‘এমন নয়, আমি মেহজাবীনের হাত ধরে ঘুরছি’

মাকসুদ হোসাইন পরিচালিত ‘সাবা’ সিনেমা নিয়ে আগামী মাসে টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যাচ্ছেন মোস্তফা মন্ওয়ার। তাঁর অভিনীত আরেক সিনেমা ‘মাথার ভেতর আপেলগাছ’-এর প্রিমিয়ার হতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়। মুক্তির অপেক্ষায় আছে আরও চারটি সিনেমা। তাঁর সাম্প্রতিক কাজ নিয়ে লিখেছেন মনজুরুল আলম
মোস্তফা মন্ওয়ার। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
মোস্তফা মন্ওয়ার। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

সাবা সিনেমায় প্রথমবার মেহজাবীন চৌধুরীর সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন মোস্তফা মন্ওয়ার। ‘আমি কিন্তু মেহজাবীনের অভিনয় পছন্দ করি। অনেক কাজ দেখেছি। কিন্তু কখনোই একসঙ্গে অভিনয় করা হয়নি। তিনি কেন ফিল্ম করেন না, সেটা প্রায়ই মনে হতো,’ বলেন মোস্তফা মন্‌ওয়ার। পরে যখন সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হলেন, তখন মেহজাবীনের সিনেমা বাছাইয়ের রুচি দেখেও তাঁর ভালো লেগেছে।

মেহজাবীনের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মোস্তফা মন্ওয়ার বলেন, ‘তিনি খুবই আন্তরিক, চরিত্র বুঝেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। অভিনেত্রী হিসেবে তিনি অনেক ভালো। খুবই সহযোগিতা করেন। আমরা শুটিংয়ের আগে দীর্ঘ সময় রিহার্সাল করতাম। কাজের ফাঁকে আড্ডা হতো। আমরা একসঙ্গে টরন্টো উৎসবে যাব।’ সিনেমায় তাঁদের রসায়ন নিয়ে এই অভিনেতা বললেন, ‘আমরা কিন্তু সিনেমায় তথাকথিত নায়ক-নায়িকা নই। গল্পে আমরা শুধুই বন্ধু। এমন নয় যে আমি মেহজাবীনের হাত ধরে ঘুরছি। আমাদের হাত ধরারও কোনো দৃশ্য নেই। মোর দ্যান ফ্রেন্ড।’

মোস্তফা মন্ওয়ার। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

আগামী মাসে অস্ট্রেলিয়ায় মোস্তফা মন্ওয়ারের আরেক ছবি মাথার ভেতর আপেলগাছ-এর প্রিমিয়ার। এটি তাঁর অনেক পছন্দের কাজ। ২০১৮ সালের দিকে এই সিনেমায় কাজ করেন। অনেক কষ্ট করে শুটিং করতে হয়েছে। অভিনেতার ভাষ্যে, ‘সিনেমাটিকে অদ্ভুত মনে হয়। কারণ, এমন গল্প আমরা দেখে অভ্যস্ত নই। এখানে স্টোরিটেলিং, ফ্রেমিং একদমই আলাদা। সাইকোলজিক্যাল জার্নির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সন্তান, স্ত্রী অসুস্থ। তাদের সুস্থ করানোটা একটা চ্যালেঞ্জ। স্ত্রী–সন্তানকে সুস্থ করতে আমার চরিত্রটাকে পানিপড়া থেকে আপেলপড়া, তাবিজপড়া—সবকিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। গল্পটা বাস্তব একটা ঘটনা থেকেই নেওয়া। আমাদের জীবনে এমন চরিত্র কখনোই করিনি। রাত চারটা থেকে প্রস্তুতি নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিনেমাটির শুটিং করতাম।’

‘মাথার ভেতর আপেলগাছ’ সিনেমার একটি দৃশ্যে মন্ওয়ার ও জয়িতা মহলানবিশ

তাঁর সিনেমা মানেই উৎসব
রেহানা মরিয়ম নূরখ্যাত আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের প্রথম সিনেমা লাইভ ফ্রম ঢাকায় অভিনয় করে সিঙ্গাপুর চলচ্চিত্র উৎসব থেকে অভিনয়ের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন মোস্তফা মন্‌ওয়ার। এর আগে ইতি, তোমারই ঢাকা, পায়ের তলায় মাটি নাই, মেড ইন বাংলাদেশ সিনেমাগুলোও বিভিন্ন উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে। তবে কোন সিনেমা কোথায় যাবে, এটা ভেবে কখনোই অভিনয় করেন না তিনি। মোস্তফা মন্ওয়ার বলেন, ‘আমি তো বেশি অভিনয়ের সুযোগ পাই না। অফিসের ফাঁকে কাজ করতে হয়। কিন্তু আমি ভাগ্যবান, বেশির ভাগ সিনেমা নিজের পছন্দে করতে পারি। যে সিনেমা আমার অভিনয়ের ক্ষুধা পূরণ করতে পারবে, সেগুলোই বেছে নিই। এ জন্য কখনোই তাড়াহুড়ো নেই। আমি অনেক সিনেমা করে সংখ্যা বাড়াতে চাই না। গল্প, চরিত্র দেখে কাজ করি। নতুনত্ব থাকতে হবে। গল্প আমাকে স্পর্শ করতে হবে। কম কাজ করি, যে কারণে গল্প আগে দেখে চুক্তিবদ্ধ হই। পরে আফসোস করতে চাই না।’

‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ ছবির পোস্টারে মন্‌ওয়ার

গল্প ভালো হলে অর্থ কোনো সমস্যা নয়। শুরুর দিকে অনেক কাজ পারিশ্রমিক ছাড়া বা স্বল্প পারিশ্রমিকে করেছেন মোস্তফা মন্‌ওয়ার। কিন্তু এখন আর পারিশ্রমিক ছাড়া কাজ করেন না। তেমন প্রস্তাবও কেউ দেন না। ‘এটা তো সবাই বোঝে, একটা কাজে সময়–পরিশ্রম জড়িত, পেশাগত বিষয়টা বজায় রাখা জড়িত,’ বললেন অভিনেতা। গত মাসে শেষ করেছেন শহীদুল্লা কায়সারের জীবন নিয়ে দিগন্তে ফুলের আগুন সিনেমার শুটিং। এ ছবিতেও তাঁকে মূল চরিত্রে দেখা যাবে। এ ছাড়া ওয়েব সিরিজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে।

‘আমার অভিনীত চরিত্রের মধ্যে এখন পর্যন্ত সেরা ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’র সাজ্জাদ। সাদের পরিচালনায় প্রথম অভিনয়। সাদেরও প্রথম ছবি। সাজ্জাদ চরিত্রের যে পরিসর, সিনেমার যে উপস্থাপনা, চরিত্রায়ণ, গল্প বলার ধরন, ঘটনাপ্রবাহ সাজানো—এগুলো এককথায় চমৎকার ছিল,’ নিজের অভিনীত পছন্দের চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে এভাবেই বললেন মন্‌ওয়ার। চরিত্রটি পছন্দ হওয়ার অবশ্য আরও কারণ আছে। অভিনেতা বললেন, ‘এ ছাড়া গল্পটি আমার শহরের গল্প, শহরের প্রতিচ্ছবি পেয়েছি, ব্যক্তিগতভাবে কানেক্ট করতে পেরেছি; চরিত্রের অনেক স্তর ছিল—সবকিছু মিলিয়েই পছন্দ। এমন চরিত্রের জন্য অভিনেতারা অপেক্ষা করে।’