কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘লুটতরাজ’ সিনেমাটি ব্যাবসায়িক সফলতা পেয়েছিল।
কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘লুটতরাজ’ সিনেমাটি ব্যাবসায়িক সফলতা পেয়েছিল।

মাঝপথে মৌসুমী প্রধান নায়িকা, কষ্ট পেয়েছিলেন দিতি

২৭ বছর আগে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল মান্না-মৌসুমী জুটির প্রথম সিনেমা ‘লুটতরাজ’। কাজী হায়াৎ পরিচালিত সিনেমাটি ব্যাবসায়িক সফলতা পেয়েছিল। অভিনয়ের পাশাপাশি কৃতাঞ্জলী চলচ্চিত্রের ব্যানারে এর প্রযোজনা করেন নায়ক মান্না। এতে আরও অভিনয়ে ছিলেন দিতি। সিনেমাটির মাধ্যমে প্রথমবার সিনেমায় প্লেব্যাক করেন সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। সিনেমাটির ২৭ বছর উপলক্ষে প্রথম আলোর কথা হয় কাজী হায়াতের সঙ্গে। সিনেমার জানা-অজানা অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

‘লুটতরাজ’ সিনেমায় মান্নার বিপরীতে নায়িকা হিসেবে চূড়ান্ত ছিলেন দিতি ও অঞ্জু ঘোষ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অঞ্জু ঘোষের স্থলাভিষিক্ত হন মৌসুমী। প্রথম আলোকে কাজী হায়াৎ বলেন, ‘এই সিনেমায় মান্নার বিপরীতে প্রধান নায়িকা হিসেবে দিতিকে নেওয়া হয়, দ্বিতীয় নায়িকা হিসেবে অঞ্জু ঘোষকে নেওয়ার কথা প্রায় পাকা ছিল। অঞ্জুকে সাইনিং মানিও দেওয়া হয়েছিল। সে সময় মৌসুমীর কাছের একজন আমাকে এসে বলেন, অনুমতি পেলে মৌসুমীর সঙ্গে গল্পটি তিনি শেয়ার করতে চান। তখন আমি তাকে বলি, এই সিনেমায় ও মনে হয় না অভিনয় করতে রাজি হবে, তবু আলাপ করতে পারো। দুই দিন পর সে জানায়, মৌসুমী এ সিনেমাটা করতে চায়। তখন বিএফডিসির চার নম্বর ফ্লোরে মৌসুমী শুটিং করছিল। আমি সেখানে যাওয়ার পর দেখা হলে আমাকে ‘‘লুটতরাজ’’ সিনেমায় অভিনয়ের ইচ্ছার কথা জানায়।’

কাজী হায়াৎ জানান, সিনেমার গল্প নিয়ে কথা বলতে চাইলে তাঁকে থামিয়ে দেন মৌসুমী। মৌসুমী তখন তাঁকে বলেন, ‘গল্প আমার জানার দরকার নেই। আমি দ্বিতীয় নাকি তৃতীয় নায়িকা, তা–ও মুখ্য নয়। আমি কাজী হায়াতের সিনেমায় অভিনয় করছি, এটাই মুখ্য। আমি তৈরি আছি, কাল আমার বাবার কাছ থেকে শিডিউল নিয়ে আসবেন।’ এরপর মৌসুমীর বাবার কাছে সাইনিং মানি দিয়ে শিডিউল নিয়ে আসেন মান্না।

দিতি

দিতিকে প্রধান নায়িকা করে সিনেমার শুটিং শুরু হলেও মাঝপথে ‘লুটতরাজ’–এর গল্পে পরিবর্তন আনেন কাজী হায়াৎ। দর্শক চাহিদার মাথায় রেখে মৌসুমীকে প্রধান নায়িকা চরিত্রে সুযোগ দেন তিনি। যাতে দিতি কিছুটা কষ্ট পেয়েছিলেন বলে মনে করেন এ নির্মাতা।  

চিত্রনায়ক মান্না। ছবি: ফেসবুক

সে সময়ের কথা মনে করে কাজী হায়াৎ বলেন, ‘তখন সিনেমার অর্ধেক অংশের শুটিং শেষ। একদিন দিতি আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘‘হায়াৎ ভাই, এই সিনেমারে নায়িকা কে? কে শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকবে? একজন তো মারা যাবে, কোন নায়িকা বেঁচে থাকবে?” তখন আমি দিতিকে বললাম, আমার গল্প যাকে যেভাবে মারতে চায়, সেভাবেই হবে। আর ফিল্মের বর্তমান সিচুয়েশন অনুযায়ী, দর্শক কাকে প্রধান নায়িকা হিসেবে গ্রহণ করবে, তা দর্শকের বিষয়। তখন দিতি বলল, ‘‘কথা তো ছিল আমাকে জীবিত রাখবেন, আর মৌসুমী মারা যাবে।” আমি তখন বললাম না, আমার গল্পে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে, তোমাকেই মরতে হবে। এই কথা শোনার পর দিতির মুখটা একটু মলিন হয়ে গিয়েছিল, এরপর ও বলল, “আচ্ছা ভাই ঠিক আছে”। এরপর আমি তাকে বললাম, তোমার কোনো আপত্তি আছে? ও বলল, “না ভাই, আমার কোনো আপত্তি নেই।”’

কাজী হায়াৎ ভেবেছিলেন দিতি হয়তো আর শুটিংয়ে আসবেন না। তাই কিছুটা চিন্তিত ছিলেন এ নির্মাতা। তাঁর কথায়, ‘আমি ভেবেছিলাম পরদিন শুটিংয়ে হয়তো দিতি আসবে না। কিন্তু কষ্ট পেলেও আমাকে ভুল প্রমাণ করে ও শুটিংয়ে এসেছিল।’
এই সিনেমার মাধ্যমে প্রথমবার সিনেমায় প্লেব্যাক করেন প্রয়াত সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। তাঁর কণ্ঠে ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ গাওয়া গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল মান্নার ঠোঁটে। গানটি রাতারাতি পৌঁছে গিয়েছিল সারা দেশের মানুষের কাছে। সিনেমাটি ব্যবসায়িক সফলতা পেয়েছিল। দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল মান্না-মৌসুমী জুটি।