ঢাকাই চলচ্চিত্রের নির্মাতা থেকে শিল্পী, যে-কেউ মারা গেলে এফডিসিতে নেওয়ার একটা অলিখিত রীতি রয়েছে। তবে পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের মরদেহ শেষ পর্যন্ত এফডিসিতে নেওয়া হয়নি। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মারা গেছেন ৬৪ বছর বয়সী এই পরিচালক। এদিন রাতেই টাঙ্গাইলে নেওয়া হয়েছে তাঁর মরদেহ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে স্ত্রীর কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে তাঁকে।
এফডিসিতে না নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ গতকাল রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোহানের মেজ মেয়ের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। মেজ মেয়ে বলেছে, মৃত সোহান এফডিসিতে যাবে না।’ এটি তাঁর মায়ের ইচ্ছা ছিল। সেই ইচ্ছার প্রতি সম্মান রেখেই তাঁরা এই মতামত দিয়েছেন।
পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলেন সোহানুর রহমান। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন গতকাল রাতে সাংবাদিকদের জানান, ধর্মীয় রীতি মেনে দ্রুত সোহানুর রহমানের দাফন করতে চায় পরিবার। রাতেই তাঁর মরদেহ টাঙ্গাইলে নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘পরিবারের মানসিক অবস্থা আমাদের বুঝতে হবে। এফডিসি নিয়ে আবেগের জায়গা আছে, তবু পরিবারের চাওয়াটাকে আমাদের বুঝতে হবে।’
বগুড়ায় জন্ম নেওয়া সোহানুর রহমানের শ্বশুরবাড়ি টাঙ্গাইলে। গত মঙ্গলবার তাঁর স্ত্রী প্রিয়া রহমান মারা যান। গতকাল সকালে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে স্ত্রীকে সমাহিত করে ঢাকায় ফেরেন পরিচালক সোহানুর রহমান। এরপর সন্ধ্যায় উত্তরার বাসায় ঘুমের মধ্যে মারা যান ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার এই পরিচালক। রাতে উত্তরায় তাঁর প্রথম জানাজা হয়েছে। সোহানুর রহমানের মৃত্যুর খবরে চিত্রনায়ক শাকিব খান, রিয়াজ, ফেরদৌস, নিপুণসহ ঢাকাই সিনেমার পরিচালক ও শিল্পীরা তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে যান।
সত্তরের দশকের শেষ ভাগে নির্মাতা শিবলী সাদিকের সহকারী পরিচালক হিসেবে ঢালিউডে আসেন সোহানুর রহমান। ১৯৮৮ সালে ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’ সিনেমা দিয়ে পরিচালনায় নাম লেখান। ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ নির্মাণ করে খ্যাতি পান। চার দশকের ক্যারিয়ারে রোমান্টিক সিনেমা নির্মাণ করে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।
‘অনন্ত ভালোবাসা’, ‘আমার জান আমার প্রাণ’, ‘কোটি টাকার প্রেম’, ‘সে আমার মন কেড়েছে’সহ বহু সিনেমা নির্মাণ করেছেন সোহান। ১৯৫৯ সালের ১৫ অক্টোবর বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ফুলবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন সোহানুর রহমান। বগুড়া ও জয়পুরহাটে স্কুল ও কলেজজীবন শেষে ঢাকায় আসেন তিনি।