিয়াস, তেমনি পারিবারিক জীবনেও ছিলেন হিসাবি। কারণ, অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে খুব বেশি সময় পরিবারকে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে মনোমালিন্য হলেও সেটা অন্যদের বুঝতে দিতে চাননি।

মিশা সওদাগর বলেন, ‘একের পর এক শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। যে কারণে পারিবারিক অনেক আয়োজন, ঘনিষ্ঠদের আয়োজনে কোনো অনুষ্ঠানে অনেক সময় যেতে পারিনি। তখন আমার বউয়ের দু–একটি কথার গভীরতায় বুঝতে পারতাম, সে কতটা রাগ করেছে। প্রেম করে বিয়ে করেছি তো, সে কারণে বুঝতে পারি। এটা মানিয়েও নিতে হয়েছে। এই যে আজ “তছনছ” নামে একটি সিনেমার মহরত হবে। সেখানে দেখি আমার নামও রয়েছে। আমাকে থাকতে হবে। সিনেমার পরিচালক বদিউল আলম খোকনের সব ছবিতে আমি কাজ করেছি। এখন কি তাকে না করা যায়! আমার স্ত্রীও এগুলো বোঝেন। তা না হলে তো সংসারই ঠিকমতো করা হতো না।’

পরিবারের সঙ্গে মিশা সওদাগর। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

দীর্ঘ সংসারজীবন নিয়ে নিজের কাছেই কষ্ট রয়েছে। কারণ, তিনি যেভাবে চেয়েছিলেন, কখনো কখনো সেভাবে সন্তানদের সময় দিতে পারেননি। এই অভিনেতা জানান, সংসার সামলানো, সন্তানদের বড় করার ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ কৃতিত্ব স্ত্রীর। তাঁর আজকের ক্যারিয়ারের পেছনেও স্ত্রীর বড় অবদান রয়েছে। ‘কিছু কারণে আমার স্ত্রীর আক্ষেপ আছে, সেটা বুঝতে পারি। এটাও জানি, অনেক সময় ফেস্টিভ্যাল, বড় কোনো আয়োজনে পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারিনি। এ নিয়ে রাগ হতে পারে। এখন আমার যে ক্যারিয়ার, সেখানে তো আমাকে টিকে থাকতে হবে। এ জন্য আমাকে কাজ করতে হয়েছে, হয়। আমি সরকারি কোনো চাকরি করি না যে শেষ বয়সে একটা ভরসা পাব। সেসব নিয়ে আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া আছে। সুখী সংসারের সিক্রেটই এগুলো,’ বলেন মিশা।

ক্যারিয়ারের শুরু থেকে মিশাকে নিজের অভিনীত কাজগুলো নিয়েও স্ত্রীর মুখোমুখি হতে হয়েছে। কারণ, স্ত্রী মিতা তাঁর কাজের কঠোর সমালোচক। মিশার মতে, ‘আমার স্ত্রী শিক্ষিত। সে শিক্ষকতা করেছে। অভিনয়টা বোঝে। যে কারণে প্রায়ই আমার কাজ নিয়ে প্রচুর কথা হয়। কোনো দৃশ্যে কীভাবে আরও ভালো হতে পারত, গঠনমূলক সমালোচনাই করে। সে ক্লিয়ার কাট, যা মনে চাইবে, সেটাই বলে দেবে। ঘরের মানুষ তো, এ জন্য অধিকার বেশি। এর মধ্যে “তুফান” সিনেমায় স্বল্প পরিসরে অভিনয় করলেও সেটা নিয়ে প্রশংসা করেছে।’

স্ত্রীর সঙ্গে মিশা সওদাগর। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

এই অভিনেতার স্ত্রী মিতা ২০১৮ সালের পর বেশির ভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। সেখানে দুই সন্তানকে দেখাশোনা করতে হয়। পরিবারের মূল দায়িত্ব পালন করেন মিতা। কারণ, শুটিংয়ে দেশেই বেশির ভাগ সময় কাটাতে হয় মিশা সওদাগরকে। এর ফাঁকে সময় পেলেই ছুটি যান স্ত্রী–সন্তানদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে।

আপনার দুই সন্তান এখন যুক্তরাষ্ট্রে কী করছেন—জানতে চাইলে এই অভিনেতা বলেন, ‘আমাদের জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন আমাদের দুই সন্তান। বড় ছেলে হাসান মোহম্মদ ওয়ালিদ ও ছোট ছেলে ওয়াইশ কার্নি হাসান। তারা বড় হচ্ছে, মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠছে, এটাই বড় শান্তি।’ তিনি জানান, বড় ছেলে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ টেক্সাস থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। ছোট ছেলে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন। প্রস্তুতি অনেক ভালো। তাঁর জন্য দোয়া চাইলেন এই অভিনেতা। ওয়াইশ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে চান। এতে অমত নেই কারও।

স্ত্রীর সঙ্গে মিশা সওদাগর। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

সন্তানেরা বাবার কী ধরনের আদর্শ পেয়েছেন—জানতে চাইলে মিশা বলেন, ‘আমি দেশকে ভালোবাসি, তাদের মধ্যেও সেই শিক্ষা ছড়িয়ে দিয়েছি। দেশের সংস্কৃতিকে ভালোবাসতে শিখিয়েছি। আমার পেশা অভিনয়, সেই পেশাকে তারা ভালোবাসে, সম্মান করে। কারণ, অভিনয়ের কষ্ট করা, ঘামের অর্থ দিয়েই তাদের বড় করেছি, পড়িয়েছি। মানুষের প্রতি সম্মানবোধসহ যতটা পেরেছি শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’

ব্যতিক্রমীসব চরিত্রে দেখা যায় মিশাকে। ছবি: ফেসবুক

প্রায়ই দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে একসঙ্গে সিনেমা দেখেন এই অভিনেতা। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের হলে ‘তুফান’ সিনেমা দেখেছেন। সেই সিনেমা ও বাবার অভিনয় নিয়ে দুই ছেলে প্রশংসা করেছেন। মিশা জানান, তাঁর পুরো পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তারা অনেক আগে গ্রিন কার্ড পেয়েছে। তবে নিজে যেমন দেশে থেকে যেতে চান, তেমনি চান, সন্তানেরাও পড়াশোনা করে দেশে আসুক।
‘আমি দুই ছেলেকে সব সময় মন থেকে বলি, তারা পড়াশোনা করে দেশে আসুক। বিদেশের চেয়ে এখানে হয়তো আয় কম হবে, তবে দেশে বাড়ি–গাড়ি সবই আছে। দেশকেও সেবা করা হবে। তারা দেশে এলেই আমি খুশি। তবে সন্তানেরা এখন বড় হচ্ছে, ওদের স্বাধীনতাও রয়েছে। যেটা ভালো মনে করে, সেটাই করবে। আমি আমার প্রত্যাশার কথা বললাম,’ বলেন মিশা সওদাগর।

১৯৯৩ সালের ৫ ডিসেম্বর জোবায়দা রব্বানী মিতার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মিশা সওদাগর। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা থেকে, স্ত্রীর মিতা নামের প্রথম শব্দ ‘মি’ ও নিজের আসল নাম শাহিদ হাসানের প্রথম শব্দ ‘শা’ দিয়ে নাম রাখেন মিশা। আর দাদার নামের সওদাগর উপাধি থেকে নিজের পুরো নামকরণ করেন মিশা সওদাগর। বর্তমানে সেই মিশা সওদাগর শুটিং নিয়েই ব্যস্ত। শেষ করেছেন ‘বরবাদ’ সিনেমার শুটিং। শিগগিরই শুরু করবেন ‘তছনছ’সহ আরও কিছু সিনেমার কাজ।