ভারতের একটি গণমাধ্যমে আফরান নিশোকে প্রশ্ন করা হয়, ‘দিনকয়েক আগেই আপনি বলেন, “আপনি বউ-বাচ্চা লুকিয়ে রাখার মতো নায়ক নন। ইঙ্গিত কি বিশেষ কারও দিকে?”’—এমন প্রশ্নের উত্তরে নিজের দর্শনের কথা বলেছেন নিশো। এবার এই প্রশ্নের প্রসঙ্গে টেনেছেন দুই সহকর্মী ও বন্ধু চিত্রনায়ক নিরব ও ইমনের ব্যক্তিজীবন। সেই বক্তব্যে ইমন চুপ থাকলেও নিরব হঠাৎ ফেসবুক স্ট্যাটাসে কেন উত্তেজিত?
আনন্দবাজারে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিশো হেসে বলেছেন, ‘আমি আমার দর্শনের কথা বলেছি। দর্শনে সংঘর্ষ আসতে পারে। আমি বিবাহিত হলে সবাইকে বলেই দেব। হয়তো আমার স্ত্রীকে সর্বদা প্রকাশ্যে আনব না। তবে লুকিয়েও রাখব না। ব্যক্তিজীবনকে লুকিয়ে রাখায় বিশ্বাসী নই। আমার বন্ধু নিরব, ইমন ব্যক্তিজীবনকে অন্তরালে রেখেছেন। সেটা তাঁদের ক্যারিয়ারে যে খুব সাহায্য করেছে, এমনটা নয়। সুপারস্টার, মেগাস্টার যা-ই হোক না কেন, তাঁর সবটা মিলিয়ে দর্শক তাঁকে অনুসরণ করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘হিরো ও অভিনেতার মধ্যে বৈষম্য তৈরি করাটা আমার দর্শনে অনুমতি দেয় না। কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গায়ে মাখেন, সেটা দুর্ভাগ্যজনক।’
অনলাইনে এটি প্রকাশের পর গতকাল বৃহস্পতিবারই বন্ধু নিশোর মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন নিরব। নিরব উল্টো স্ট্যাটাসে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘নিশো কবে বিয়ে করেছে বা তার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে কবে প্রকাশ্যে এসেছে? বন্ধু হয়ে আমি তো কখনো দেখিনি! তাহলে ব্যক্তিগত জীবন অন্তরালে কে রেখেছে, আমি নাকি নিশো?’ শুধু তা–ই নয়, নিশোর কাছে নিরবের প্রশ্ন, ‘আমি ব্যক্তিগত জীবন কবে অন্তরালে রেখেছিলাম?’ পরে তিনি প্রতিবাদ করে লিখেছেন, ‘বন্ধু হিসেবে নিশোকে বলতে চাই, তুই আমাকে নিয়ে এমন মন্তব্য কেন করলি? আমি তোর এ ধরনের খোঁচা মারা মন্তব্য একদমই পছন্দ করলাম না। সংবাদকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা, যাঁরা আমাকে পছন্দ করেন, তাঁরা আমার বিয়ে, বউ ও সন্তানের বিষয়টি ভালোভাবে অবগত। আমার ব্যক্তিজীবনের প্রায় প্রতিটি বিশেষ ঘটনা সংবাদকর্মীরা যত্নসহকারে দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন।’
নিবর কি আসলেই বিয়ে বা সন্তানের প্রসঙ্গে কোনো কথা লুকিয়েছেন? একটু ঘুরে আসা যাক। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রথম আলো অনলাইনের শিরোনাম, ‘নীরবে নিরবের বিয়ে।’ ১০ মাস প্রেমের পর সেই বছর ২৬ ডিসেম্বর তাঁরা বিয়ে করেন। সেটা চার দিন পর গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। বিয়ে নিয়ে এটুকুই গোপন করেছেন বলা যায়। এর কারণ হিসেবে পরে নিরব গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, ‘প্রেম করে বিয়ের কারণে তেমন কাউকে জানাতে পারেনি। শুধু ঘনিষ্ঠ হাতে গোনা কয়েকজন বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন।’
পরে বাবা হওয়ার খবরও নিরব গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হওয়ার খবরে তিনি ফেসবুকে ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে লিখেছিলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, দ্বিতীয়বারের মতো সন্তানের বাবা হয়েছি আমি। আজ আমার মেয়ের বয়স ১৯ দিন। আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন সবাই।’ সন্তান ও স্ত্রীর ছবি দিয়ে সেই খবর প্রকাশ পেয়েছে।
তবে বিয়ে প্রসঙ্গ লুকিয়েছিলেন নিশোর বন্ধু চিত্রনায়ক ইমন। ২০০৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মামনুন ইমন বিয়ে করেন আয়েশা ইসলামকে। বিয়ের পর দিব্যি স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে সংসার করে গেলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা গণমাধ্যমে তা প্রকাশ করেননি। সাংবাদিক কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষীদের কেউ জিজ্ঞেস করলেও সে সময় বিয়ের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতেন। অবশেষে বিয়ের সাত বছর পর বিয়ের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তত দিনে ইমনের সংসারে সামিন ও শায়ান নামের দুই সন্তান জন্ম নিয়েছে। তবে কেন বিয়ের প্রসঙ্গ গোপন রেখেছিলেন, সেটা নিয়ে ইমন সেই সময় গণমাধ্যমে বলেন, ‘ওই সময়টায় আমি সবে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেছি। চলচ্চিত্রজগতের কিছু মানুষ আমাকে বিয়ের খবর প্রকাশ না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। নিজের ক্যারিয়ারের ক্ষতি হতে পারে, এমন আশঙ্কায় আমিও তখন এ বিষয় আর প্রকাশ করিনি। এ ছাড়া আয়শা নিজেও পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। ও নিজেও বিয়ের খবরটি প্রকাশ করার পক্ষে ছিল না।’
গত মাসে ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার প্রচারণায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে নিশো বলেছিলেন, ‘আমি এমন নায়ক নই, যাকে বিয়ে করে বউ এবং সন্তানকে লুকিয়ে রাখতে হয়।’ তার পর থেকেই ভক্তরা এই বক্তব্যের নানা সমীকরণ মেলাতে থাকেন।