ঈদে ঢাকাই ছবির দিকে বরাবরই দৃষ্টি থাকে দর্শকের। দল বেঁধে প্রিয় তারকার ছবি দেখতে গিয়ে তৈরি হয় উৎসবের আবহ। মধ্যে নানা সংকটে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়লেও গত বছর থেকে ঈদে আবার চাঙা হয়েছে প্রেক্ষাগৃহ। বিশেষ করে গত ঈদুল আজহায় ‘পরাণ’ ও এর কিছুদিন পর মুক্তি পাওয়া ‘হাওয়া’ সিনেমা নিয়ে দর্শকের আগ্রহ ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়। প্রযোজক, নির্মাতারাও তাই ঈদের ছবি নিয়ে আলাদা নজর দিয়েছেন। এবারের ঈদের মুক্তির মিছিলে ১০টির বেশি সিনেমা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা দাঁড়িয়েছে ৫টিতে। তবে অনেক দর্শকের আগ্রহ শাকিব খান ও আফরান নিশোর দিকে। একজন ঢাকাই ছবির অন্যতম সেরা তারকা, দুই যুগের বেশি ক্যারিয়ার; অন্যজনের ছোট পর্দা ও ওটিটির কাজ দিয়ে প্রশংসিত হলেও ঈদের ছবি দিয়েই বড় পর্দায় অভিষেক হচ্ছে।
ঈদে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়েছে পাঁচটি সিনেমা ‘প্রিয়তমা’, ‘সুড়ঙ্গ’, ‘লাল শাড়ি’, ‘প্রহেলিকা’ ও ‘ক্যাসিনো’। এর মধ্যে হিমেল আশরাফের ‘প্রিয়তমা’য় আছেন শাকিব খান ও ইধিকা পাল; রায়হান রাফীর ‘সুড়ঙ্গ’-এর কান্ডারি আফরান নিশো ও তমা মির্জা। মুক্তির আগে গান, টিজার আর লুক দিয়ে আলোচনায় আছে ছবি দুটি। আজকাল ক্রিকেট থেকে সিনেমা—ফেসবুকে ভক্তদের অনেক গ্রুপ আছে। এগুলোতে ঢুঁ মারলেই বোঝা যায় ছবি দুটি ঘিরে তাঁদের আগ্রহের কমতি নেই। ফেসবুক গ্রুপগুলোতে যেমন প্রিয় তারকার নতুন ছবির নানা খুঁটিনাটি, ভালো লাগা-মন্দ লাগা ভাগাভাগি করেন ভক্তরা, তেমনি আবার প্রিয় তারকার প্রতিদ্বন্দ্বী তারকার ছবির দুর্বলতা খুঁজে বের করতেও তাদের জুড়ি নেই। তবে অনেক ভক্ত জানেন না, কোথায় থামতে হয়। তাই এই চর্চা মাঝেমধ্যেই আর ‘স্বাস্থ্যকর’ থাকে না।
ঈদের ছবি নিয়ে শাকিব খান ও আফরান নিশোর মধ্যে কেন অদৃশ্য প্রতিযোগিতা তৈরি করছেন ভক্তরা?
ঈদের সিনেমা নিয়ে শাকিব খান এখন সেভাবে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হননি, তবে নিশোকে সুযোগ পেলেও ‘শাকিব খানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা’ নিয়ে প্রশ্ন শুনতে হচ্ছে। উত্তরে নিশো বারবারই বলেছেন, এটা নিয়ে তাঁর কোনো চাপ নেই। টিভি শুরুর পর যেমন অনেক পরিশ্রমের পর আজকের অবস্থান তৈরি করেছেন, সিনেমার ক্ষেত্রেও সে চেষ্টা করবেন।
গত দুই যুগের ক্যারিয়ারে শাকিব খান নিজেকে বাণিজ্যিক সিনেমার একরকম অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়কে পরিণত করেছেন। তবে এবারের শাকিব খান আর আগের শাকিব খানের মধ্যে পার্থক্য আছে। সিনেমা বা খেলায় ‘নতুন শুরু’ শব্দবন্ধের বেশ চল আছে। কেউ যখন নিজের লুক বা চরিত্র পছন্দের ক্ষেত্রে খোলনলচে বদলে হাজির হন, তখন ‘নতুন শুরু’, ‘দ্বিতীয় ইনিংস’ এমন অনেক শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়। এবারের শাকিব খান কোথায় আলাদা?
২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘শিকারি’ দিয়ে নতুন লুকে হাজির হন শাকিব খান। তাঁর লুক, ফিটনেস, গানে পারফরম্যান্স দর্শকদের মুগ্ধ করে। এবারের ‘প্রিয়তমা’র শাকিব খানকেও নিজেকে ভেঙে নতুন লুকে হাজির হওয়ার চেষ্টা দেখা গেছে। শুটিং শুরুর পর যখন ছবির প্রথম পোস্টার ছাড়া হয়, তখনই লম্বা চুলের শাকিবকে দেখে চমকে গেছেন ভক্তরা।
এরপর একে একে আরও পোস্টার আসে, আর আসে অশীতিপর বৃদ্ধের সেই ভাইরাল লুক। বাণিজ্যিক ছবির বড় তারকারা সাধারণত সেভাবে নিজের লুক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ঝুঁকি নেন না। শাকিবের লুক তাই অনুমিতভাবেই ভাইরাল হয়। এরপর ছবির মুক্তি পাওয়া দুটি গান ‘কোরবানি কোরবানি’ ও ‘ও প্রিয়তমা’ মুক্তি পায়। গান দুটির গায়কি, সুর, গানে পাত্র-পাত্রীর পারফরম্যান্স, সর্বোপরি কোরিওগ্রাফি প্রশংসিত হয়। যা শাকিব ভক্তদের ছবিতে দেখতে আরও আগ্রহী করে তুলেছে।
এবার আসা যাক আফরান নিশোর ‘সুড়ঙ্গ’ প্রসঙ্গে। পরিচালক রায়হান রাফী সত্য ঘটনা অবলম্বনে সিনেমা, সিরিজ বানিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। অনেক সমালোচক তাঁর মধ্যে বাণিজ্যিক ও শৈল্পিক ঘরানার মিশ্রণে সিনেমা বানানোর বিরল গুণ আছে বলে মনে করেন। সেই রাফী সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’ দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হচ্ছে আফরান নিশোর।
অভিনেতা হিসেবে আফরান নিশো যে জনপ্রিয়, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। টিভিতে অনেক ফিকশনে বহুবার তা তিনি প্রমাণ করেছেন। এটা আরও ভালোভাবে বোঝা গেছে ওটিটি আসার পর। গত বছরের ঈদুল আজহায় মুক্তি পায় তাঁর দুই কনটেন্ট—‘সিন্ডিকেট’ ও ‘কাইজার’। একটিতে অটিস্টিক তরুণ, আরেকটিতে গেমিংয়ে আসক্ত গোয়েন্দা পুলিশ। একই সময়ে মুক্তি পাওয়া দুই কাজে দুই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পান তিনি। এ ছাড়া তাঁর এই ঈদেই টিভিতে আসবে ‘পুনর্জন্ম অন্তিম পর্ব’। এই ফ্র্যাঞ্চাইজিতে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেও দর্শকের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছেন তিনি। সেই নিশো বড় পর্দায় কেমন করবেন?
‘প্রিয়তমা’র বড় ইউএসপি ছবিটিতে বিনোদন সিনেমার যাবতীয় মসলা এতে মজুত আছে, সঙ্গে থাকবে শাকিবের খানের পারফরম্যান্স। অন্যদিকে ‘সুড়ঙ্গ’-এর বড় শক্তি নিশোর অভিনয় আর রাফীর পরিচালনা। বড় পর্দায় কাজের ক্ষেত্রে হিমেল আশরাফের চেয়ে রায়হান রাফীর অভিজ্ঞতা বেশি। বিশেষ করে গত ঈদে যে তিনি ‘পরাণ’-এর মতো আলোচিত ছবি উপহার দিয়েছেন, সে কথাও অনেক দর্শকের মনে থাকবে। অন্যদিকে ‘প্রিয়তমা’ বেশ কম সময়ের মধ্যে বানিয়েছেন হিমেল আশরাফ। শাকিব খানের মতো তারকাকে নিয়ে এত বড় আয়োজনের সিনেমা এত কময়ে তিনি কতটা সার্থকভাবে বানিয়েছেন, সেটাও দেখার।
এক মাস ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি প্রচলিত আলোচনা হলো, মাল্টিপ্লেক্সে নিশোর ছবি ভালো করবে, একক হলে শাকিবের সিনেমা। তবে সিনেমা দর্শকের ভালো না লাগলে যে কোথাও চলবে না, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন অনেকে।
উপমহাদেশের সিনেমার ক্ষেত্রে ‘মোমেন্টাম’ খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম দিনের প্রদর্শনী দেখা দর্শকের কাছ থেকে মুখে মুখে ছবির কথা ছড়িয়ে পড়ে। তাই প্রথম দুই দিন ‘প্রিয়তমা’ ও ‘সুড়ঙ্গ’ কেমন করে, সেটার ওপর পরের দিনগুলোর ফল নির্ধারণ করে দিতে পারে। তার আগে আপনিও মন্তব্য করে জানাতে পারেন কোন ছবির ব্যবসায়িক সাফল্যের পাল্লা ভারী। আপনার মন্তব্যের ফলাফল আমরা প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশ করব।