এক যুগের অভিনয়জীবনে ছয় বছরের বেশি শুধু সিনেমায় কাজ করছেন সিয়াম আহমেদ। প্রথম চলচ্চিত্র পোড়ামন ২-এই তাঁর একটা রোমান্টিক ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে। পরেও ‘লাভার বয়’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন সিয়াম আহমেদ। এখন পর্যন্ত যে কয়টা চলচ্চিত্র করেছেন, সব কটিতেই তিন প্রেমিক হিরো। তবে নায়ক পরিচয়ের বাইরে গিয়ে অ্যান্টিহিরো হিসেবে নিজেকে চেনানোর চেষ্টা তাঁর মধ্যে আছে। ওয়েব সিরিজ ‘টিকিট’-এ তাঁর সেই দিকটাকেই উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন ভিকি জাহেদ।
গতকাল মঙ্গলবার ভিকি জাহেদ ভিকি বললেন, ‘যেহেতু আমার সঙ্গে প্রথম কাজ, তাই গৎবাঁধা ছকে থাকতে চাইনি। ভেবেছিলাম, ভিন্নধর্মী কিছু করি। আমার কাজটির ঠিক আগে (মিজানুর রহমান) আরিয়ান ভাইয়ের ‘পুনর্মিলনে’ নামের একটা ওয়েব ফিল্মে কাজ করেছিলেন, তাতেও বরাবরের মতো তিনি রোমান্টিক। তাই ভেবেছিলাম, ভিলেন হিসেবে দেখাতে পারি। আমার কাছে মনে হয়েছে, তাঁর আপ্রাণ চেষ্টা ছিল। শুটিংয়ের আগে চিত্রনাট্য নিয়ে অনেকবার বসা হয়েছে। আমিও প্রত্যাশা অনুযায়ী পেয়েছি।
একাধিক চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজকের মতে, হিরো যাঁরা, তাঁদের নিয়ে অ্যান্টিহিরো চরিত্রও ভাবা উচিত। আমি যেমন প্রমাণ পেয়েছি, অন্য অনেকেও পেয়েছেন। নায়কদের এক রকম চরিত্র দেখতে দেখতে দর্শক অনেক সময় একঘেয়েমিতে ভোগেন। হঠাৎ হঠাৎ চরিত্রের বৈচিত্র্যে দর্শক কিন্তু আরাম পান। নায়কের জন্যও নিজেকে ঝালাই এবং যাচাইয়ের দারুণ সুযোগ।’
কথাপ্রসঙ্গে ভিকি বললেন, ‘পরিচালকের পাশাপাশি নায়কেরাও যদি মাঝেমধ্যে এ রকম চ্যালেঞ্জ নেন, তাহলে নতুনত্ব পাওয়া যায়। আমি তো সিয়াম আহমেদকে নিয়ে খুশি যে তিনি চরিত্রটি করতে রাজি হয়েছেন। এতটা ডার্ক একটা চরিত্রে তিনি কাজ করবেন, ভাবতেও পারিনি। পুরো চরিত্রটাই নেতিবাচক ছিল। আমারও মনে হয়েছে, তিনি নিজেকে ভিন্ন রকমভাবে উপস্থাপন করতে চান। এটাও মনে হয়েছে, অন্য নায়কেরাও হয়তো চান, শুধু দরকার সঠিক প্রস্তাব ও পরিকল্পনা।’
টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিমকে ঢালিউডের পাশাপাশি টালিউডেও নায়ক হিসেবে দেখা গেছে। আবার ব্রাত্য বসুর হুব্বা চলচ্চিত্রে তাঁকে নেতিবাচক চরিত্রেও দেখা গেছে। দুই বছর আগে মুক্তি পাওয়া ইফতেখার শুভর মুখোশ চলচ্চিত্রেও তাঁকে এমন চরিত্রে দেখা গেছে। সম্প্রতি চরকিতে মুক্তি পাওয়া অ্যান্থলজি সিরিজ আধুনিক বাংলা হোটেল-এ তাঁর নেতিবাচক উপস্থিতি দর্শককে চমকে দিয়েছে। পরিচালক ইফতেখার শুভ প্রথম আলোকে বললেন, ‘আমার চলচ্চিত্রে হিরো এবং অ্যান্টিহিরো দুইভাবেই ছিলেন মোশাররফ করিম। এই চরিত্রের জন্য অভিনয়দক্ষতাই মূল মনে হয়েছে। আমরা যদি তাঁর অভিনীত চরিত্রের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, নানামাত্রিক চরিত্রে মোশাররফ করিম অনবদ্য। কমেডি, সিরিয়াস, নেগেটিভ যা-ই বলি না কেন।’
নায়ক হিসেবে পরিচিত হলেও শরীফুল রাজকে অ্যান্টিহিরো হিসেবেও দেখা গেছে। প্রথম চলচ্চিত্র আইসক্রিম-এর পর ন ডরাই শেষে পরাণ-এ তিনি নতুন রূপে ধরা দেন। এই চরিত্রে দর্শকও তাঁকে দারুণভাবে গ্রহণ করে। রাজও পেয়ে যান জনপ্রিয়তা। এরপরই একসঙ্গে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পান। কিন্তু একের পর পর ছবি নেওয়ার পথে হাঁটেননি রাজ। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে হাসিবুর রেজা কল্লোলের কবি। পরাণ ছবির পরিচালক রাফি বললেন, ‘আমি প্রতিটি চরিত্রকে মানুষ হিসেবে ভাবতে পছন্দ করি। পরাণ-এ রাজ খারাপ চরিত্রের মানুষ, সে পর্দায় তা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। বৈচিত্র্যময় চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপনের আগ্রহও ওর আছে। অভিজ্ঞতা বাড়লে নায়কের বাইরে আরও ভিন্নধর্মী চরিত্রে পাওয়া যাবে।’
সময়ের আলোচিত সিনেমা তুফান-এ দুই ধরনের চরিত্রেই দেখা দিয়েছেন শাকিব খান। একটি রোমান্টিক হিরো, আরেকটি অ্যান্টিহিরো। এটিই তাঁর প্রথম অ্যান্টিহিরো রোল নয়। দুই যুগ ধরেই তাঁকে হিরো-অ্যান্টিহিরো দুইভাবেই দেখা গেছে। তবে সেখানেও তুফান ব্যতিক্রম। পরিচালক রায়হান রাফি বললেন, ‘পরিকল্পনা করে হিরো-অ্যান্টিহিরোর বিষয়টা ভাবিনি। গল্পটা কোন দিকে যাচ্ছে, আমাদের কাছে সেটাই ছিল প্রধান। এখানে চ্যালেঞ্জ ছিল, দেশের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার শাকিব খান একই সঙ্গে হিরো ও অ্যান্টিহিরো—কীভাবে চরিত্রটা ডিল করব। বরাবরই বলি, তিনি ছাড়া কাউকে দিয়ে এটা সম্ভব নয়। একই মানুষের লুক অ্যান্ড ফিলেও অনেক চেঞ্জ। শাকিব ভাই তো অ্যাক্টর হিসেবে দুর্দান্ত। তাঁকে নিয়ে নায়কের বাইরে সব ধরনের চরিত্র দারুণভাবে বানানো সম্ভব।’