ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জটিল হচ্ছে ঈদের সিনেমার হিসাব–নিকাশ। এক দিকে সীমিত হল, অপর দিকে প্রথম সারির একাধিক তারকার সিনেমা—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, ঈদের সিনেমা নিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতা হবে। একাধিক প্রযোজক ও পরিচালক জানান, তাঁরা কেউই সিনেমা মুক্তি থেকে সরে আসতে চান না। সব মিলিয়ে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সিনেমা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
ঈদের সিনেমা নিয়ে শেষ মুহূর্তের শুটিংয়ে ব্যস্ত ‘কিল হিম’ সিনেমার প্রযোজক ও পরিচালক ইকবাল। বর্তমানে তিনি সিনেমার নায়ক–নায়িকা অনন্ত–বর্ষা দম্পতিকে নিয়ে কাশ্মীরে গানের শুটিংয়ে রয়েছেন। রোজার শুরুতেই শাকিব খান ও জাহারা মিতুকে নিয়ে ‘আগুন’–এর শেষ তিনটি গানের শুটিংয়ে নামবেন বদিউল আলম। অন্যদিকে সিয়াম ও বিদ্যা সিনহার ‘অন্তর্জাল’ সিনেমার সব কাজ শেষ করেছেন দীপঙ্কর দীপন।
ঈদে মুক্তির জন্য শিগগির সিনেমাটির সেন্সরে যাওয়ার কথা। পরিচালক দীপঙ্কর দীপন বলেন, ‘এখন আমাদের টিম পরিবেশকদের সঙ্গে কথা বলছে। সব চূড়ান্ত হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে প্রচারে আসব। মুক্তির এই সিদ্ধান্ত পেছাব না।’
গত দুই বছর করোনার কারণে ঘোষণা দিয়েও শেষ মুহূর্তে সিনেমা মুক্তি থেকে সরে আসেন প্রযোজকেরা। কিন্তু এবার ঝুঁকি নিয়েই ছবি মুক্তি দিতে চান প্রযোজকেরা।
যেমনটা বললেন ‘লাল শাড়ি’র পরিচালক বন্ধন বিশ্বাস, ‘আমরা ঈদেই মুক্তি দেব। অপু বিশ্বাসের সঙ্গে আমার টিমও সিনেমাটির হল বুকিংসহ মুক্তিসংশ্লিষ্ট কাজগুলো নিয়ে এগোচ্ছে। শুনছি, অনেক ছবি মুক্তি পাবে। সেটা নিয়ে ভাবছি না। আমরা মাল্টিপ্লেক্সের জন্য ছবিটি বানিয়েছি। সেভাবেই পরিকল্পনা করে এগোচ্ছি।’
জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রধান নির্বাহী আলিমুল্লাহ খোকন বলেন, ‘ঈদে আমাদের দুটি সিনেমা মুক্তি পাবে। এখন পর্যন্ত এটাই চূড়ান্ত হয়েছে।’
গত ঈদুল ফিতরে ‘গলুই’ নিয়ে দর্শকের সামনে হাজির হয়েছিলেন শাকিব খান। প্রস্তুত থাকলেও এর মধ্যে শাকিবের কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি।
এবার ঈদে শাকিব দুই ছবি নিয়ে হাজির হবেন। এর মধ্যে একটি ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’–এর প্রযোজক আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সিনেমাটি ঈদে মুক্তি পাবে। সেভাবে সবকিছু প্রস্তুত রয়েছে।’ সিনেমাটির পরিচালক তপু খান বলেন, ‘আমরা প্রযোজনাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সিনেমাটির প্রচারে যাব। সিনেমাটি দর্শক ঈদেই দেখবেন। আমরা অন্য কোনো দুশ্চিন্তা করছি না।’
কিন্তু কিছু সূত্র বলছে, ঈদে শাকিব খান আর আগের মতো একক আধিপত্য ধরে রাখতে পারবেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বড় প্রযোজনাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা সিনেমা মুক্তি দেব। আমাদের পরিচিত হলগুলোয় অন্য কারও সিনেমা চালাতে দেওয়া হবে না। সে যেই হোক।’
মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে বাপ্পী ও জাহারা মিতুর ‘শক্র’, সজল ও পূজা চেরির ‘জ্বিন’, রোশান ও ববির ‘পাপ’, আরিফিন শুভ ও জান্নাতুল ঐশীর ‘নূর’। নূর সিনেমার পরিচালক রায়হান রাফি বলেন, ‘ঈদে আমার একটি সিনেমা মুক্তি পাবে। সেটা ‘নূর’ কি না, এখনই বলতে পারছি না।’ সব মিলিয়ে ঈদে এখন পর্যন্ত আটটির বেশি সিনেমা মুক্তি তালিকায় রয়েছে। অথচ এই মুহূর্তে সারা দেশে ৪০/৪৫টি মতো হল চালু রয়েছে। ঈদে এই সংখ্যা বড়জোর ১৫০ হবে।
গত দুই বছর করোনার কারণে ঘোষণা দিয়েও শেষ মুহূর্তে সিনেমা মুক্তি থেকে সরে আসেন প্রযোজকেরা। কিন্তু এবার ঝুঁকি নিয়েই ছবি মুক্তি দিতে চান প্রযোজকেরা।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা আলাউদ্দীন মিয়া বলেন, একসঙ্গে এত সিনেমা গত ২০ বছরেও কোনো ঈদে মুক্তি পায়নি। সিনেমার অবস্থা এমনিতেই ভালো না। পরিকল্পনা করে সিনেমাগুলো মুক্তি দেওয়া দরকার। সব সিনেমা মুক্তি পেলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।
গত বছর ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’ ঢালিউডে সুবাতাস বইয়ে দিলেও সেই হাওয়া আর অন্য কোনো সিনেমায় লাগেনি। গত সাত–আট মাসে নিয়মিত সিনেমা মুক্তি পেলেও কোনোটাই আর লাভের মুখ দেখেনি।
চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, ঢালিউডের দুঃসময়ে ঈদই ভরসা, যে কারণে শেষ পর্যন্ত সবাই চাইবেন, ঈদে সিনেমা মুক্তি দিয়ে দুই–তিন সপ্তাহে বিনিয়োগ তুলে আনতে।