উপস্থাপক খুব নার্ভাস। কিন্তু কারণ কী? ‘ওয়ালটন ফ্যান তারার ঈদ’ অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন দুজন অতিথি। একজনের সঙ্গে উপস্থাপক মৌ খুবই সাবলীল। কারণ, এর আগেও অনেকবার তাঁর ইন্টারভিউ নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। আরেকজনকে দীর্ঘ সময় ধরে দেখে আসছেন পর্দায়। তিনি মৌসুমী মৌয়ের ‘স্বপ্নের মানুষ’। সেই মানুষকে নিয়ে তাঁর বিশেষ অনেক গল্পও আছে। বিনোদন অঙ্গনের প্রায় সব শাখাতেই ছিল তাঁর সফল পদচারণ। দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও পাঁচবার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ঈদের আনন্দকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে ‘মনা’ ও ‘অর্পা’ হয়ে দর্শকদের সামনে উপস্থিত হয়েছেন তাঁরা।
‘প্রহেলিকা’ সিনেমার মনা চরিত্রের মাহফুজ আহমেদ এবং অর্পা চরিত্রের শবনম বুবলীকে নিয়ে জমজমাট আড্ডায় বসেছিলেন মৌসুমী মৌ। প্রথম আলো ডটকম আয়োজিত বিশেষ আনন্দ আড্ডা ‘ওয়ালটন ফ্যান তারার ঈদ’ অনুষ্ঠানে ‘প্রহেলিকা’র গল্প বলেছেন মাহফুজ ও বুবলী। পর্বটি আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় একযোগে প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম, প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে।
মৌসুমী মৌয়ের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে ‘লজ্জায় লাল’ হয়ে যান ‘প্রহেলিকা’র নায়ক মাহফুজ আহমেদ। তাই উপস্থাপক প্রথম প্রশ্নটি করেন শবনম বুবলীকেই, ‘মাহফুজ আহমেদের সঙ্গে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়ে কি নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলেন?’
‘নার্ভাসের চেয়ে বেশি কিছু থাকলে সেটাই হয়েছিলাম।’ বুবলীর ঝটপট উত্তর, ‘বাংলাদেশ যতজন রোম্যান্টিক নায়ক আছেন, তাঁদের মধ্যে শীর্ষে মাহফুজ আহমেদ।’
‘বুবলীর সঙ্গে রোমান্স করতে কেমন লেগেছে?’ এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বুবলীর দিকে আঙুলের ইশারায় দিয়ে মাহফুজ আহমেদ বলেন, ‘তুমিই বলো?’
কেন বুবলীরই বলা উচিত? কারণে হিসেবে মাহফুজ আহমেদ বলেন, ‘আমি তো অনেক দিন পর সিনেমায় আবার অভিনয় করলাম। কিন্তু বুবলী এখন নিয়মিত অভিনয় করে। তাই তারই আগে বলা উচিত।’
‘যদি একবাক্যে বলি, তাহলে বলতে হয়, যখন আমি প্রথম শুনি “প্রহেলিকা” সিনেমায় আমার নায়ক হিসেবে রয়েছেন মাহফুজ আহমেদ, অসাধারণ অনুভূতি কাজ করেছিল। মনে হচ্ছিল, আমার ক্যারিয়ারে অনেক বড় একটা অর্জন হবে এটি। এত বড় মাপের একজন অভিনয়শিল্পী এবং ব্যক্তিমানুষকে আমার খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হবে।’ বুবলীর চোখে-মুখে আনন্দের অভিব্যক্তি, ‘আমরা সব সময় মাহফুজ আহমেদকে পর্দায় দেখেছি। অনেক বছর পর তিনি বড় পর্দার জন্য কাজ করলেন। কিন্তু আমরা যখন একসঙ্গে কাজ করা শুরু করলাম, তখন একবারের জন্যও মনে হয়নি মানুষটি অনেক দিন ধরে লাইট-ক্যামেরার বাইরে। তিনি সবার সঙ্গে খুব ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছিলেন। কাজ করছেন, টেকনিশিয়ানদের নির্দেশনা দিচ্ছেন, আবার স্ক্রিপ্ট দেখছেন...। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত।’
নায়ক-নায়িকা রোম্যান্টিক দৃশ্যে অভিনয় করলেই প্রেম হয়ে যায়—এ কথার কী ব্যাখ্যা দেবেন মাহফুজ আহমেদ? জানতে চান মৌসুমী মৌ।
উত্তরে মাহফুজ আহমেদ বলেন, ‘“প্রহেলিকা”য় আমাদের একটা রোম্যান্টিক দৃশ্য আছে। মনা তার কাঙ্ক্ষিত মানুষের কাছে সব বাধা পেরিয়ে আসবে। তখন তুমুল বৃষ্টি হতে থাকে। ডাকছে অর্পা আর মন ছুটে আসছে। ভোরবেলায় অনেক বৃষ্টি আর শীতের মধ্যে দৃশ্যটি শুটিং করেছি আমরা। আমি ঠান্ডায় কাঁপছিলাম। বৃষ্টি ও শীত—দুটোই আমাদের সাহায্য করেছে এত সুন্দর একটি রোম্যান্টিক দৃশ্যে অভিনয় করতে। আমার ধারণা, এর আগে এত সুন্দর রোম্যান্টিক দৃশ্যে আমি অভিনয় করিনি।’
‘সে সময় কি কোনো সংলাপ ছিল?’ সঙ্গে সঙ্গে বুবলীর বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর, ‘এটি শুনতে হলে এবং দৃশ্যটি দেখতে হলে অবশ্যই হলে গিয়ে “প্রহেলিকা” সিনেমা দেখতে হবে সবাইকে।’
‘একটা দৃশ্যে নাকি টানা ছয় মিনিট অভিনয় করেছেন আপনারা দুজন? সত্যি?’
উপস্থাপকের এ প্রশ্নের উত্তরে মাহফুজ আহমেদ বলেন, ‘প্রেমের তো দুটো বিষয় থাকে। একটি হলো মুগ্ধতা, বিপরীতে হলো ভয়ংকর। সেই ভয়ংকর অংশে আমারা দুজন মুখোমুখি হই। শুটিংয়ের ওই অংশ করার সময় আমি বুবলীকে বলেছিলাম, আমি সংলাপ বলার সময় তুমি শুধু রিঅ্যাকশন দেবে। সে অনুযায়ী বুবলী রিঅ্যাকশন দিয়েছে। আমি সংলাপ বলে গেছি। দৃশ্যটিতে আমরা ছয় থেকে সাড়ে ছয় মিনিট টানা অভিনয় করেছিলাম। আমি সাধারণত দৃশ্য শেষ হওয়ার পর মনিটরে দেখতে যাই। কিন্তু এই লম্বা দৃশ্য শেষ হওয়ার পর আমি আর দেখতে যাইনি। কারণ আমি জানি কী হয়েছে। এ দুটো দৃশ্যের কথা আমি ভুলব না।’
চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত ‘প্রহেলিকা’ একজন বঞ্চিত নারীর গল্প।
‘বুবলী, আপনি এর আগে যত সিনেমায় অভিনয় করেছেন, তার চেয়ে “প্রহেলিকা”য় আপনার অভিনয় কতটুকু আলাদা?’
বুবলীর ছোট্ট উত্তর, ‘একেবারেই আলাদা। এমন চরিত্র আমি আগে কখনো করিনি। “প্রহেলিকা”র মতো করে আগে আমাকে কেউ চরিত্র দেয়নি। ভবিষ্যতেও এমন চরিত্র পাব কি না জানি না। আর অভিনয়ের দিক দিয়ে যদি বলি, সিনেমাটি আমার ক্যারিয়ারের এখন পর্যন্ত সেরা।’