একে একে চারটি খুন। কোনো সূত্র নেই। সন্দেহভাজনের ওপর ‘থার্ড ডিগ্রি’ প্রয়োগ করেও রহস্য ভেদ করতে পারেনি পুলিশ। কে করেছে, আর কেনই-বা করছে এসব খুন? উত্তর জানতে দেখতে হবে চয়নিকা চৌধুরীর প্রহেলিকা।
বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্সে প্রহেলিকা দেখতে গিয়েছিলাম গত বৃহস্পতিবার। সন্ধ্যা ৭টা ২০-এর শো। গিয়েই শুনি, শো শুরু হতে মিনিট তিরিশেক দেরি হবে। শুরুতেই মেজাজটা খিঁচড়ে গেল। কিন্তু সিনেমা শুরু হলে বিরক্তিটা কেটে গেল। গ্রামের দুই পক্ষের মারামারি দিয়ে শুরু হলো সিনেমা। সেখানে খুন হন একজন। খুনের দায়ে গ্রামের সব পুরুষের নামে মামলা হয়। মামলা থেকে বাঁচতে গ্রাম ছাড়েন মাস্টারের ছেলে মনা (মাহফুজ আহমেদ)। আশ্রয় নেন উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পী জামশেদের (নাসির উদ্দিন খান) বাড়িতে। জামশেদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অত্যাচারের একটা ঘটনা এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় তাঁকে। জামশেদের বাড়িতে এসে তাঁর স্ত্রী অর্পার (শবনম বুবলী) প্রেমে পড়ে যান মনা। কিন্তু একসময় জামশেদও খুন হন। এক খুনের মামলা থেকে বাঁচতে এসে আরেক খুনের মামলায় ফেঁসে যান মনা।
আর অর্পার আচরণও বেশ রহস্যজনক। মনার প্রেমে পড়ার পেছনে তাঁর কী কোন উদ্দেশ্য আছে? কাজের ছেলে আবুলের (এ কে আজাদ ) সঙ্গেই-বা তাঁর কী সম্পর্ক?
সবকিছু যেন রহস্যে মোড়া, ছবির দ্বিতীয় অংশে সেটা আরও ঘনীভূত হয়, প্রহেলিকা নামের মধ্যেই যার ইঙ্গিত দিয়েছেন পরিচালক।
প্রহেলিকাকে গানের সিনেমাও বলা যায়। গানগুলো বেশ শ্রুতিমধুর। বিশেষ করে ইমরান মাহমুদুল ও কোনালের গাওয়া ‘মেঘের নৌকা’ গানের কথা, সুরের সঙ্গে নিসর্গের উপস্থিতি দর্শকের ভালো লাগবে। কিশোর ও স্বরলিপির কণ্ঠে ‘হৃদয় দিয়ে’ গানটি সেমিক্ল্যাসিক্যাল। গান দুটির জন্য গীতিকার আসিফ ইকবাল বিশেষ ধন্যবাদ পাবেন। তবে ‘হৃদয় দিয়ে’ গানের সঙ্গে বুবলীর এক্সপ্রেশন ঠিক যায়নি। তারপরও মনে হয়েছে, শুধু গানের জন্যও এ ছবি দেখতে গেলে হতাশ হবেন না দর্শক।
একনজরে ‘প্রহেলিকা’ব্যাপ্তি: ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটপরিচালক: চয়নিকা চৌধুরীঅভিনেতা: মাহফুজ আহমেদ, শবনম বুবলী, নাসির উদ্দিন খান, রাশেদ অপু, এ কে আজাদ প্রমুখচিত্রনাট্য: পান্থ শাহরিয়ারসম্পাদনা: রমজান আলীচিত্রগ্রহণ: সুমন হোসেনপ্রযোজনা: রঙ্গন মিউজিক
সিনেমার প্রতিটি চরিত্রকে গুরুত্ব দিয়েছেন চয়নিকা চৌধুরী। অভিনয়শিল্পীরা তার প্রতিদান দিয়েছেন, ছোট ছোট শিল্পীরাও সাধ্যানুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।
গল্পের প্রতিটা বাঁকে বাঁকে রহস্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করে গেছেন পরিচালক, সফলও হয়েছেন। বিরতির পর সংগীতের ব্যবহার কমিয়ে গল্পের দিকে মনোযোগী হয়েছেন পরিচালক।
অভিনয়ের কথা বলতে গেলে মাহফুজ আহমেদের কথা না বললে অন্যায় হবে। আট বছর পর বড় পর্দায় ফিরেছেন অভিনেতা। তিনি দেখিয়েছেন, মেধাবী শিল্পীর জন্য বিরতি কোনো বিষয় নয়।
নাসির উদ্দিন খানকে মনে হয়েছে, আরও ভালো করার ক্ষমতা তাঁর ছিল, হয়তো প্রস্তুতি বা মহড়ায় তেমন সময় দিতে পারেননি। নিজেকে ছাপিয়ে যেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন বুবলী, কিছু কিছু জায়গায় পেরেছেনও, কিন্তু সব জায়গায় নয়। রাশেদ অপুর অভিনয় তাঁর নিজের ক্যারিয়ারগ্রাফকে সমৃদ্ধ করবে।
সিনেমার গতি আরেকটু বাড়িয়ে সময় কমিয়ে আনলে দর্শকের কাছে স্বস্তির হতো।
প্রহেলিকার সিনেমাটোগ্রাফি ভালো ছিল। গল্পের প্রতিটা বাঁকে বাঁকে রহস্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করে গেছেন পরিচালক, সফলও হয়েছেন। বিরতির পর সংগীতের ব্যবহার কমিয়ে গল্পের দিকে মনোযোগী হয়েছেন পরিচালক।
শেষে এসে একসঙ্গে দিয়েছেন প্রশ্নের উত্তর। তবে কিছু রহস্য তিনি শেষেও খোলাসা করেননি। তবে কী ছবিটির সিকুয়েল আসবে? নাকি বাকিটা দর্শকের বোঝাপড়ার ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন? যা-ই হোক, ঈদে শাকিব, নিশোর দাপটের মধ্যে দ্বিতীয় সপ্তাহেও নিজের গতিতে চলছে প্রহেলিকা। হাউসফুলও হচ্ছে।