গত শুক্রবার বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পেয়েছে ‘এমআর-নাইন: ডু অর ডাই’। সিনেমাটি নিয়ে মুক্তির আগে থেকেই ভক্তদের অনেক আগ্রহ ছিল। কারণ, বড় পর্দায় মাসুদ রানাকে দেখার সুযোগ। এ গল্পের সঙ্গে ভক্তদের শৈশবের আবেগ জড়িত। গত তিন দিনে সেই সিনেমা নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ কেমন, সেটাই আমরা জানার চেষ্টা করেছি।
‘আমাদের বক্স অফিস টার্গেট ৭০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এই আয় আসবে। এর মধ্যে নেট আয়ের টার্গেট ৩০০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে আমরা আমেরিকার একটি ওটিটির সঙ্গে ১০০ কোটি টাকায় স্বত্ব বিক্রির কথা বলে রেখেছি। এ ছাড়া আরও স্বত্ব থেকে এই আয় আসবে। বাংলাদেশের সিনেমা বাজার থেকে আমাদের টার্গেট ৫ কোটি টাকা।’ ‘এমআর-নাইন: ডু অর ডাই’ সিনেমার প্রচারণায় এই কথা বলেছিলেন প্রযোজক আবদুল আজীজ। তিনি জাজ মাল্টিমিডিয়ার স্বত্বাধিকারী।
সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া কেমন, সেটা এবার জানার চেষ্টা করা যাক। ফয়সাল হাসান নামের এক দর্শক গত শনিবার বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্সে সিনেমাটি দেখেন। হল থেকে বের হওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘“এমআর-নাইন: ডু অর ডাই” সিনেমাটি কি আসলেই ‘ধ্বংস পাহাড়’ গল্প থেকে নির্মিত কি না, এটা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ আছে। সিনেমাটি নিয়ে অনেক আগ্রহ ছিল। কিন্তু সিনেমা দেখার পর কিছুটা হতাশ হয়েছি। বইটির যে পাঠক সিনেমাটি দেখবে তাদের চোখে অনেক কিছু ধরা পড়বে। এই সিনেমাকে শুধু হলিউডের সিনেমার সঙ্গে তুলনা না করাই ভালো। বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে এটাকে ভালো সিনেমা বলা যায়।’
বোরহান উদ্দীন নামের একজন সিনেমাটি নিয়ে ফেসবুকের সিনেমা–সংশ্লিষ্ট একটি গ্রুপে লিখেছেন, ‘“এমআর-নাইন: ডু অর ডাই” দেখে সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন মাসুদ রানা চরিত্রে এ বি এম সুমনের বিকল্প নেই। অনবদ্য পারফরম্যান্স করেছেন সুমন। কাজী আনোয়ার হোসেনের জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র মাসুদ রানা হিসেবে বড় পর্দায় হাজির হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। একটু এদিক–সেদিক হলেই সব শেষ। এ বি এম সুমন সেটা হতে দেননি। অসাধারণ অভিনয়দক্ষতায় তিনি ফুল মার্কস পাবেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত ছিলেন।’
বোরহানের স্ট্যাটাসের নিচে মুশফিক নামের একজন মন্তব্যে করেছেন, ‘অভিনেতা এ বি এম সুমনের শরীরের ফ্যাট আরও কম হলে ভালো লাগত। তাঁর আচরণ, শারীরিক ভঙ্গি ভালোই ছিল। তবে সিনেমার ফাইটিং দৃশ্যগুলো খুব স্লো হয়েছে। একই সঙ্গে সাধারণ মানের। মূল গল্পটাও ভালোভাবে দর্শকদের কাছে উপস্থাপন হয়েছে বলেও মনে হয়নি। টেকনোলজিক্যালি বেশ ভালো ছিল। কালার গ্রেডিং ভালো। আরও বেটার আশা ছিল।’ কেউ কেউ এখনো অপেক্ষা করছেন আগামী সপ্তাহে বাংলা সংস্করণটি দেখার জন্য।
সিনেমাটি মুক্তির পর থেকে দর্শকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সিনেমাটি নিয়ে অনেকে প্রশংসাও করছেন। কিন্তু সিনেমা হল পরিচালনা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানা যায়, সিনেমাটি নিয়ে সব হলমালিকদের আগ্রহ ছিল অনেক বেশি। কিন্তু সেই আগ্রহ এখনো পূরণ হয়নি। স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সিনেমাটি নিয়ে অনেক আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু দর্শক কম। এতটা কম হবে, আশা করিনি। এটা আমাদের প্রত্যাশার বাইরে ছিল। আমরা ভেবেছিলাম ঈদের সিনেমার পরে যে দর্শকস্রোত ছিল সেই জায়গায় আমরা আরও দর্শক পাব। এখন আগামী সপ্তাহে দেখা যাক কী হয়।’ গত তিন দিনে সিনেমা হলের ৫০ শতাংশ আসন পূর্ণ হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৫০ ভাগ আসন পূর্ণ হলে তো সিনেমা হিট বলা যেত। তা–ও হয়নি। এটা শুধু আমাদের সিনেমা হলের কথা বলছি।’
২৫ আগস্ট সিনেমাটি বাংলাদেশের ১৮টি সিনেমা হলে মুক্তি পায়। এ ছাড়া কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের ১৫১টি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে। দেশের মধ্যে বেশির ভাগ মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। এমন পাঁচটি মাল্টিপ্লেক্সের দায়িত্ব থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। বেশির ভাগ এখনো অপেক্ষা করছেন হয়তো ভালো দর্শক পাবেন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিনেস্কোপ রয়েছে। এর বক্স অফিস ম্যানেজার মোহাম্মদ রাব্বি বললেন, ‘সিনেমাটি ভালোই, কিন্তু দর্শক অনেক কম। এটা কেন হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। দর্শকদের আগ্রহ কিছুটা কম দেখতে পাচ্ছি। সিনেমা হল থেকে বের হয়েও অনেকে সেভাবে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন না। আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল, সেটা কিছুটা কম।’
এদিকে নাম প্রকাশ না করা শর্তে একটি সিনেমার হলে দায়িত্ব থাকা এক ব্যক্তি বলেন, ‘কেন দর্শক কম, সেটা জানার জন্য পুরো সিনেমাটি আমি দেখেছি। আমার কাছে মনে হলো এখানে অনেক চরিত্র। এই চরিত্রগুলো ধরতেও সময় লাগে। যে কারণে দর্শক সহজেই কানেক্ট করতে পারে না। তারপরও আমাদের আশা ছিল। কারণ, সিনেমাটি নিরাশ করার কথা না। কিন্তু দর্শক কম। সেই অর্থে বলার মতো কোনো অর্থ আমরা সেল দিতে পারিনি।’
একই কথা বললেন আরও দুজন সিনেপ্লেক্সের দায়িত্ব থাকা ব্যক্তি। আর্থিক দিক থেকে তাঁরা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। তাঁরা মনে করেন, বাংলা সংস্করণে সিনেমাটি মুক্তি পেলে দর্শক আরও বেশি পাওয়া যাবে। সেই বাংলা ভার্সনের জন্য তাঁরা অপেক্ষা করছেন।
জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজীজ বলেন, ‘আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। কিন্তু ইংরেজি ভাষা হওয়ার কারণে ঢাকার বাইরের শোগুলোতে কিছুটা দর্শক কম। আমরা আগামী সপ্তাহে বাংলায় সারা দেশে রিলিজ দেব। সব ডাবিং থাকবে। তখন আরও বড় পরিসরে মুক্তি পাবে।’ বিদেশের ১৫১টি হলে সিনেমাটি কেমন চলছে? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে ভালো চলছে। সেখানে আয়ও ভালো হচ্ছে। কিন্তু কত আয়, সেটা এখনো বলতে পারছি না। তবে সিনেমাটি নিয়ে আমরা এখনো আশাবাদী। বাংলা ভাষায় মুক্তি পেলে সিনেমাটি দর্শক দেখবেন।’