শুক্রবার দেশজুড়ে ৮৪টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খানের প্রথম প্যান ইন্ডিয়া সিনেমা ‘দরদ’। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বেশ বড় পরিসরের মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। শাকিব খানের এই সিনেমা নিয়ে ভক্তদের উচ্ছ্বাস ও উন্মাদনার কমতি ছিল না। মুক্তির প্রথম দিনে মাল্টিপ্লেক্সে সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড গড়ে সিনেমাটি। সিঙ্গেল স্ক্রিনেও শুরুটা খারাপ ছিল না। কিন্তু দুই দিন না পেরোতেই দর্শক–খরায় ভুগছে সিনেমাটি। শাকিবের সিনেমা দিয়ে যেখানে বাজিমাত করার কথা, সেখানে পুঁজি তোলার শঙ্কায় আছেন সিঙ্গেল স্ক্রিনের হলমালিকেরা।
কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার মধুমতি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে ‘দরদ’। গত শনিবার, সিনেমার দ্বিতীয় দিনে সেখানে গিয়ে বেলা সাড়ে তিনটার শোতে দেখা যায় নিস্তব্ধ নীরবতা। নিচে দর্শকশূন্য থাকলেও ডিসিতে গিয়ে পাওয়া যায় ১২ থেকে ১৫ জন দর্শক।
হলে দায়িত্বরত এক কর্মচারী প্রথম আলোকে জানান, কোনো শোতে আশানুরূপ দর্শক পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে চললে পুঁজি ওঠানো অসম্ভব।
এই জেলার পার্শ্ববর্তী কুলিয়ার উপজেলার রাজ ও আনন্দ—দুই সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে ‘দরদ’। সবশেষ শাকিবের ‘তুফান’ দিয়ে ভালো ব্যবসা করে রাজ সিনেমা। তাই ‘দরদ’ নিয়েও বেশ আশাবাদী ছিলেন তাঁরা। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ফেসবুক ও আশপাশের উপজেলায় মাইকিংয়ে সিনেমাটির প্রচার চালায় হলটি। তবে আশায় গুড়েবালি। সিনেমাটির কোনো শোতেই সাড়া পাচ্ছেন না তাঁরা। হলটির প্রদর্শক কৃষ্ণ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজ সিনেমায় যেকোনো সিনেমা প্রথম সপ্তাহে বেশ ভালোই চলে। আর শাকিব খানের সিনেমা হলে তো কথাই নেই। তবে এই সিনেমার কোনো শোতে আমরা তেমন দর্শক পাচ্ছি না। তিন দিন তো গেল, দেখি বাকি সপ্তাহে কপালে কী আছে।’
সম্প্রতি সিনেপ্লেক্সের যুগে পা রাখল যশোরের ঐতিহ্যবাহী মণিহার সিনেমা হল। হলটিতে মুক্তি পেয়েছে শাকিবের ‘দরদ’। আজ রোববার কথা হয় যশোরের মণিহার সিনেপ্লেক্সের ম্যানেজার ফারুক আহমেদের সঙ্গে। তিনি জানান, শুক্রবার মোটামুটি ভালোই শুরু করেছিল ‘দরদ’, কিন্তু শনিবার থেকেই ছন্দপতন। প্রতিদিন পাঁচটি শো চললেও কোনো শোতেই তেমন দর্শক হচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে শাকিব খানের কোনো ছবিতে মুক্তির প্রথম তিন দিনেই এমন খরা তাঁদের দেখতে হয়নি বলেও জানান তিনি।
নীলফামারী জেলার একমাত্র হল সৈয়দপুরের তামান্না ডিজিটাল সিনেমা। হাজারের বেশি দর্শক ধারণক্ষমতার এ হলটিতে শাকিবের সিনেমা মুক্তি মানেই উৎসব। পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকে দর্শকের ঢল নামে এখানে। সে আশায় সব সময়ের মতো বেশি রেন্টাল দিয়ে শাকিব খানের সিনেমা নিয়েছিল হলটি। তবে অনন্য মামুন পরিচালিত ‘দরদ’, সে আশা পূরণ করতে পারেনি।
হলটির অপারেটর শায়েখ আব্দুর রহমান বলেন, ‘লাভের আশা তো পরে, রেন্টালের টাকাই ওঠাতে পারব না। শনিবার দ্বিতীয় দিনে পাঁচটা শোতে বিক্রি হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। গতকাল রোববার বিক্রি হয়েছে আট হাজার টাকার টিকিট। আর আজ কী বলব, রানিং দুপুর সাড়ে ১২টার শোতে দর্শক মাত্র আটজন। বাকি দিন কেমনে যাবে জানি না। শাকিবের পুরোনো সিনেমা মুক্তি দিলেও এর চেয়ে বেশি বিক্রি হয়।’
সিনেমাটি নিয়ে হলফেরত দর্শক প্রতিক্রিয়া কী? এ প্রশ্নে শায়েখ আব্দুর রহমান বলেন, ‘দর্শক হল থেকে বের হয়ে বলছেন, তাঁরা গল্প বুঝতে পারেন নাই। তবে শাকিব ভাইয়ের অভিনয়ের প্রশংসা করছেন তারা।’
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা সিনেমা হল বেশ আশাবাদী শাকিবের ‘দরদ’ নিয়ে। আজ রোববার প্রথম দুই দিনের মতো সাড়া না পেলেও সিনেমাটিকে সময় দিতে চান হলটির কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম দুই দিন বেশ ভালো সাড়া পেয়েছিলাম। তবে আজ কিছুটা ভাটা। সিনেমাটার দম একটু কম। তবে আমি ভালো সিনেমা সময় দেওয়ার পক্ষে। অন্তত দুই সপ্তাহ না দেখে মন্তব্য করতে চাই না।’
‘দরদ’ সিনেমায় দুলু মিয়া চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান। ফাতিমা চরিত্রে তাঁর নায়িকা বলিউড অভিনেত্রী সোনাল চৌহান। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় রোমান্টিক সাইকো–থ্রিলার ঘরানার সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন অনন্য মামুন। সিনেমার কাহিনি ও চিত্রনাট্যও লিখেছেন তিনি। ছবির প্রযোজক হিসেবে আছেন অশোক ধানুকা, হিমাংশু ধানুকা, কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া ও অনন্য মামুন। সহপ্রযোজক (হিন্দি) হিসেবে আছেন করণ শাহ (ওয়ান ওয়ার্ল্ড মুভিজ)। বিশ্বজুড়ে পরিবেশন করছে অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট।
শাকিব খান ও সোনাল চৌহান ছাড়াও এতে অভিনয় করেছেন পায়েল সরকার, রাহুল দেব, অলোক জৈন, রাজেশ শর্মা, সাফা মারুয়া, ইমতু রাতিশ, তানভীর তারেক, জাকির হোসাইন, ফারহান খান রিও এবং বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী।