ভারতে যাচ্ছে বাংলাদেশি সিনেমা। সেখানে হিন্দিতে ডাব করে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে ছবিগুলো মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। মুম্বাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এনফিক্সস প্রাইভেট লিমিটেড এরই মধ্যে বাংলাদেশের ছয়টি ছবির হিন্দি ডাবিং ডিজিটাল স্বত্ব কিনেছে। এতে দেশীয় সিনেমা আয়ের নতুন একটি ক্ষেত্র পেল।
খবরটি নিশ্চিত করে এনফিক্সস প্রাইভেট লিমিটেডের বাংলাদেশ প্রতিনিধি চলচ্চিত্র পরিচালক ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘এ পর্যন্ত ছয়টি ছবি নেওয়া হয়েছে। আরও কিছু ছবি নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ব্যবসা হলে এখান থেকে নিয়মিতই ছবি কিনবে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’ হিন্দি ডাবিং স্বত্ব কেনা ছবিগুলো হলো ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘মিশন এক্সট্রিম ২’, ‘শান’, ‘তালাশ’ ও ‘লোকাল’।
এনফিক্সস বাংলাদেশি সিনেমা নিতে আগ্রহী হলো কীভাবে? জানতে চাইলে ফয়সাল বলেন, ‘আমাদের “মিশন এক্সট্রিম”ছবিটি দুবাইতে মুক্তি পেয়েছিল। ওই সময় কোনোভাবে তারা ছবিটির ট্রেলার দেখেছিল। এরপর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা বাংলাদেশে আসে। বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের এখানকার কয়েকজন প্রযোজকের মিটিং হয়। এরপর এখান থেকে ছবি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে তারা।’
ফয়সাল আহমেদ মনে করেন, এটি বাংলা সিনেমার নতুন একটা বাজার হতে পারে। তিনি বলেন, ‘বাংলা সিনেমার জন্য এটি গুড সাইন। বাংলা সিনেমার জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটি ক্ষেত্র তৈরি হলো। এতে প্রযোজকের বাড়তি আয়ও হবে। তারা ছবিগুলো মূল্যও ভালো দিচ্ছে। এমনও দেখলাম, হল থেকে কয়েকটি ছবির যে টাকা এসেছে, এখান থেকে তার চেয়ে বেশি টাকা পেয়েছে ছবিগুলো। ঠিকমতো বিষয়টি ক্যারি করতে পারলে ভারতের মতো বিশাল হিন্দিভাষীর দেশে আমাদের সিনেমার বড় বাজার তৈরি হতে পারে।’
ভারতের ‘আলট্রা ইন্ডিয়া’ নামে একটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে গত মার্চে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ হিন্দি ডাবিংয়ে মুক্তি পেয়েছে। দর্শক ভিউ ৬০ লাখ পার হয়ে গেছে। বাকি ছবিগুলো ডাব করে মুক্তির প্রস্তুতি চলছে, জানালেন বাংলাদেশের এই প্রতিনিধি। তিনি বলেন, ‘শুধু আলট্রা ইন্ডিয়ায় নয়, অ্যামাজন প্রাইমেও আমাদের সিনেমা একই সঙ্গে বাংলা ও হিন্দি ডাবিংয়ে মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে।’
এমনিতে সাধারণত দক্ষিণি সিনেমার হিন্দি ডাবিং স্বত্ব কিনে থাকে এনফিক্সস প্রাইভেট লিমিটেড। বাংলাদেশি সিনেমার প্রতি আগ্রহী হলেন কেন, জানতে চাইলে মুম্বাই থেকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিতিন কুমার বলেন, ‘বাংলাদেশি সিনেমাকে এখানে এক্সপ্লোর করার জন্য কাজটি করছি আমরা। এ সময়ের কিছু কিছু সিনেমা দেখে মনে হয়েছে বাংলা সিনেমার একটি প্রমিজিং ব্যাপার আছে। তা ছাড়া এখানে হিন্দিভাষীর বিশাল দর্শক। যদি বাংলাদেশি সিনেমা হিন্দি ডাবিংয়ে দর্শক ধরতে পারে, তাহলে এখানে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশি সিনেমার ভালো ব্যবসা সম্ভব।’
হিন্দি ডাবিং স্বত্ব বিক্রি হওয়া ‘তালাশ’ ও ‘লোকাল’ ছবি দুটির প্রযোজক ও নায়ক আদর আজাদ বলেন, ‘দুটি ছবির ভালো দাম পেয়েছি। এটি আমাদের সিনেমার জন্য বাড়তি একটা আয়। আগে যেটি ভাবিইনি। এভাবে আমাদের ছবির হিন্দি ডাবিং স্বত্ব যদি তারা নিয়মিত কিনতে থাকে, তাহলে বাংলাদেশি সিনেমার নতুন একটি আয়ের পথ তৈরি হবে। শুধু আয়ই নয়, আন্তর্জাতিকভাবে শিল্পীদেরও একটা পরিচিতি তৈরি হবে।’
বিষয়টিকে বাংলা সিনেমার জন্য প্রচণ্ড ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পরিচালক সমিতির সভাপতি ও গুণী নির্মাতা কাজী হায়াৎ। তিনি বলেন, ‘এটি বাংলা সিনেমার জন্য দারুণ সুখবর। কয়েক বছর আগে থেকেই ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যের প্রেক্ষাগৃহে আমাদের সিনেমার দর্শক তৈরি হয়েছে। প্রতিবছর অনেকগুলো ছবি সেখানে মুক্তি পাচ্ছে। এবার বাংলা সিনেমার আরেকটা পথ তৈরি হলো। এখন সিনেমার কিছু রক্ত সঞ্চালন হবে। এতে আমাদের বাজার বেড়ে যাবে, আমাদের সিনেমার পরিচিতি বাড়বে। প্রযোজকদের বাড়তি আয় হবে। পুরোনো প্রযোজকের সঙ্গে নতুন প্রযোজকও আসবে, বেশি বেশি সিনেমা তৈরি হবে, ভালো সিনেমা তৈরির তাগিদ বাড়বে।’