চলতি বছর ৫০টির বেশি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, ঢাকাই ছবি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের উল্লেখযোগ্য ভিড় ছিল। অন্যদিকে দেশে ভারতীয় সিনেমা মুক্তি নিয়ে আলোচনা ছিল বছরজুড়েই। ২০২৩ সালে অভিষেকেই আলো ছড়িয়েছেন কেউ আবার শাকিব খানের মতো প্রতিষ্ঠিত তারকা পৌঁছে গেছেন অন্য উচ্চতায়। এ ছাড়া বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার জিতেছে দেশি সিনেমা, বছর শেষে এসেছে নতুন নতুন সিনেমার ঘোষণা। সব মিলিয়ে চলতি বছর চলচ্চিত্র অঙ্গনের হালহকিকত নিয়ে এই প্রতিবেদন।
চলতি বছর মুক্তি পেয়েছে মোট ৫০টির বেশি সিনেমা। এর মধ্যে ব্যবসাসফল হয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি। এর বাইরে মাল্টিপ্লেক্সে হলিউডের ছবির পাশাপাশি এ বছর আমদানি করা সিনেমা ‘পাঠান’, ‘জওয়ান’, ‘টাইগার থ্রি’, ‘অ্যানিম্যাল’, ‘ডানকি’ ও ‘মানুষ’ মুক্তি পায়। গত বছর চলচ্চিত্রের জন্য সামগ্রিকভাবে ভালো ছিল না। কিন্তু ২০২৩ সালে যেমন সিনেমা মুক্তির সংখ্যা বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ব্যবসাসফল ও আলোচিত সিনেমার সংখ্যাও।
ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া শাকিব খান অভিনীত ও হিমেল আশরাফ পরিচালিত ‘প্রিয়তমা’ ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। শুধু দেশে নয়; দেশের বাইরেও সিনেমাটি ব্যবসার দিক থেকে একের পর এক রেকর্ড গড়েছে সিনেমাটি। পরিবেশক সংস্থা স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো জানায়, ব্যবসার নিরিখে উত্তর আমেরিকায় বছরের সেরা বাংলাদেশি সিনেমা ‘প্রিয়তমা’। সিনেমাটির আয় করে ১ লাখ ডলারের বেশি। ঈদে মুক্তি পাওয়া রায়হান রাফীর সুড়ঙ্গও ব্যাপক আলোচনায় ছিল। তবে বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় পরের ছয় মাসে ছবি মুক্তির সংখ্যা কমে আসে। বছরের শেষে রাজনৈতিক অস্থিরতা যার বড় কারণ।
প্রথম ছয় মাসে ৩৩টি সিনেমা মুক্তি পেলেও পরের ছয় মাসে পায় মাত্র ১৭টি। তবে এই শেষ ভাগে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর একটিও হল থেকে মুনাফা তুলে আনতে পারেনি। শেষ ছয় মাসের ছবিগুলোর ব্যবসায়িক হালহকিকত জানতে যোগাযোগ করা হলে স্টার সিনেপ্লেক্সের মিডিয়া ও মার্কেটিং বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঈদে “প্রিয়তমা” ও “সুড়ঙ্গ” প্রদর্শন করে যতটা দর্শক পেয়েছি, সে তুলনায় ঈদের পরের বাংলা ছবিগুলো এর ধারেকাছেও যেতে পারেনি। বলতে গেলে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে মুক্তি পাওয়া কোনো সিনেমাই দর্শক টানতে পারেনি। তবে ১৯৭১ সেইসব দিন ছবিতে দর্শক কিছুটা পেয়েছি। “এমআর-৯” ও “অন্তর্জাল” নিয়ে বড় প্রত্যাশা ছিল। প্রত্যাশার ধারেকাছেও দর্শক টানতে পারেনি ছবিগুলো।’
অন্য উচ্চতায় শাকিব
ব্যক্তিগত জীবনের একাধিক বিতর্কে টালমাটাল ছিলেন ঢাকাই সিনেমার অন্যতম এই শীর্ষ তারকা। তবে চলতি বছর দুই সিনেমা দিয়ে আবার প্রবল দাপটে ফিরেছেন তিনি। বছরের শুরুতে মুক্তি পায় ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’ ছবিটি। তপু খানের এই ছবিটি শাকিব খানকে অন্যভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করে। আর ‘প্রিয়তমা’ দিয়ে তো রীতিমতো চমকে দেন। এই ছবিতে শাকিবের বৃদ্ধ লুকের পোস্টার ভাইরাল হয়। ছবির গান ছিল মানুষের মুখে মুখে। ছবিটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জানায়, এটি বাংলাদেশি ছবির পুরোনো সব ব্যবসায়িক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এ সিনেমার সাফল্যের পর এরপর একের পর এক ছবিতে শাকিবের চুক্তিবদ্ধ হওয়ার খবর আসতে থাকে। এর মধ্যে আছে অনন্য মামুনের ‘দরদ’, হিমেল আশরাফের ‘রাজকুমার’। এ ছাড়া চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন রাফী তুফান ও মেহেদী হাসান হৃদয়ের নাম চূড়ান্ত না হওয়া ছবিতে। আগামী বছর এ চার ছবি মুক্তি পাবে।
শুরুতে নিষ্প্রভ শেষে উজ্জ্বল
নাটক থেকে একটা সময় পরিচালকেরা আরিফিন শুভকে দিয়ে ছবি বানাতে আগ্রহী হন। ২০১০ সালে সেই যাত্রা শুরু। এক যুগের অভিনয়জীবনে কাজ করেছেন একাধিক বড় বাজেটের একাধিক ছবিও। দুই বাংলায়ও তাঁর অভিনয় অভিষেক ঘটেছে।
কিন্তু ক্যারিয়ারজুড়ে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি তিনি, কখনো জ্বলে ওঠেন, আবার কখনো যেন চুপসে যান। বছরের শুরুতে ‘মিশন এক্সট্রিম’-এর সিকুয়েল ‘ব্ল্যাক ওয়ার’ মুক্তি পায়। কিন্তু ছবিটি দিয়ে শুভ সেভাবে সাড়া ফেলতে পারেননি। তবে বছরের শুরুতে নিষ্প্রভ শুভ বছরের শেষ দিকে সব আলো কেড়ে নেন। ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ ছবিতে আরিফিন শুভর অভিনয় প্রশংসিত হয়। ছবিটিতে জাতির জনকের চরিত্রে রূপদান একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল তো বটেই। কিন্তু সে চ্যালেঞ্জ ভালোভাবেই উতরে গিয়েছেন তিনি।
জয়া-বাঁধনের অন্য রকম অর্জন
জয়া আহসান তো অনেক আগে থেকেই ভারতীয় পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করছেন। জয়ার প্রতি পরিচালক ও প্রযোজকদের নির্ভরতা তাঁকে এবার নিয়ে গেছে বলিউডে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর হিন্দি ওয়েব সিনেমা ‘কড়ক সিং’ মুক্তির পর জয়াকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন দর্শক, সমালোচকেরা। ভারতের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমে জয়া-বন্দনা ছিল চোখে পড়ার মতো। এর বাইরে তাঁর অভিনীত পশ্চিমবঙ্গে দুই সিনেমা ‘অর্ধাঙ্গিনী’ ও ‘দশম অবতার’ও সুপারহিট হয়েছে।
চলতি বছর আজমেরী হক বাঁধনও বলিউডে আলো ছড়িয়েছেন। তাঁকে দেখা যায় বিশাল ভারদ্বাজের ওয়েব ফিল্ম ‘খুফিয়া’য়। এই ছবিতে বাঁধন অভিনয় দিয়ে বাজিমাত করেন। বলিউডের পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীরাও বাঁধনে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। দেশ ছাড়িয়ে দেশের বাইরে নিজেদের দাপুটে বিচরণ দিয়ে চলতি বছরটা জয়া ও বাঁধনের অন্য রকম অর্জনের হয়ে থাকল।
অভিষেকেই সাফল্য
ছোট পর্দার তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশো। ভক্তদের চাওয়া ছিল, তাঁকে বড় পর্দায় দেখার। পরিচালক-প্রযোজকেরাও চেষ্টা করেছিলেন, তাঁকে নিয়ে ছবি বানানোর। কিন্তু প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও এ পথে পা বাড়াননি। অনেক ভেবেচিন্তে ‘সুড়ঙ্গ’কেই নিজের অভিষেক সিনেমা হিসেবে বেছে নিলেন। সিনেমার আগে নিজেকে ঝালাই করে নিতে অবশ্য ওয়েব ফিল্ম আর বেশ কয়েকটি ওয়েব সিরিজেও দেখা যায় তাঁকে। দুই দশকের বেশি অভিনয় সঙ্গে যুক্ত থাকা নিশো প্রথম চলচ্চিত্রে সবার প্রশংসা কুড়ান। ‘সুড়ঙ্গ’ সুপারহিট ছবি হয়। আফরান নিশোও তাঁর অভিনয় দিয়ে দর্শকমন জয় করেন।
অভিনয় দিয়ে প্রশংসা কুড়ানো নিশোর কিছু কথাবার্তা বিতর্কেরও জন্ম দেয়। এ ছাড়া ভিকি জাহেদের আলোচিত কাজ ‘পুনর্জন্ম’-এর অন্তিম পর্বেও দেখা যায় তাঁকে। এদিকে ‘সুড়ঙ্গ’ হিট হওয়ার পর আরও নতুন ছবিতে অভিনয়ের খবরে আসবেন, এমনটাই ধরে নিয়েছিলেন ছবিপ্রেমীরা। একাধিক নাম উচ্চারিত হলেও নিশো কিংবা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো চূড়ান্ত কিছু শোনা যায়নি।
তরুণ গায়ক রিয়াদ এ বছরই প্রথম চলচ্চিত্রে গান করে আলোচনায় আসেন। জনপ্রিয় সুরকার প্রিন্স মাহমুদ পরিচয় করিয়ে দেন এ গায়ককে। রিয়াদের গাওয়া ‘ঈশ্বর’ গানটি বেশ সাড়া ফেলে বিনোদন অঙ্গনে। রিয়াদের কণ্ঠ ও গায়কি প্রশংসিত হয় সংগীতাঙ্গনে।
বাংলাতেই বেশি আগ্রহ
বছরটা শেষ হচ্ছে ৫১টি দেশীয় ছবি ও ৬টি ভারতীয় ছবি মুক্তির মাধ্যমে। আলোচনা তৈরি করে ‘ব্ল্যাক ওয়ার’ বছর শুরুতে মুক্তি পেলেও বছরের শেষ বাংলা ছবি শূন্য ছিল দেশের প্রেক্ষাগৃহ। প্রেক্ষাগৃহগুলোতে শূন্যতা পূরণ করতে আমদানি করা হয় ভারতীয় সিনেমা। মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে আমদানি করা এসব হিন্দি ছবি দেখতে ভিড় ছিল। তবে ঢাকার বাইরের সিঙ্গেল হলগুলোতে সেভাবে সাড়া ফেলতে পারেনি কোনো সিনেমাই।
প্রিয়তমা ও সুড়ঙ্গ ছাড়া চলতি বছর মুক্তি পাওয়া সিনেমার মধ্যে আলোচনায় ছিল ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’, ‘জ্বিন’, ‘১৯৭১ সেইসব দিন’, ‘আদিম’, ‘আম কাঁঠালের ছুটি’, ‘সাঁতাও’, অন্তর্জাল’ ইত্যাদি সিনেমা।
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি ছবির দাপট
দেশ ছাপিয়ে বাংলা ছবি চলতি বছর বিশ্ববাজারে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাগৃহে টানা ছয় সপ্তাহ চলেছিল ‘প্রিয়তমা’। ‘সুড়ঙ্গ’ নিয়েও প্রবাসীদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়াতে ‘প্রহেলিকা’ দর্শক বেশ দেখেছেন। শুধু এই তিন দেশ নয়, চলতি বছর ‘প্রিয়তমা’ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি চলেছে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, ইংল্যান্ডেও। এখন প্রযোজকেরা চাইছেন দেশের সঙ্গে একই দিনে বিদেশেই সিনেমা মুক্তি দিতে।
মন্দ-ভালোয় বছর কেটেছে তাঁদের
অনন্ত জলিল ‘কিল হিম’ ছবিটি দিয়ে আলোচনায় ছিলেন। বছরের শুরুর দিকে সিয়াম অভিনীত ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ মুক্তি পায়। এরপর ‘অন্তর্জাল ও ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’-এর বিশেষ চরিত্রে ছিলে। তবে আগের বছরের আলোচনায় থাকলেও চলতি বছরটা সিয়ামের মোটেও অনুকূলে ছিল না। যদিও ওটিটিতে মুক্তি পাওয়া ওয়েব ফিল্ম ‘পুনর্মিলনে’তে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। গত বছর ‘পরাণ’, ‘দামাল’ ও ‘হাওয়া’ আলোচনায় থাকলেও চলতি বছর বড় পর্দায় অনুপস্থিত ছিলেন শরীফুল রাজ।
তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ছিল টালমাটাল। তবে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে তাঁর দুটি কাজ মুক্তি পায়।
ঢাকাই ছবির আরেক নায়ক বাপ্পী চৌধুরীর জন্যও বছরটি মোটেও সুখকর ছিল না। তাঁর অভিনীত সিনেমা শত্রু মুক্তি পেলেও ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়। তুলনামূলকভাবে ছোট পর্দার অভিনেতা হিসেবে পরিচিত অভিনেতা সজলের জন্য বছরটা ছিল স্বস্তির।
দর্শকদের কাছে তিনি ‘জ্বীন’ ও ‘১৯৭১ সেইসব দিন’ দিয়ে প্রশংসা অর্জন করেন। এ ছাড়া আজাদের ‘লোকাল’ ও ‘যন্ত্রণা’ দুটি ছবি মুক্তি পায়। লোকাল ছবির ট্রেলার প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি নজর কাড়লেও পরে জ্বলে উঠতে পারেননি। রোশানের ‘জ্বীন’ ও পাপ’ দুটি ছবি মুক্তি পায়। এর মধ্যে জ্বীন কিছুটা আলোচনায় আসে। নিরবের ক্যাসিনো ও ফিরে দেখা সেভাবে আলোচনায় ছিল না। সাইমন সাদিকের কেবল মুক্তি পায়‘ লাল শাড়ি’ সিনেমাটি।
সিনেমার গানে রেকর্ড
দ্রুত সময়ে সিনেমার গানে রেকর্ড হয় চলতি বছরে। ‘প্রিয়তমা’ সিনেমার ‘ও প্রিয়তমা’ গানটি পাঁচ মাসে অফিশিয়াল তিনটি প্ল্যাটফর্ম থেকে ১৩০ মিলিয়ন ভিউয়ের ক্লাবে পৌঁছে যায়। গানটি গ্লোবাল মিউজিক ভিডিও ট্রেন্ডিংয়ে ৩৫ নম্বরে জায়গা করে নেয়। বালাম ও কোনালের গাওয়া এই গানের কথা লিখেছেন আসিফ ইকবাল, সুর ও সংগীত পরিচালনা আকাশ সেন।
নায়িকাদের যেমন গেল বছরটি
নায়িকাদের মধ্যে পরীমনি, অপু বিশ্বাস, বিদ্যা সিনহা মিম, বুবলী, পূজা, ঐশীদের ছবি মুক্তি পেলেও খুব একটা আলাদা কিছু দেখা যায়নি। দেশের বাইরের অভিনয়শিল্পীর কথা বাদ দিলে সুড়ঙ্গ দিয়ে নজর কেড়েছেন তমা মির্জা। জটিল চরিত্র ‘ময়না’য় তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী প্রতিনিয়ত যেন নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করছেন। নায়িকা শবনম বুবলীর মুক্তি পাওয়া ছবির সংখ্যা চারটি। তবে এর মধ্যে ‘প্রহেলিকা’য় তাঁর অভিনয় নিয়ে কিছুটা আলোচনা হলেও ব্যক্তিগত জীবনের নানা কর্মকাণ্ডের আলোচনাকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি।
এ ছাড়া টালমাটাল ব্যক্তিজীবন ও মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটিয়ে চলতি বছরই শুটিংয়ে ফিরেছেন পরীমনি। চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন একাধিক প্রজেক্টে। তবে পরীমনির আগে শুটিং করা ‘পাফড্যাডি’ নামে একটি ওয়েব কনটেন্ট মুক্তি পায় চলতি বছর।
বিতর্কের বছর
অভিনয় ও ব্যক্তিজীবন—দুই কারণেই সারা বছর ধরে আলোচনায় ছিলেন অপু বিশ্বাস ও শবনম বুবলী। কখনো আকারে-ইঙ্গিতে আবার কখনো সরাসরি এই দুই নায়িকা বিবাদে জড়িয়েছেন। তাঁদের দুজনেরই বিবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন শাকিব খান।
এই দুই নায়িকার কাজের বাইরে ব্যক্তিগত জীবনের নানা বিষয় নিয়ে অন্তর্জালে সরব হয়েছেন, যা নিয়ে বছরজুড়েই নানা বিতর্ক হয়েছে। বছরের শেষে অবশ্য তাঁদের ‘মিটমাট’ হয়েছে বলে শোনা গেছে। এ ছাড়া জায়েদ খানের নানা বক্তব্য, পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর বিভিন্ন বিষয়ে করা মন্তব্য নিয়ে বছরজুড়েই আলোচনা হয়েছে।
নায়িকা যখন নির্মাতা
চলতি বছর তিন নায়িকার তিন নির্মাতা হিসেবে অভিষেক ঘটেছে। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া ৫১ ছবির তিনটির পরিচালক তিন নায়িকা। অরুণা বিশ্বাসের ‘অসম্ভব’, রোজিনার ‘ফিরে দেখা’ ও হৃদি হকের ‘১৯৭১ সেইসব দিন’। তিনটি ছবিই সরকারি অনুদানের। পরিচালনার পাশাপাশি সিনেমাগুলোতে অভিনয়ও করেছেন তাঁরা। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক-টেলিছবি পরিচালনা করেছেন অরুণা বিশ্বাস। সরকারি অনুদান নিয়ে প্রথমবারের মতো সিনেমা পরিচালনায় নামেন তিনি।
হৃদি হক বহুদিন অভিনয় করেছেন। নির্দেশনা দিয়েছেন মঞ্চে। মঞ্চ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সিনেমা পরিচালনায় নামেন কয়েক বছর আগে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে হৃদির পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘১৯৭১ সেইসব দিন’ প্রেক্ষাগৃহে আসে চলতি বছরের আগস্টে। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ছবিটি অভিনয়, কস্টিউম ডিজাইনের কারণে প্রশংসিত হয়।
চলতি বছরেই চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে অভিষেক হয়েছে চিত্রনায়িকা রোজিনার। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নায়িকার ‘ফিরে দেখা’ সিনেমাটি মুক্তি পায় গত ১৬ জুন। এই সিনেমাও মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত। পরিচালনার পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোজিনা। তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এই সিনেমার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর অভিনয়ে ফেরেন ইলিয়াস কাঞ্চন। ১৪ বছর পর জুটি হয়ে অভিনয় করেন ইলিয়াস কাঞ্চন-রোজিনা।
‘বলী’র পুরস্কার জয়
চলতি বছর বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের নিউ কারেন্টস বিভাগে প্রথমবারের মতো পুরস্কার জেতে কোনো বাংলাদেশি সিনেমা। বুসান উৎসবের সেরা হয় ইকবাল হোসাইন চৌধুরী পরিচালিত ‘বলী’ (দ্য রেসলার)। নিউ কারেন্টস বিভাগে দুটি সিনেমাকে পুরস্কার দেওয়া হয়। বলী ছাড়া এ বিভাগে পুরস্কার জিতেছে জাপানের মোরি তাতসুয়ার সেপ্টেম্বর ১৯২৩। দুই সিনেমাই পুরস্কার হিসেবে ৩০ হাজার ডলার পেয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি অনুদানের ছবিটির প্রযোজক পিপলু আর খান।
প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসির উদ্দিন খান। সাগরপাড়ের এক খ্যাপাটে জেলের চরিত্রে দেখা গেছে তাঁকে। আগামী বছর প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা। বলী ছাড়াও বুসান উৎসবের নিউ কারেন্টস বিভাগে জায়গা পেয়েছিল বিপ্লব সরকারের ‘আগন্তুক’ সিনেমাটিও। এ ছাড়া কিম জিসোক বিভাগে প্রতিযোগিতা করছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘অটোবায়োগ্রাফি’।
একনজরে ঢালিউড
মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা: ৫১
আমদানি করা বিদেশি ছবি: ৬টি
হিট: ‘প্রিয়তমা’ ও ‘সুড়ঙ্গ’
আলোচিত: ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’, ‘১৯৭১ সেইসব দিন’, ‘আদিম’, সাঁতাও’
আলোচিত নায়ক: শাকিব খান
আলোচিত নায়িকা: তমা মির্জা
আলোচিত অভিষেক: আফরান নিশো
আলোচিত নির্মাতা: রায়হান রাফী, হিমেল আশরাফ, যুবরাজ শামীম
আলোচিত গান: ‘ও প্রিয়তমা’, ‘ঈশ্বর’