উৎসাহ–উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২০২৬ মেয়াদের নির্বাচন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ভোট গ্রহণ শেষ হয়। এর আগে ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে সকাল সাড়ে নয়টায় এফডিসির শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে যে ৫৭১ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৪৭৫টি।
প্রচণ্ড গরম আর রোদের কারণে দিনের প্রথম ভাগে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম। ফলে ভোট গ্রহণ ছিল অনেকটাই ধীরগতির। দুপুরের পর থেকেই মূলত ভোটারের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এফডিসির মূল ফটক থেকে প্রশাসনিক ভবন, ক্যানটিন চত্বর, এফডিসির বাগান, মান্না ডিজিটাল চত্বরজুড়ে চলচ্চিত্রের শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজকদের খণ্ড খণ্ড আড্ডায় দিনভর ভোটের আমেজ লেগেই ছিল।
তিন কন্যা এক ছবি
দেশে থাকলে প্রতিবারই শিল্পী সমিতির নির্বাচনে একসঙ্গে ভোট দিতে আসেন তিন বোন—সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা। এবারও এসেছিলেন তাঁরা। এদিন তিন বোনের মুখে বেশ খুশির আমেজও দেখা গেছে। বেলা তিনটার দিকে এফডিসিতে প্রবেশ করেন এই তিন বোন। প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে শুভাকাঙ্ক্ষী, প্রার্থী ও সংবাদকর্মীরা ঘিরে ধরেন তাঁদের। গণমাধ্যমের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথাও বলেন তাঁরা।
সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে ববিতা বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের সময় তিন বোন একসঙ্গে এখানে আসার চেষ্টা করি। এবারও এসেছি। নির্বাচনটা চলচ্চিত্রের শিল্পীদের জন্য উৎসবের মতো। এই উৎসবে আমরাও যোগ দিতে পছন্দ করি।’
ভোট দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ববিতা আরও বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যাঁরা এখানে প্রার্থী হয়েছেন, চলচ্চিত্রশিল্প নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, করতে পারেন, যাঁদের কাজ করার আগ্রহ আছে, তাঁদেরই ভোট দেওয়ার চেষ্টা করি। এবারও তা–ই করব।’
সুচন্দা বলেন, ‘চলচ্চিত্রশিল্পী না থাকলে চলচ্চিত্রশিল্পও বাঁচবে না। তাই সিনেমার শিল্পীরা গুরুত্বপূর্ণ। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবার চলচ্চিত্রশিল্পীদের সংগঠন। দুই বছর পরপর ভোট হয়। সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব আসে। আমরা তাঁদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করি। ভোট চলে যাবে, আমরা সবাই একই পরিবার। একসঙ্গে থাকব। পরাজিত প্রার্থীদেরও সঙ্গে নিয়ে বিজয়ীরা সিনেমার উন্নয়নের জন্য বেশি বেশি কাজ করবেন, এটাই চাওয়া আমাদের।’
শেষ বিকেলে তারকাদের ভিড়
বেলা তিনটার পর থেকেই তারকা শিল্পীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। সুচন্দা, ববিতা, চম্পাদের পর আসতে দেখা গেছে অপু বিশ্বাস, মাহিয়া মাহি, পরীমনি, রিয়াজ, ববি, সিমলা, আমিন খানদের মতো শিল্পীদের। ভোট দিয়ে বের হয়ে, আবার ভোট দেওয়ার আগেই কোনো কোনো তারকা ভোট নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের কথা বলেছেন।
ভোট দিয়ে বের হয়ে ভোটকেন্দ্রের সামনে নায়ক বাপ্পী চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে মাহিয়া মাহি বলেন, ‘আমি এর আগেও ভোট দিতে এসেছি, কিন্তু এবার মনে হচ্ছে, আনন্দটা একটু বেশি। খুবই সুন্দর পরিবেশে ভোট দিলাম, ভালো লাগছে। আমি রাজশাহীতে ছিলাম। শুধু এই ভোটের কারণে তাড়াতাড়ি চলে এসেছি।’
ছেলে পুণ্যকে নিয়ে ভোট দিতে এসেছিলেন পরীমনি। তবে ছেলেকে গাড়িতে রেখে ভোটকেন্দ্রে ঢোকেন ঢাকাই ছবির এই নায়িকা। ভোট দিতে যাওয়ার পথে পরীমনি বলেন, ‘ভোট দিতে এসে আমি খুবই রোমাঞ্চিত। আগে ভোটটা দিয়ে আসি, তারপর কথা বলব সবার সঙ্গে। তবে ভোটকেন্দ্রের পরিবেশটা সুন্দর মনে হচ্ছে।’
নেপাল থেকে দেশে ফিরে ভোট দিতে সরাসরি এফডিসিতে আসেন আমিন খান। তিনি বলেন, ‘পরিবারসহ নেপালে বেড়াতে গিয়েছিলাম। বেলা তিনটার দিকে বিমান থেকে নেমে আমি সরাসরি ভোট দিতে এখানে চলে এসেছি। এখন তো এফডিসিতে আসা কম হয়। এই ভোটকে কেন্দ্র করে সহশিল্পী, সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হয়। সেটা মিস করতে চাইনি। তাই ভোটের দিন দেশের বাইরে থেকে চলে এলাম।’
প্রার্থীরা খুশি, অসন্তুষ্ট সংবাদকর্মীরা
শিল্পী সমিতি ও পরিচালক সমিতির মাঝামাঝি জায়গায় ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে ঢোকার জন্য পথ তৈরি করা হয়। পথের দুপাশে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের প্রার্থীরা বসে, দাঁড়িয়ে দিনভর ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেছেন। ঠিক মাঝখানে একপাশে বসেছিলেন মাহমুদ কলি ও নিপুণ। মুখোমুখি অন্য পাশে ডিপজল। ভোটের পরিবেশ নিয়ে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ডিপজল বলেন, ‘খুবই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের ভোটের পরিবেশ খুবই ভালো। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’
অন্য প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিপুণ বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রের বাইরে, ভেতরে এর আগের কয়েকটি নির্বাচনে এত সুন্দর পরিবেশ দেখিনি। এখন পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে।’
পাশে দাঁড়ানো মিশা সওদাগর বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের হলেও সারা দিনে নিপুণ আমাকে তিনবার খাবার পাঠিয়েছে। আমি তার জন্য কফি, পানি পাঠিয়েছি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বিগত কয়েকবারের ভোটে দেখা যায়নি। হার বা জিৎ যা–ই হোক না কেন, আমরা শিল্পীরা এক। সব সময় এমন পরিবেশেই থাকতে চাই আমরা।’
এদিকে যখন সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ভোট চলছিল, দিনের কোনো কোনো সময় ভোটকেন্দ্রের বাইরে বিপাকে পড়েছেন সংবাদকর্মীরা। প্রবেশের অনুমতিপত্র থাকা সত্ত্বেও ভোট চলাকালে মূল ফটক দিয়ে বের হলেও পরে কার্ড দেখিয়েও আর ঢুকতে পারেননি সাংবাদিকদের অনেকেই। তারকাদেরও কারও কারও মূল ফটকের বাইরে গাড়ি রেখে হেঁটে এফডিসিতে প্রবেশ করতে হয়েছে। শিল্পী সমিতির পশ্চিম পাশে প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে চিত্রনায়িকা ববি বলেন, ‘আমরা তো চোর–ডাকাত নই, শিল্পী। অথচ আমাদের মতো শিল্পীদেরও অনেক প্রশ্নের জবাব দিয়ে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার খোরশেদ আলম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এমন আচরণে আমি কমিশনার হিসেবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আইনশৃঙ্খলার জটি পুরোটাই প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে, তাদের হাতে। তাদের মতো করে বিষয়টি দেখভাল করছে তারা। তবে আর যাতে এমনটি না হয়, সেটি দেখছি আমি।’
এদিকে রাত সাড়ে নয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভোট গণনা চলছিল।