স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘দামাল’ ছবির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম
স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘দামাল’ ছবির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম

দৃশ্যটি করার সময় চেহারায় হিংস্র ভাব আনতে হয়েছে...

“‘পরাণ” ছবিতে অনন্যাকে দর্শক একভাবে পেয়েছে। ছবিটি দেখে চরিত্রটির জন্য দর্শক আমাকে গালি দিয়েছেন। গালিই আমার জন্য আশীর্বাদ মনে করেছি। চরিত্রটি যেমনই হোক, দর্শককে নাড়া দিতে পেরেছি আমি। “দামাল” ছবিতে দর্শক আমাকে আরেকভাবে পাবেন। এবার গালি নয়, তালি দেবেন,’—বলছিলেন বিদ্যা সিনহা মিম। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘দামাল’ ছবির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সামনে এ কথা বলেন তিনি। ছবিটি ২৮ অক্টোবর দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে।
‘দামাল’ ছবিতে হাসনা চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিম। নিজের অভিনীত চরিত্রটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মুক্তির প্রায় তিন মাস পার  করছে “পরাণ”। ছবিটি এখনো ভালোভাবেই চলছে। “দামাল”-এর গান, ট্রেলার মুক্তির পর দর্শকের যে আগ্রহ দেখেছি, এ ছবিটিও একইভাবে দর্শকের মধ্যে আলোড়ন তুলবে আমার বিশ্বাস।’
এক যুগের বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন মিম। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করেন, ‘পরাণ’ ছবি দিয়ে দ্বিতীয় জীবন পেয়েছেন তিনি।

বিষয়টি তুলে ধরে অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী আরও বলেন, “‘পরাণ” আমাকে নতুনভাবে এগিয়ে যেতে শিখিয়েছে। “দামাল” করে যতটুকু বুঝেছি, এ ছবিটি আমাকে আরও এগিয়ে। বিশ্বাস রাখেন, মুক্তির পর দর্শকের কাছে আরেকটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু তৈরি হবে ছবিটি।’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘দামাল’ ছবির মিট দ্য প্রেসের আয়োজন করা হয়

ছবির ট্রেলারের শেষে মিমের ভয়ংকর রূপ দেখা যায়। পর্দায় দেখানো না হলেও বোঝা গেছে, একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারা শেষে চরম হিংস্রতায় তার ওপর থুতু ছুড়ে মারছেন। দৃশ্যটি সম্পর্কে জানতে চাইলে মিম বলেন, ‘এটি আমার জন্য করা অনেক কঠিন ছিল। পরিচালক রাফি ভাইয়ের কারণে সম্ভব হয়েছে। কারণ, দৃশ্যটি করার সময় চেহারায় খুবই হিংস্র ভাব আনতে হয়েছে। কয়েকবার চেষ্টা করেও পারছিলাম না। রাফি ভাই বারবার বলছিলেন, ‘‘মিম তুমি ভেবে নাও  যাকে মারছ, সে তোমার সত্যিকারের শত্রু, তোমার জীবনটা তছনছ করেছে। তুমি তার ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছ।’ এরপর কয়েকবারের মাথায় ঠিকই দৃশ্য তুলে আনতে পেরেছি। যেটি ট্রেলার দেখে দর্শক প্রশংসা করেছেন।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিচালক রায়হান রাফি, অভিনেতা ইন্তেখাব দিনার, সিয়াম, শরীফুল রাজ, মামুন অপু, রিপন নাথ প্রমুখ।
বক্তব্য দিতে গিয়ে রায়হান রাফি কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। কথা বলতে বলতে চোখ মুছতে দেখা গেছে তাঁকে।

সিয়াম আহমেদ

শুটিংয়ের দিনগুলোর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আগে রোমান্টিক ছবি, রাজনৈতিক ছবি নির্মাণ করেছি কিন্তু ফুটবল নিয়ে বা কোনো খেলা নিয়ে শুটিং করিনি। খেলার শুটিং যে এত কঠিন, আমার জানা ছিল না। শুটিংয়ের একপর্যায়ে ভেবেছিলাম, শেষ করতে পারব না। কোনো কোনো দিন সিয়াম, রাজরা শুটিং করতে করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, অনেক সময় শুটিংয়ে তাঁদের বমি করতেও দেখেছি। আমি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। কী যে একটা অবস্থার মধ্যে আমাদের দিন গেছে, বলে বোঝাতে পারব না। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও মাথায় একটা জিনিসই কাজ করেছে, গল্প স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, মুক্তিযুদ্ধ—এ ছবির কাজ আমাকে শেষ করতেই হবে। এবং আমি তা পেরেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কষ্ট করেছি কিন্তু আমি ইতিহাসের একটা অংশ হতে পেরেছি। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের উপজীব্য করে সিনেমাটি করেছি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটা অংশ এই ফুটবল দল। এই ছবিটি আমার চলচ্চিত্র জীবনে একটা আর্কাইভ হয়ে থাকবে।’

শরীফুল রাজ ও মিম

শুটিংয়ে এক দিনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে সিয়াম বলেন, ‘মাঠে খেলার অনুশীলনের শটগুলো দুপুর থেকে শুরু হতো। টানা তিন-চার ঘণ্টা চলত। গরমে, রোদে বিপর্যস্ত হয়ে যেতাম। শেষে মাঠে অনেকক্ষণ শুয়ে থাকতাম। শরীর আর চলত না। একদিন অনুশীলনের সময় দৌড়াচ্ছি, কোচের নির্দেশ না বলা পর্যন্ত থামা যাবে না। দৌড়ানোর একটা পর্যায়ে আমি ও রাজ রীতিমতো বমি করছিলাম। তা–ও দৌড় থামাইনি।’
‘হাওয়া’ ও ‘পরান’ ছবিতে অভিনয়ে করে রাজ এখন দারুণ ছন্দে। একই সময়ে হলে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ থেকে সেই ছন্দ পাননি সিয়াম। এবার ‘দামাল’ ছবিতে একই সঙ্গে সিয়াম ও শরীফুল রাজকে দেখা যাবে।

চাপ আছে কি না—সিয়ামের কাছে এক সংবাদকর্মীর এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘২০১৩-১৪ সালের দিক থেকেই আমাদের দুজনের বন্ধুত্ব। ওই সময় রাজ র‌্যাম্পে কাজ করে, আমি টুকটাক মডেলিং করি। সেই স্ট্রাগলের সময় থেকেই আমরা পরস্পরকে চিনি। কেউ সিনেমায় সাফল্য পেল, কেউ ওপরে উঠে গেল, এটি নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো প্রতিযোগিতা নাই। রাজ ভালো করলে আমি আরও খুশি। আমার কোনোই চাপ নাই।’

দামাল সিনেমায় রাজ ও মিম

ছবিতে সিয়াম ও রাজ দুজনই ফুটবল খেলোয়াড়। সম্প্রতি দুজনেই পুত্রসন্তানের বাবা হয়েছেন। দুজনের কাছে প্রশ্ন ছিল, তাঁরা ছেলেদের খেলোয়াড় বানাবেন কি না? মজা করে সিয়াম বলেন, ‘অবশ্যই সন্তানকে খেলায় মনোযোগী করাতে চাই। তবে ভাবছি, তার আগে আমি আর রাজ মিলে খেলার একটা ক্লাব বানাব।’
ফরিদুর রেজা সাগরের গল্প থেকে যৌথভাবে এর চিত্রনাট্য করেছেন রায়হান রাফি ও নাজিম উদ দৌলা।