প্রেক্ষাগৃহে নতুন দুই সিনেমা

‘মাইক’ সিনেমার দৃশ্য। পরিচালকের সৌজন্যে
‘মাইক’ সিনেমার দৃশ্য। পরিচালকের সৌজন্যে

গত ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘প্রিয়তমা ও ‘সুড়ঙ্গ’ এখনো দাপটের সঙ্গে চলছে। প্রযোজকের পাশাপাশি সিনেমা হলের মালিকেরাও ছবি দুটির ব্যবসায়িক সাফল্যে খুশি। দেশের বাইরেও প্রদর্শিত হচ্ছে ছবি দুটি। ঈদের ছবির আলোচনার মধ্যেই গত শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে নতুন দুটি সিনেমা—‘মাইক’ ও ‘গোয়িং হোম’। সরকারি অনুদানের মাইক যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন এফ এম শাহীন ও হাসান জাফরুল বিপুল, ‘গোয়িং হোম’–এর পরিচালক মাশরুর পারভেজ। প্রযোজক ও পরিচালক সূত্রে জানা গেছে, ‘মাইক’ ৯টি ও ‘গোয়িং হোম’ মাত্র ১টি হলে মুক্তি পেয়েছে। ‘মাইক’ এফ এম শাহীনের প্রথম ছবি হলেও ‘গোয়িং হোম’ পরিচালকের দ্বিতীয় সিনেমা।

কিশোর চলচ্চিত্র ‘মাইক’
এফ এম শাহীন এর আগে নাটক বানিয়েছেন। প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। এমন একটি গল্প প্রথম ছবির প্রেক্ষাপট হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বাধীনতার পাঁচ দশক পার হলো, আমাদের জাতির যে জন্মক্ষণ, যে ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা পেলাম, সেটি নিয়ে সেভাবে কেউ চলচ্চিত্র বানাননি। তাই মনে হলো, এই বিষয়টা কীভাবে চলচ্চিত্রের পর্দায় তুলে আনতে পারি। আমার পরিবারের একটি ঘটনা সামনে রেখে গল্পটা তৈরি করা। দেশে ১৯৭৫–পরবর্তী যে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা ছিল, তা প্রজন্মের কাছে তুলে আনতে চেয়েছি। সেটা কতটা পেরেছি, দর্শকেরা দেখার পর বলবেন।’

গত বছরের ৭ মার্চ লক্ষ্মীপুরে ‘মাইক’ ছবির শুটিং শুরু হয়। টানা এক মাস সেখানকার ৮–১০টি লোকেশনে শুটিং হয় বলে জানালেন পরিচালক। ছবিটি প্রসঙ্গে এফ এম শাহীন এ–ও বলেন, ‘অনেক দিন আমাদের দেশে কিশোর চলচ্চিত্র নেই। কিশোরদের নিয়ে ভাবনার জায়গা নেই। এমনিতে কিশোরদের নিয়ে কাজ করাটাও চ্যালেঞ্জিং, আমি তা নিয়েছি।’ ছবিটির প্রথম দিনের দর্শক–সাড়া বেশ ভালো বলেও জানালেন পরিচালক।

ছবি দেখা শেষে সাধারণ দর্শকদের অনেকেও ভীষণ ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। স্টার সিনেপ্লেক্সে ছবি দেখা শেষে এক দর্শকের মন্তব্য, ‘সাধারণ একটা ধারণা আছে, অনুদানের ছবি ভালো লাগবে না। আমার পরিচিত একজন অভিনয় করেছেন বলে এসেছি। এত ভালো মেকিং হবে, বিশ্বাসই করতে পারিনি। এ ছবির অনেক বেশি প্রচার হওয়া উচিত। বাচ্চাদের নিয়ে বাবা–মায়েরা এলেই বুঝতে পারবেন, বেশ গোছানো একটা ছবি। পরিচালক ও সংলাপ রচয়িতার ভক্ত হয়ে গেলাম। অভিনয় যাঁরা করেছেন, তাঁরা তো ভালোই করেছেন।’

‘মাইক’–এর সংগীত পরিচালক লাবিক কামাল গৌরব। শুক্রবার ছবিটি দেখা শেষে বের হওয়ার সময় তিনি বললেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছবিটার পেছনে ব্যয় করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো নিজের করা প্রোডাকশন বড় পর্দায় দেখার সুযোগ হলো, অবশ্যই সেটা বড় একটা আনন্দের জায়গা।’ এই ছবিতে অভিনয় করেছেন ফেরদৌস আহমেদ, তানভীন সুইটি, তারিক আনাম খান, নাদের চৌধুরী, ঝুনা চৌধুরী, রহিম সুমন, ইকবাল হোসাইন, শিশুশিল্পী সানজিদ রহমান খান প্রমুখ।

এক যুবকের গল্প
‘গোয়িং হোম’ ছবিটার প্রেক্ষাগৃহ প্রাপ্তি নিয়ে মনোকষ্ট আছে মাশরুর পারভেজের। অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে যেন ছবিটি মুক্তি পায়। কিন্তু প্রেক্ষাগৃহমালিকেরা সেভাবে সাড়া দেননি। শেষ পর্যন্ত তাই স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখায় মুক্তি দিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।

‘গোয়িং হোম’-এ মাশরুর পারভেজ। ছবি: পরিচালকের সৌজন্যে

কেমন ছিল প্রথম দিন, জানতে চাইলে কোনো ভানভণিতা ছাড়াই মাশরুর বললেন, ‘আমি হয়তো বলতে পারি অনেক কিছুই। কিন্তু মোটেও তা বলব না। হলে অর্ধেক দর্শক ছিল। যত দিন যাবে, হয়তো ততই কমবে। কারণ, ছবিটি নিয়ে সেভাবে প্রচার নেই। তবে যাঁরাই দেখেছেন, তাঁরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। কেউ কেউ তো বলেছেন, আমার নির্মাণ ও গল্পভাবনা ২০ বছর এগিয়ে থাকা।’ এর আগে তিনি ‘রাইয়ান’ নামে একটি চলচ্চিত্র বানিয়েছেন।

চলচ্চিত্র প্রযোজক ও নায়ক সোহেল রানাপুত্রের ‘গোয়িং হোম’–এর মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাশরুর পারভেজ। ছবিটির অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত জাহান, ফাহিম ফারুক ও অতিথি চরিত্রে সোহেল রানা। মাশরুর পারভেজ বলেন, ‘এটা ৯০ মিনিটের ছবি। এ জন্য সিনেপ্লেক্সে মুক্তি দেওয়ার টার্গেট ছিল। এখানে ভালো রেসপন্স পেলে পরে সিঙ্গেল স্ক্রিনে মুক্তি দিতে চাই।’

গল্পের প্রসঙ্গে রাইয়ান চরিত্রে অভিনয় করা মাশরুর পারভেজ জানালেন, আন্ডারওয়ার্ল্ড ও সরকারের মধ্যকার ঘটনা ঘিরে ছবির গল্প। ছবিতে আরও উঠে আসে মাদকের কারণে ক্ষয়ে যেতে থাকা তারুণ্য, প্রিয় বন্ধু ও সাবেক প্রেমিকার সঙ্গে রাইয়ানের সম্পর্কের জটিলতা। মাশরুর পারভেজ বলেন, ‘এই ছবিকে “রাইয়ান”-এর শেষ অংশও বলা যেতে পারে। সিনেমার অনেকটাজুড়েই আমার জীবনের কাহিনি। আমার জীবনের কষ্টটা সিনেমায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আসলে এটা এক যুবকের গল্প। সে তার বাবাকে হারিয়ে ফেলেছে, তাকে খোঁজার গল্প। এর বাইরে ভিন্ন একটা গল্প আছে, সেটা দর্শক হলে গিয়ে জানতে পারবেন।’