কয়েক বছর আগে হিন্দি ছবি আমদানির বিরুদ্ধে প্রদর্শক সমিতি ছাড়া চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট সব সংগঠন আন্দোলন করে। শেষ পর্যন্ত সরকারের সিদ্ধান্তে হিন্দি ছবির আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। কিছুদিন ধরে আবারও হল মালিক সমিতি হিন্দি ছবি আমদানির ব্যাপারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। মন্ত্রী চলচ্চিত্রের সব সংগঠনের অনুমতিক্রমে বছরে ১০টি সিনেমা আমদানির করা যেতে পারে বলে মত দেন।
সম্প্রতি শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ মুক্তির আগেই সারা ভারতে হইচই ফেলে দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশে ‘পাঠান’ আমদানি করা নিয়ে আবারও আলোচনায় আসে দেশে হিন্দি সিনেমা আমদানির বিষয়টা। সম্প্রতি প্রদর্শক সমিতির সহায়তায় অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট নামে একটি পরিবেশক প্রতিষ্ঠান আমদানি-রপ্তানির নীতিমালা মেনে ছবিটি আমদানি করতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। বিষয়টি জানাজানি হলে ‘পাঠান’ নিয়ে চলচ্চিত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখে দেয়। এরপর মন্ত্রণালয়ে আমদানি-রপ্তানি কমিটি মিটিংয়ে বসে। তবে মিটিংয়ে ‘পাঠান’ মুক্তি পাওয়া না–পাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি এখনো। এরই মধ্যে চলচ্চিত্রের সংগঠনগুলো নড়েচড়ে বসেছে।
এ ব্যাপারে সবার আগে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। গতকাল শনিবার দুপুরে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে এ–সংক্রান্ত মিটিংয়ে বসে তারা। মিটিংয়ে কমিটির সদস্যরা ছাড়াও আলমগীর, সুজাতাসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ অভিনেতা অংশগ্রহণ করেন।
প্রায় তিন ঘণ্টা মিটিংয়ের পর শিল্পী সমিতির পক্ষে কথা বলেন সাধারণ সম্পাদক নিপুণ । গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘পরিবেশক ও হল মালিকেরা হিন্দিসহ সব ধরনের ছবি এখানে চালাতে চাচ্ছেন। জ্যেষ্ঠ অনেকে উপস্থিত থাকলেও সোহেল রানা স্যার, সুচন্দা আপারা আসতে পারেননি। তবে তাঁদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি, তাঁরা মতামত দিয়েছেন। এখন শর্তগুলো নিয়ে বাকি ১৮ সংগঠনের সঙ্গে বসব আমরা। এরপর সবার মতামত মন্ত্রী মহোদয়কে জানানো হবে। বর্তমান সিনেমা, সিনেমা হলের পরিস্থিতি বিবেচনা করে কিছু শর্তের বিনিময়ে হিন্দি ছবি আমদানির পক্ষে আমরা।’ তবে শর্তগুলো কী তা গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি। শর্তগুলো নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে আরও ১৮ সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে বলে জানান নিপুণ।
হিন্দি সিনেমা দেশের সিঙ্গেল হলগুলোতে চলার যোগ্য কি না? নাকি শুধুই সিনেপ্লেক্সে চলবে? এক সংবাদকর্মীর এমন প্রশ্নে নিপুণ বলেন, ‘সরকার যে এক হাজার কোটি টাকা লোন দিচ্ছে, ছবির অভাবে অনেকেই তা নিচ্ছেন না। প্রতি মাসে একটি করে হিন্দি ছবি এলে তাঁদের হলগুলো সংস্কারের তাগিদ বাড়বে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে একক হলগুলো আছে, তা ‘পাঠান’-এর মতো ছবি চালানোর মতো পরিস্থিতিতে নেই।’
কলকাতায় ‘পাঠান’–এর কারণে হল পাচ্ছে না বাংলা সিনেমা।
এ ব্যাপারে সরব হয়েছেন কৌশিক গাঙ্গুলি, সাহেব ভট্টাচার্য, অঞ্জন দত্তরা। এদিকে বাংলাদেশের সিনেমার বাজার অনেক ছোট। সে ক্ষেত্রে হিন্দি ছবি আমদানি করলে বাংলা সিনেমা আরও পিছিয়ে পড়বে কি না, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিপুণ বলেন, ‘ আমরা তো সিনেমাই পাচ্ছি না। এতে করে হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাজার আরও ছোট হয়ে যাচ্ছে।
একসময় সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ৩০০। কমতে কমতে তা এখন ঠেকেছে ৬০ থেকে ৬৫টিতে। হিন্দি ছবি আমদানি করার পেছনে আমাদের লক্ষ্য সিনেমা হল বাড়ানো। বন্ধ হলগুলো ফিরিয়ে আনা। এখন একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হিন্দি ছবির মাধ্যমে যদি হলগুলো ফেরার সুযোগ হয়, সেটি হোক সমস্যা তো নেই।’ তাঁর বক্তব্য, কিছু নতুন হল তৈরি হলে পুরোনো হল সংস্কার হলে প্রযোজকেরা সিনেমা বানাতে আগ্রহী হবে। হিন্দি সিনেমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নতুন নতুন সিনেমা তৈরি হবে। তখন দেশি ছবির বাজারও বড় হবে।
এক সংবাদকর্মী নিপুণকে প্রশ্ন করেন, কয়েক দিন আগে আপনি বলেছেন, হিন্দি ছবি আনলে লাভের ১০ ভাগ শিল্পী সমিতিকে দিতে হবে। এসব কথা শুনে চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলেছেন, এটি অযৌক্তিক। কী বলবেন? উত্তরে এই নায়িকা বলেন, ‘যাঁরা বলছেন অযৌক্তিক, তাদের কাছে এটি হতেই পারে। কিন্তু এখানে বসে আমার মনে হচ্ছে, এই যে এত বড় একটি বাজার এখানে খুলে দেওয়া হচ্ছে, সেটির সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে। টিকে থাকার জন্য আমার কিছু ফাইন্যান্স লাগবে, ঢাল–তলোয়ার লাগবে। সেটার জন্য আমার কিছু চাওয়া ছিল। ১৮ সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে, আমরা কী চাচ্ছি, কী চাচ্ছি না, কী হবে, কী হবে না, তা পরিষ্কার করব।’
সাবেক সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান আপনার এই ১০ ভাগ চাওয়াকে চাঁদাবাজি বলেছেন।
এ ব্যাপারে নিপুণ বলেন, ‘ চাঁদাবাজি তখনই হবে যদি টাকা আমি আমার ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখব। কিন্তু এই টাকা তো আমার শিল্পী সমিতির অ্যাকাউন্টে আসবে। সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর আমি এরই মধ্যে আমি পিকনিক ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছি। এসব অনুষ্ঠান করা থেকে সবাই প্রমাণ পেয়েছেন, আমি এখানে কিছু নিতে আসিনি, দিতে এসেছি।’