দুজনেই টিভি নাটকের পরিচিত মুখ, বেশির ভাগ সময়ই তাঁরা শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন। লাইট ক্যামেরাকে কেন্দ্র করেই গড়েছেন ক্যারিয়ার। কিন্তু তাঁদের যমজ সন্তান ক্যামেরা দেখলেই মুখ লুকান। তবে বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরার প্রতি ভালোবাসা জমে; বাবা-মায়ের হাত ধরে তাঁরাও নাম লেখান অভিনয়ে। তাঁরা অভিনেতা শাহনাজ খুশি ও নাট্যকার বৃন্দাবন দাস দম্পতির সন্তান দিব্য জ্যোতি ও সৌম্য জ্যোতি।
শৈশবে বাবা-মায়ের সঙ্গে শুটিংয়ে যেতেন দুই ভাই। ঘটনাক্রমে কয়েকবার ক্যামেরার সামনেও দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু কে জানত, দ্রুতই অভিনয়ের প্রতি প্রেম তৈরি হবে তাঁদের। দিব্য বলেন, ‘তখন আমরা ও লেভেলে পড়ি। বাবা-মায়ের সঙ্গে শুটিংয়ে গিয়েছিলাম। বসে থাকতে থাকতে অনেকটা বিরক্ত হচ্ছিলাম। পরে হুট করে পরিচালক বললেন, চঞ্চল চৌধুরীর শ্যালকের চরিত্রে অভিনয় করতে। রাজি হয়ে যাই।’ পরে একে একে ‘হ্যাপি ফ্যামিলি’, ‘মেন্টাল ফ্যামিলি’, ‘জয়েন ফ্যামিলি’ নাটকগুলোতে অভিনয় করতে থাকেন দিব্য।
সৌম্য জানান, দিব্যর সন্তান নাটক দেখেই তিনি অভিনয়ে উৎসাহ পান। পরবর্তী সময়ে একসঙ্গে কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন তাঁরা। সৌম্যর ভাষ্যে, ‘একসঙ্গে অভিনয় মজার ঘটনাও ঘটে। অনেকেই আমাকে দিব্য আবার সৌম্য ভাবেন।’
সন্তানদের নিয়ে তাঁদের মা অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি বলেন, ‘কখনোই চাইনি অনিশ্চয়তার এই পেশায় ছেলেরা আসুক। এখন তাদের ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা।’
একটি অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে শাহনাজ খুশি বলেন, ‘কদিন আগে একটি রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম। আমি যাওয়ার সময় সেখানে একজন বলছিলেন, “ওই দেখো, শাহনাজ খুশি যাচ্ছে।” সৌম্য শুনে আমাকে বলছিল, “মা, তোমার কথা বলছে।” তখন আমি বললাম, সেই দিনের জন্য আমি অপেক্ষা করছি, যেদিন শুনব সৌম্যের মা যাচ্ছে।’
দিব্য ও সৌম্য ওটিটির জন্য ‘এই মুহূর্তে’, ‘কারাগার’, ‘কাইজার’, ‘ইন্টার্নশিপ’-এ কাজ করেছেন।
দিব্য ও সৌম্যের মতো টাপুর-টুপুরও শৈশব থেকে লাইট ক্যামেরা দেখে বড় হয়েছেন। কারণ, তাঁদের বাবা-মা অভিনেত্রী গোলাম ফরিদা ছন্দা ও পরিচালক সতীর্থ রহমান। কখনো বাড়িতে হতো শুটিং। বাবা-মায়ের সঙ্গে চলে যেতেন শুটিংয়ে। একসময় আফসানা মিমি এই যমজ বোনকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। মেয়েদের না নেই। কিন্তু তাঁদের বাবা চান মেয়েরা তাঁর পরিচালনায় প্রথম অভিনয় করুক। এভাবেই ২০১৬ সালে বাবার ‘খোলস’ নাটক দিয়ে শুরু। তারপর অমিতাভ রেজা, মাতিয়া বানু শুকু, চয়নিকা চৌধুরী, শুভ্র খানসহ অনেকের নাটক ও বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন। কিন্তু পড়াশোনার জন্য দার্জিলিংয়ে থাকার কারণে অভিনয় কমতে থাকে। করোনার মধ্যে দুই বছর দেশেই ছিলেন দুই বোন। এই সময় টাপুর নাম লেখান অনুদানের ছবি ‘দেশান্তর’-এ। সম্প্রতি সিনেমাটি মুক্তি পেলেও টাপুর দার্জিলিং রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অনেকেই অভিনয়ের প্রশংসা করছেন। দেশে থাকলে ভালো লাগত। মিডিয়ার ওপর পড়াশোনা করেই বাবা-মায়ের মতো মিডিয়ায় কাজ করতে চাই। সেটা ক্যামেরার সামনে বা পেছনে, যা-ই হোক।’
টুপুর এখনো ক্যারিয়ার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। পড়াশোনার পাশাপাশি বা পড়াশোনা শেষ করে মেয়েরা ইচ্ছেমতো পেশা বেছে নিলে আপত্তি নেই টাপুর ও টুপুরের মা ছন্দার। তিনি বলেন, ‘একবার টাপুরের খালার চরিত্রে অভিনয় করছি। গল্পে টাপুর এসে আমাকে একটা দুর্ঘটনার খবর দেয়। আমি ছাদে কাপড় নাড়ছিলাম। আমি কাপড় নিয়েই দৌড় দিই। হঠাৎ টাপুর নিজেই বলে ওঠে “কাট”। আমরা সবাই অবাক। পরে সে আমাকে বলে, “তুমি দুর্ঘটনার খবর শুনে নার্ভাস হয়ে যাবে। তোমার হাত থেকে কাপড় পড়ে যাবে, তবে না তুমি দৌড় দেবে।” সেদিনই ভেবেছিলাম, মেয়েটা অভিনয় পারবে। “দেশান্তর” সিনেমার শুটিংয়ের সময় সেটা আরও ভালো বুঝেছি। তবে তারা যা ভালো মনে করে, তা-ই করুক।’
অভিনয়ে আরেক যমজ ভাই সৌমিক আহমেদ ও শৌভিক আহমেদ। তবে মজা হচ্ছে, তারা যে যমজ, সেটা অনেকেই জানেন না। এর কারণ, তাঁরা দেখতে একে অন্যের চেয়ে আলাদা। সৌমিক জনপ্রিয়তা পান ভালোবাসা দিবসের নাটক ‘ভালোবাসা-১০১’ দিয়ে। ২০১৩ সাল থেকে টানা নাটক, স্বল্পদৈর্ঘ্য, মিউজিক ভিডিও, ইউটিউব কনটেন্ট করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। একসঙ্গে মাসে সাতটি ধারাবাহিকও করেছেন।
সৌমিক বলেন, ‘একসঙ্গে “লোকাল বাস”, বিয়ের গান”সহ অনেক নাটক, ভিডিও কনটেন্টে আমরা অভিনয় করেছি। পরে যমজ বললে সবাই ধরে নেয় মজা করছি।’ সৌভিক বলেন, ‘আমার অভিনয়ে আসা ভাইয়ার পরে। বলা যায়, ভাইয়াকে দেখেই অভিনয়ে আসা।’ কিছুদিন ধরে তাঁরা অভিনয়ে অনিয়মিত। জানা গেল, দুই ভাই এখন চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। তবে শিগগির অভিনয়ের ফিরবেন।
আদরের ছোট দুই বোন লারিনা ও লারিসা বলতে পাগল ছিলেন বড় বোন লরেন ম্যান্ডেস। বাড়ি থেকে বের হলে তাঁদের সঙ্গে নেওয়া চাই। এভাবে মডেল ও অভিনেত্রী লারিনা শুটিংয়ে গেলেও ছোট দুই বোনকে নিয়ে যেতেন। বড় বোনের শুটিংয়ে লারিনা ও লারিসাকে নির্মাতারা পছন্দ করেন। বোনের হাত ধরে শুরু করে যমজ দুই বোনের শুটিং। যমজ দুই বোন এখন নিয়মিত বিজ্ঞাপন ও নাটকে অভিনয় করেন। কিন্তু তাঁদের বড় বোনটি আর নেই। ২০২০ সালে নিজ কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় লোরেনকে। লারিসা বলে, ‘আপা মারা যাওয়ার পর আমরা গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। ঢাকায় শুটিং করতে গেলে আপার কথা মনে হতো। আপু চাইত, আমরা অভিনয় করি। এখন আপুই নেই।’
তাঁদের মা ব্লিন মেন্ডেস বলেন, ‘বড় বোনকে হারিয়ে দীর্ঘদিন ওরা ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে পারত না। সবাই বোনের কথা জিজ্ঞেস করত। তখন খুব কাঁদত। এ জন্য অভিনয় থেকে দূরে ছিল। এখন ওরা চায় বোনের মতো অভিনয় করতে।’