আজ শনিবার সকাল থেকে একটা খবর বেশ চর্চিত হচ্ছে, ‘নায়িকা পরীমনির প্রথম স্বামী নিহত’। ২২ নভেম্বর ভোরে ঢাকা-ভাঙ্গা মহাসড়কের মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় একটি দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। এদিকে সকাল থেকে পরীমনির ফেসবুক পোস্টে জানা যায়, সন্তানসহ তিনি ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে গেছেন। নানা শামসুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর এই যাওয়া। প্রথম স্বামীর মৃত্যু খবর—এমন খবর ছড়িয়েছে ফেসবুকে। ভাইরাল এই সংবাদ দেখে বিরক্ত, ক্ষুব্ধ আলোচিত এই নায়িকা। তাঁর ভাষ্যে, ‘কারও মৃত্যু তো হাসি-তামাশার বিষয় নয়। ইসমাইলের মৃত্যু নিয়ে যে যেভাবে পারছেন, খবর প্রকাশ করেছেন। উৎসব উৎসব ভাব মনে হচ্ছে। এটা সত্যিই কষ্টদায়ক। এমনটা মোটেও আশা করিনি।’
যে ইসমাইল হোসেনকে নিয়ে সবাই এত কথা বলছেন, তাঁর সঙ্গে পরীমনির আসলে সম্পর্কটা কী, এ নিয়ে সবারই কৌতূহল। এত বছরের অভিনয়জীবনে পরীমনিও তাঁকে নিয়ে কিছু বলেননি, ইসমাইলও এ বিষয়ে কখনো কিছু বলেননি। আজ শনিবার কথা প্রসঙ্গে অনেক কিছু বললেও আবার অনেক কিছু ধোঁয়াশাই রেখে দিলেন পরীমনি।
প্রথম আলোকে সন্ধ্যায় পরীমনি বললেন, ‘ইসমাইল হোসেন জনি আমাদের আত্মীয়। আমার খালাতো ভাই। আমরা একসঙ্গে বেড়ে উঠেছি। বয়সে যদিও আমার চেয়ে ৫-৬ বছরের বড়, তারপরও আমাদের সম্পর্কটা ছিল খুবই চমৎকার।’
কথায় কথায় পরীমনি বললেন, এবার বাড়িতে আসার পরই আমার মা (খালাকে মা বলে ডাকেন পরীমনি) বললেন, “ও (ইসমাইল) তো বাইক অ্যাক্সিডেন্ট করছে।” আমি বললাম, “কী! ”পরে বললেন, “ও তো মারা গেছে!” এলাম নানুভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে, এসে শুনি ইসমাইলের মৃত্যুর খবর! এটা মেনে নেওয়া যে কতটা কষ্টের, বলে বোঝাতে পারব না।’
আজ শনিবার বিকেলে পরীমনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘নিয়তির ডাকে দিলে যে সাড়া, ফেলে গেলে শুধু নীরবতা। যার চলে যায় সেই বোঝে হায়, বিচ্ছেদের কি যন্ত্রণা!’ এমন পোস্টের প্রসঙ্গ তুলতেই নীরব থাকলেন পরীমনি।
পরে জিজ্ঞাসা ছিল ইসমাইলকে দেখতে গিয়েছিলেন? এমন প্রশ্নে পরীমনি বললেন, ‘আমি সাধারণত মৃত মানুষের মুখ দেখতে পারি না। এই জীবনে একমাত্র নানুভাইয়ের মরা মুখটাই শুধু দেখতে পেরেছি। আর কারোটা দেখা সম্ভব হয়নি। ইসমাইলেরও দেখা সম্ভব হয়নি। কবর জিয়ারত করেছি। সেই কবরস্থানে পাশাপাশি আমাদের পরিবারেরই অনেকগুলো কবর। সবচেয়ে নতুন কবর, ইসমাইলের। ওর বাবাসহ আমরা কবর জিয়ারতে গেছি। সবকিছু ছাপিয়ে সে তো আমার আত্মীয়। তাই তার সঙ্গে আমার সম্পর্কও তো সব সময়ের।’
ইসমাইল হোসেন বিয়ে করেছেন। তাঁর স্ত্রী আছে, আছে দুই সন্তান এবং মা-বাবাও। পরীমনির সঙ্গে জড়িয়ে এভাবে মৃত্যুসংবাদ প্রচারে কষ্ট তাঁর পরিবারেরও। পরীমনি সে প্রসঙ্গ এনে বললেন, ‘আমাদের সবারই তো সমাজ আছে, সংসার আছে, পরিবার আছে, আছে স্ত্রী-সন্তানও। কিন্তু একটা মানুষের মৃত্যুর পর যেভাবে আমাকে জড়িয়ে খবর প্রকাশ হচ্ছে, এতে আমরা কি এভাবে সেই মৃত মানুষকে সম্মান জানাচ্ছি? এভাবে অসম্মান করার অধিকার কি আমরা কেউ রাখি? তার নিজের কি কোনো পরিচয় নেই। আর আমার সঙ্গে কোনো সম্পর্কের সূত্র খুঁজেও আপনারা যদি কিছু লিখতেও চান, তা–ও তো সেটা এখন লিখতে পারেন না। তা–ও এভাবে! আমরা কেন একজন মৃত মানুষকে নিয়ে এভাবে লিখছি! আমি আর নিতে পারছি না এসব। আমিও তো মানুষ, আমারও আবেগ, অনুভূতি, ভালো লাগা, কষ্ট লাগা, দুঃখবোধ আছে।’
হতাশা নিয়ে পরীমনি বললেন, ‘একটু লাইক–কমেন্ট, একটু ভিউয়ের আশায় কেন আমরা মৃত মানুষকেও ছাড়ছি না! আমরা কি মানবিক মূল্যবোধের মানুষ হতে পারি না।’