জয়াদের বাড়িতে এবার যোগ হয়েছে ঈদের বাড়তি আনন্দ। এর কারণ, পরিবারের সবাইকে নিয়ে সারাক্ষণ মেতে উঠছেন এই অভিনেত্রী। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গালগল্প আর আড্ডা দিয়েই সময় কেটে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে ভাই এসেছেন, যে কারণে মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ যেন বহু গুণ বেড়ে গেছে। এ নিয়ে জয়ারা মাকে খেপানোর চেষ্টা করছেন। সন্তানদের মধুর এক যন্ত্রণা ‘সহ্য’ করতে হচ্ছে মাকে। এর সঙ্গে নতুন নোটের ঈদ সালামি তো আছেই।
জয়া আহসানের ভাই অদিত মাসউদ থাকেন লন্ডনে। ঈদ করতে ঢাকায় এসেছেন তিনি। ভাইকে পেয়ে ঈদের আনন্দ যেন পরিপূর্ণ। জয়া বলেন, ‘বড় হলে নাকি ঈদের আনন্দ থাকে না। এ কথার সঙ্গে আমি একমত নই। ঈদ এখনো আমার অনেক ভালো লাগে। সেই আগের মতোই এখনো আড্ডা দেওয়া হয়, নানাবাড়িতে যাওয়া হয়, বাসায় অনেকেই আসেন, তাঁদের সঙ্গে সময় কাটে। আমি সেই আগের মতোই ঈদের আনন্দ পাই। যে কারণে সব সময়ই চেষ্টা করি ঈদ ও বৈশাখের সময়গুলোয় দেশে থাকার, পরিবারের সঙ্গে কাটানোর।’
এর আগের ঈদগুলোয় পরিবারের প্রায় সবাই আনন্দ করলেও এই অভিনেত্রীর মা পেশাগত কাজে ব্যস্ত থাকতেন। জয়া আহসানের মা রেহানা মাসউদ আমেরিকান স্কুলে চাকরি করেন। বিদেশি প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে ছুটি মেলানো কঠিন হয়ে যায়। মায়ের সাধারণ ছুটির সঙ্গে আবার তাদের ছুটি মেলে না। তবে এবার ঈদে সবার ছুটি মিলে গেছে। এতে আনন্দ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে মায়ের ব্যস্ততাও। আজ শনিবার সকালে গিয়েছেন পরিবারসহ নানাবাড়িতে।
জয়া বলেন, ‘নানাবাড়িতে গিয়ে এখনো খুব ভালো সময় কাটে। প্রথমত, মায়ের সঙ্গে আসি। মামাবাড়ির আত্মীয়স্বজন সবার সঙ্গে দেখা হয়। এসব সম্পর্ক আমি খুব মিস করি। হয়তো ব্যস্ততার জন্য নিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ হয় না। কিন্তু সবাইকে নিয়েই তো আমরা।’ একসময় মামাবাড়িতে গেলে চকচকে নতুন টাকার সালামি পেতেন। এখন কি জয়া সালামি পান? এমন প্রশ্ন শুনে জয়া অবাক হয়ে বলেন, ‘কী যে বলেন....!’
এই অভিনেত্রী বলেন, ‘পাব না মানে, কী বলেন! এখন তো আরও বেশি পাই। আগে তো ৫০ টাকা নিয়েই খুশি থাকতে হতো। এখন নানাবাড়ি, আরও আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি, যেখানেই যাই, সালামি পাই। আর এখন কিন্তু ৫০ টাকা কেউ দেয় না। যে–ই সালামি দিক, খাম গুঁজে দেয় হাতের মধ্যে। পরে খাম খুলে দেখি, পাঁচ/ছয় হাজার টাকার নিচে কেউ সালামি দেয়নি। সালামি পেতে এখনো সেই আগের মতোই ভালো লাগে। আবার আগে তো সালামি শুধু পেতাম। এখন বড় হয়ে যাওয়ার কারণে ছোটদের সালামি দিতে হয়। এটাও অনেক মজার।’
যুক্তরাজ্য থেকে ভাই আসার পর জয়াদের রান্নায় নাকি এসেছে পরিবর্তন। খাবারে স্বাদ নাকি আগের চেয়ে বেড়েছে, মজা করেই বলেন এই অভিনেত্রী। এটা নিয়ে সুযোগ পেলেই মাকে ইচ্ছেমতো জ্বালাতন করার চেষ্টা করছেন তিনি। জয়া বলেন, ‘এখন মায়ের সব ভালোবাসা ছেলের জন্য বেড়ে গেছে। এটা বোঝা যাচ্ছে আমার মায়ের রান্না দেখে। মা ভাইয়ের ওপর বেশি জোর দিয়েছেন। যে কারণে সব খাবারের স্বাদ বেড়ে গেছে। এগুলো মাকে বলতে ছাড়ছি না। সুযোগ পেলেই বলছি, কী আম্মু, এখন খাবারের এত স্বাদ কোথা থেকে হলো, ছেলের জন্য?’ কথাগুলো বলেই হাসতে থাকেন জয়া।
এটা নিয়ে এই অভিনেত্রীর মা পড়েছেন মধুর যন্ত্রণায়। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে মায়ের ভালোবাসা সব সন্তানের জন্য সমান। তারপরও সব বুঝে অভিনেত্রী মেয়ের প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। আপনার মা তখন কী বলেন? এ প্রশ্নের উত্তরে জয়া বলেন, ‘আমাকে নিয়েও ছোট বোনের অভিযোগ আছে। আমি যখন শুটিং করে দেশে ফিরি, তখন আমার বোন অভিযোগ করে, আমি এলে নাকি মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ বেড়ে যায়। এখন ভাইয়া আসায় আমি যখন বলছি, মা, রান্নার স্বাদ কীভাবে এতটা বেশি হলো, ভাইয়াকে বেশি ভালোবাসো এই জন্য? তখন মায়ের আসলে হাসি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। ছেলেমেয়েদের নিয়ে মা এক মধুর যন্ত্রণায় পড়েছেন। (হাসি)’
ঈদের আগে থেকে নাকি শুধু পছন্দের খাবার নিয়েই অনেকটা সময় কেটে যাচ্ছে। বেশি খেতে খেতে নাকি ওজনই বেড়ে গেছে। ভাগ্যিস ঈদের পর কোনো সিনেমার ধারাবাহিকতা ছিল না। থাকলে আবার ওজন কমাতে হতো সেই চরিত্রের জন্য। এতটাই ওজন বেড়ে গেছে, হেসে কথাগুলো বলেন দুই বাংলার এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী। পছন্দের কী খাবার রান্না করে খাওয়ালেন অন্যদের? এমন প্রশ্ন শুনে চুপ জয়া। ততক্ষণে কি তাহলে মনে করার চেষ্টা করছেন, কী কী রান্না করেছেন?
মোটেই তেমন কিছু ভাবেন না। সেটা জয়ার মুখেই শুনি, ‘এ ব্যাপারে আমি না পরিবারের ব্ল্যাকশিপ। মা–বোনেরা রান্না করে, আমি কিছুই করতে পারি না, পারি না বলতে করা হয় না। আসলে সবাই রান্না করলে খাবেটা কে? আমি তাই খাওয়ার দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছি। এখন বোঝেন কেন ওজন বাড়ছে।’
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ব্যস্ততা, ঘোরাঘুরির পরও নিয়মিত সবার আগে বাসার ছাদবাগানে যেতে হয়। সকালে সবার আগে ছাদবাগানে যাওয়া চাই। গাছের যত্ন নেওয়াটা দীর্ঘদিনের অভ্যাস জয়ার। দেশ–বিদেশের নানা রকম পছন্দের গাছ এই অভিনেত্রীর ছাদবাগানে। স্ট্রবেরি, ডাঁটা, বেগুন, পেয়ারাসহ কত কী! অস্ট্রেলিয়া থেকে কিছু চারা এনেছিলেন। সেই স্কোয়াশ গাছ থেকে চারা উঠিয়েছেন জয়া আহসানের মা। এখন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চারাটিকে বাঁচিয়ে রাখার। কারণ, ঠান্ডা ছাড়া এ গাছ হয় না। ছাদে গেলে এদিকেই জয়ার নজর কিছুটা বেশি থাকে।
জয়া বলেন, ‘এখনো আমাকে কেউ কোনো উপহার দিতে চাইলে সবার আগে বলি গাছের চারা দিতে। আর আমি সময়–সুযোগ পেলেই বিদেশ থেকেও প্রচুর গাছ নিয়ে আসি। ভারত থেকে এর আগে পেয়ারাগাছের চারা নিয়ে এসেছিলাম। এয়ারপোর্টে সেটা দেখে অনেকেই হাসাহাসি করে বলছিলেন, দেশে কি মাটি নেই? তখন বলতে হয়েছে, মাটি আছে কিন্তু বিদেশি জাতের এই পেয়ারাগাছ নেই। গাছের সঙ্গে ছাদবাগানের আমার অনেক ভালো সময় কাটে।’
এদিকে গতকাল প্রকাশ পেয়েছে কোক স্টুডিওর তৃতীয় সিজনের প্রথম গান। গানটি নিয়ে জয়া বলেন, ‘প্রথম এমন আয়োজনের অংশ হওয়া। এটি একটি উৎসবের গান। এর মধ্য দিয়ে দেশের জামদানিকে প্রোমোট করা হয়েছে। জামদানি আমাদের অমূল্য সম্পদ। এ ছাড়া বৈশাখ উপলক্ষে গানটি করা। বৈশাখ আমাদের অসাম্প্রদায়িক বড় আয়োজন। এই আয়োজনকে যেন বড় পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সেই চেষ্টায় অংশ নিতে আমি সব সময় ইচ্ছুক। যে কারণে চৈত্রসংক্রান্তির অনুষ্ঠানেও গতকাল অংশ নিয়েছি।’
ঈদ, বৈশাখের সময়গুলো ভালো কাটলেও শিগগিরই আবার ব্যস্ত হচ্ছেন অভিনয়ে। জানা গেছে, আশফাক নিপুণের ওয়েব সিরিজ ‘জিম্মি’তে দেখা যাবে জয়াকে। তবে আপাতত তিনি ভারতের পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর নতুন সিনেমার জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়াচ্ছেন। ঈদের ছুটি শেষ হলেই ভারতে ছুটতে হবে জয়াকে।