বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমানের সঙ্গে চিত্রনায়িকা মৌসুমীর একটি স্থিরচিত্র ফেসবুকে ছড়িয়েছে। এই স্থিরচিত্র নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন মৌসুমীর স্বামী চিত্রনায়ক ওমর সানী। আজ মঙ্গলবার বিকেলে এফডিসিতে এ প্রসঙ্গে কথা বলেন ওমর সানী। তিনি বলেন, তারেক রহমানের সঙ্গে স্থিরচিত্র থাকার কারণে তাঁরা অনেক রোষানলে পড়েছেন। এমনকি তাঁদের ব্যবসায়িক ক্ষতিও হয়েছে।
এই স্থিরচিত্র প্রসঙ্গে জানতে ওমর সানীর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বললেন, ‘সালটা ঠিক মনে নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে মৌসুমীর এ ছবিটি তোলা হয়েছে। সেদিন ওই অনুষ্ঠানে আমারও দাওয়াত ছিল। কিন্তু কক্সবাজারে শুটিং থাকায় আমি সময় বের করতে পারিনি। মৌসুমী একাই গিয়েছিল। সেদিনের অনুষ্ঠানে ববিতা আপা ও মান্না ভাইও কিন্তু ছিলেন।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমানের সঙ্গে নায়িকা মৌসুমীর স্থিরচিত্রটি পরবর্তী সময়ে তাঁদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায় বলেও জানালেন ওমর সানী। আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে এই স্থিরচিত্রের কারণে মৌসুমীকে একাধিকবার রোষানলে পড়তে হয়েছে বলেও জানান সানী।
আজ দুপুরে এফডিসির প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতিতে পুনর্গঠিত সেন্সর বোর্ডের সংস্কারের দাবি জানিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে ওমর সানী বললেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেদিনের অনুষ্ঠানে তারেক সাহেব ও তাঁর স্ত্রী কবুতর উড়িয়ে দিচ্ছিলেন, মৌসুমীও সেখানে ছিলেন।’
কথা প্রসঙ্গে আসে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের নামও। ওমর সানী বললেন, ‘বেনজীর সাহেব তখন র্যাবের প্রধান ছিলেন। নারায়ণগঞ্জে দেখা হলে একদিন তিনি বলেছিলেন, তাঁদের কাছে নির্দেশ আছে, ছবিটি নাকি বিতর্কিত। আমরা বাজে অবস্থার মধ্যে পড়ে যাব। তখন আমি পরিবার নিয়ে ভীত হয়ে পড়ি। তার পর থেকে আমার পরিবার ও ব্যবসার ওপর তাঁরা ক্ষতি করতে চেয়েছেন। শুধু আমি একা নই, আমার কাছের মানুষগুলোও জানে, কতটা ব্যথিত হয়েছিলাম।’
রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে শিল্পীদের ছবি থাকা প্রসঙ্গে ওমর সানী বলেন, ‘একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, রাষ্ট্র যেখানে অবস্থান করিবে, প্রজারা সেখানে অবস্থান করিতে বাধ্য থাকিবে। শিল্পীদের সঙ্গে যে কারও ছবি থাকতে পারে। তবে হ্যাঁ, এটা সত্য, মৌসুমী নমিনেশন (সংরক্ষিত মহিলা আসন, ২০১৮ সালের নির্বাচন) চেয়েছিল। কেন চেয়েছিল, সেটা জাহির করতে আসিনি। এটা ওপরওয়ালা ভালো জানেন। মৌসুমী রাজনীতিতে জড়াবে না বলে একটা সময় যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়।’
কথা প্রসঙ্গে ওমর সানী জানালেন, তারেক রহমানের সঙ্গে মৌসুমীর এই স্থিরচিত্র তাঁদের পরিবারকে এতটাই আতঙ্কিত করেছিল যে শেষ ১৪ বছর ধরে লন্ডনে কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার সাহস করেননি তাঁরা।
ওমর সানী বললেন, ‘লন্ডনের অনেক অনুষ্ঠানে আমাদের দুজনের আমন্ত্রণ ছিল। কখনো আবার মৌসুমীর একারও ছিল। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য আমরা টাকাও অগ্রিম নিয়েছিলাম। কিন্তু শিল্পী সমিতির কয়েকজন আমাদের নামে এমনভাবে কথা ছড়ায়, আমরা লন্ডনে যেতেও আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। বাধ্য হয়ে তাই অ্যাডভান্স নেওয়া টাকাও ফেরত দিয়েছিলাম। কারণ, অনেকের ধারণা এমন ছিল, আমরা যদি লন্ডনে যাই, তাহলে হয়তো তারেক রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করব। পারিবারিকভাবে অশান্তি না বাড়াতে এসব ঝামেলায় আর জড়াতে চাইনি।’