আট বছর আগে মুক্তির পর তুমুল চর্চিত হয়েছিল অমিতাভ রেজা চৌধুরীর সিনেমা ‘আয়নাবাজি’। গল্প, অভিনয়, নির্মাণ মিলিয়ে সিনেমাটি চমকে দিয়েছিল দেশি দর্শকদের। স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় ছিলেন সিনেমার অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা। তবে আশ্চর্য এই, এত প্রশংসিত হওয়ার পরও ‘আয়নাবাজি’র পর নাবিলাকে সেভাবে আর পাওয়া যায়নি। সেই নাবিলা অবশেষে ফিরলেন। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে মুক্তি পাওয়া রায়হান রাফীর ‘তুফান’ যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা একবাক্যে বলবেন—এই না হলো ফেরার মতো ফেরা!
‘তুফান’-এ কস্টিউম ডিজাইনার ‘জুলি’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাবিলা। শাকিব খানের সঙ্গে তাঁর খুনসুটি, ঝগড়া, অভিমান-অনুযোগ, প্রেমের দৃশ্যগুলো উপভোগ করেছেন দর্শকেরা। সিনেমায় স্বল্প উপস্থিতি হলেও পর্দায় নিজের ছাপ রাখতে পেরেছেন নাবিলা। ‘তুফান’-এর অন্যতম চমক ছিল শাকিব খান-নাবিলা জুটি। বাংলা সিনেমা আর টিভি নাটক অনুসরণ করা দর্শকেরা ভালোই জানেন শাকিব আর নাবিলা ‘দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা’। একজন পুরোপুরি বাণিজ্যিক ধারার সিনেমার সবচেয়ে বড় তারকা, আরেকজন কাজ করেন ভিন্ন ঘরানার কনটেন্টের।
গতকাল দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে নাবিলা জানালেন, তাঁর সঙ্গে শাকিবের রসায়ন—চমকে দিয়েছে দর্শকদের।
তাঁর ভাষ্যে, ‘এই জুটির কথা ভাবাটাও কিন্তু একটা বড় বিষয়। শাকিব খানের পাশে নাবিলা—এই জুটির কথা কিন্তু অনেকেই ভাবতে পারেন না। কারণ, শাকিব খান বেশির ভাগ সময়ই বাণিজ্যিক সিনেমার গ্ল্যামারাস নায়িকাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। সবাই তাঁর সঙ্গে এমন নায়িকা দেখে অভ্যস্ত। এই জুটির কথা যে সে চিন্তা করছে এবং বাস্তবায়ন করার সাহস করছে—এ জন্য রাফীর বড় কৃতিত্ব প্রাপ্য।’
কথায় কথায় এই অভিনেত্রী আরও জানালেন, চমকে দেওয়ার মতো কাজ করতে তিনি নিজেও পছন্দ করেন। যা কেউ ভাবতে পারেনি সে ধরনের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মধ্যে আলাদা একটা রোমাঞ্চ কাজ করে। নাবিলার মতে, তাঁর সঙ্গে শাকিব খানের জুটি দর্শকের কাছে ছিল ‘তাজা হাওয়া’, যে হাওয়ায় সবাই গা ভাসিয়েছেন।
‘তুফান’-এর দর্শক প্রতিক্রিয়া দেখে নাবিলার মনে পড়ে গেছে ‘আয়নাবাজি’ মুক্তির পরের কথা। তখন দর্শকেরা সেভাবে তাঁর প্রশংসা করছিলেন, এখন সেটার পুনরাবৃত্তি অভিনেত্রীকে নস্টালজিয়ায় ভাসিয়েছে। ‘আয়নাবাজি’র পর নাবিলা বিয়ে করেছেন, মা হয়েছেন। কিন্তু এত আলোচিত সিনেমার পর আর কাজ করেননি কেন? তুফান দেখার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই নাবিলার উদ্দেশে এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। অভিনেত্রী জানালেন, এমন চ্যালেঞ্জিং কিছুর অপেক্ষাতেই তিনি ছিলেন। তবে তিনি জানালেন, কাজটি করার আগে কিছুটা নার্ভাস ছিলেন।
নাবিলা বললেন, ‘এমন কিছুই খুঁজছিলাম। অবশ্যই আমার মধ্যে নার্ভাসনেস কাজ করেছে। দর্শকেরা আসলেই আমাকে কীভাবে নেবেন, সেটাও একটা ব্যাপার ছিল। তবে মনে মনে বিশ্বাস ছিল। কারণ, আমরা যখন শুটিং করছিলাম, তখন যাঁরা সামনে ছিলেন তাঁরা অনেকবার বলেছেন, পর্দায় দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে, দুজনের রসায়নটা জমে গেছে। মনিটরে দেখে আমরাও বুঝতে পারছিলাম, হয়তো ভালো হচ্ছে।’
রায়হান রাফী অনেকবারই বলেছেন, সিনেমায় তিনি বাণিজ্যিক ও শৈল্পিক ঘরানার মিশ্রণ ঘটাতে চান। তাঁর সিনেমাতেও বিভিন্ন ঘরানার সিনেমার অভিনয়শিল্পীদের দেখা গেছে। ‘তুফান’-এ শাকিব খান যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন নাবিলা, চঞ্চল চৌধুরীও। সিনেমার আরেক অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীও অনেক দিন পর বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমায় অভিনয় করলেন। নাবিলা মনে করেন, এক সিনেমায় বিভিন্ন ধরনের শিল্পীর এই সমাবেশ বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্যই ভালো। অভিনেত্রীর মতে, “তুফান” তেমনই একটা প্রচেষ্টা।
তাঁর কথায়, ‘শাকিব খান ২৫ বছর ধরে সিনেমা করছেন। তাঁর একটা আলাদা দর্শকশ্রেণি আছে। অন্যদিকে “আয়নাবাজি”র সাফল্যের পর অনেকে সিনেমা করার সাহস পেয়েছেন। পরে এ ধরনের সিনেমা হয়েছে। এই ঘরানার একটা আলাদা দর্শক তৈরি হয়েছে, যাঁরা হয়তো চঞ্চল চৌধুরীর কাজ দেখতেই হলে আসতে চান। এখন এক সিনেমায় যদি শাকিব আর চঞ্চল চৌধুরী থাকেন, তাহলে দারুণ ব্যাপার হয়। কারণ, আমরা যারা অন্য ধরনের কাজ করেছি, তারাও শাকিব খানের দর্শকের কাছাকাছি যেতে পেরেছি। আবার অন্য ঘরানার সিনেমার দর্শকেরাও শাকিব খানকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, শাকিব খান কত বড় মাপের অভিনেতা। শুধু শুধু তো তিনি আর সুপারস্টার হননি।’
‘আয়নাবাজি’র পর ‘তুফান’—আট বছরের বিরতি। নাবিলার পরের সিনেমা দেখতে কি আবার দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হবে? অভিনেত্রী জানালেন, এর মধ্যেই ‘বনলতা সেন’ নামের একটি সিনেমার শুটিং শেষ করেছেন। মাসুদ হাসান উজ্জ্বল পরিচালিত সিনেমাটি চলতি বছরের শেষের দিকে মুক্তি পেতে পারে। নাবিলা বললেন, তিনি এখন প্রস্তুতি আর কাজের মানসিকতা নিয়েই নতুনভাবে শুরু করেছেন। বাকিটা পরিচালকদের ওপর।