এক ভক্তের মৃত্যুতে শোকাহত ঢাকাই ছবির নায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম। নাজিয়া জাবিন নামের সেই ভক্ত পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। ১ এপ্রিল সন্ধ্যায় হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
ভক্তের মৃত্যুর খবরে শোকাহত মিম বলেন, ‘আমার তো অনেক ভক্ত আছেন। কিন্তু কিছু ভক্ত তো অনেক বিশেষ হন। তাঁদের একজন ছিলেন এই নাজিয়া আপা। তাঁর মৃত্যু আমাকে দারুণভাবে ব্যথিত করেছে। মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে। গত বছর অক্টোবর মাসে “অন্তর্জাল” ছবির শোয়ে বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে তাঁর সঙ্গে পরিচয়। ওই এক দিনের পরিচয়েই মনে হয়েছে কত আপন তিনি আমার। তাঁকে ভালোভাবে বুঝে ওঠার আগেই চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে। আফসোস!’
নাজিয়ার মৃত্যুর খবরটি এক দিন পর আরেক ভক্তের মাধ্যমে জানতে পারেন মিম। এরপর গতকাল বুধবার নিজের ফেসবুক পেজে নাজিয়ার সঙ্গে পরিচয়, তাঁর সঙ্গে সম্পর্কের স্মৃতিগুলো, তাঁকে হারানোর বেদনার কথা একটি বড় স্ট্যাটাসে লিখেছেন মিম।
স্ট্যাটাসের একটা অংশে এই নায়িকা লিখেছেন, ‘আমার এত বছরের ক্যারিয়ারে যদি সত্যিকারের স্পেশাল একজন ভক্ত পেয়ে থাকি, সেটা ছিলেন ডক্টর নাজিয়া। আমার এ পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া সব সিনেমার ফার্স্ট শো সে দেখতেন। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে “অন্তর্জাল” ছবির মুক্তির দিন জানতে পারেন, আমি ওই দিন শোতে থাকব। আমার অপেক্ষায় উনি সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বসে ছিলেন বসুন্ধরায়। যাওয়ার পর আমাকে দেখে সে এত খুশি হয়েছিলেন। আমাকে তখনই একটা সোনার ব্রেসলেট আমার হাতে পরিয়ে দিয়েছিলেন।’
এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে মিম বলেন, ‘ব্রেসলেটটা একটু বড় হয়েছিল। ওই দিন বাসায় এসে খুলে রাখি। এরপর নানা সময় আমার ছবি, ভিডিও দেখে তিনি খেয়াল করেন যে আমি ব্রেসলেটটা পরি না। একদিন ফোনে আমাকে বললেন, “আমার ব্রেসলেট কি আপনার পছন্দ হয়নি? পরেন না যে!’’ আমি বললাম, হয়েছে। একটু বড় তো, কেটে পরব। এরপর কেটে পরা শুরু করলাম। আজও খুলিনি। এই যে আপনার সঙ্গে কথা বলছি, এখনো হাতে আছে।’
স্ট্যাটাসের আরেক অংশে এই অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘আজ কী মনে করে যেন আপার প্রোফাইলে গিয়ে দেখি, আপুর কাছের মানুষেরা লিখেছেন, আপা আর নেই। প্রথমে বিষয়টি মানতে পারিনি। আপাকে অনেকবার ফোন করলাম এই আশায় যে সে ধরে বলবেন, সব ঠিক আছে আর আমি যা দেখেছি, তা ভুল। কিন্তু না, তিনি ফোন ধরলেন না। আমার ভুল ভেঙেছে। মৃত্যুটাই সত্য, কিন্তু সেটা মেনে নিতে আমার কষ্ট হচ্ছে।’
ঢাকাই ছবির এই নায়িকা জানান, মৃত্যুর দুদিন আগেও নাজিয়ার সঙ্গে কথা হয়েছিল তাঁর। দুজনের দেখা করারও কথা ছিল।
মিম বলেন, ‘প্রায় এক মাস প্যারিস ও যুক্তরাজ্যে ঘুরে এসেছেন তিনি। দুদিন আগে ফোন করে আমার সঙ্গে দেখা করার কথা বললেন। আমার জন্য কিছু উপহার এনেছেন, দেখা করে দিতে চান। কিন্তু এর মধ্যে আমার সিঙ্গাপুরে যাওয়ার কথা। আমি তাঁকে বললাম, সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে এসে আমরা দেখা করব। কী করতে কী হয়ে গেল। আর দেখা হবে না, কথাও হবে না। মানুষের জীবনটা এত ছোট কেন?’
মৃত্যুর খবর জানার পর থেকে মাথা থেকে যাচ্ছে না নাজিয়ার কথা, বারবার সিনেপ্লেক্সে ওই দিনের চেহারা ভেসে উঠছে মিমের চোখে। তিনি বলেন, ‘বিস্তারিত জানার জন্য অনেক চেষ্টা করে নাজিয়া আপার মায়ের ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছি। গতকাল বিকেলে ফোন করার পর আমার পরিচয় পেয়ে আন্টি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। আমাকে যে নাজিয়া পছন্দ করতেন, ভালোবাসতেন, সেসব কথা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন আন্টি। আমি তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা পাচ্ছিলাম না। ওই সময় আমি নিজেও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। ভাবছি, একসময় আন্টির সঙ্গে দেখা করতে যাব।’
মিমের ভাষ্য, ‘নাজিয়া আপার মায়ের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলাম যে আপা করোনাকালে প্রচুর রোগী সামাল দিয়েছেন। ওই সময় থেকেই শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে গিয়েছিলেন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে সেই প্রভাবও হয়তো পড়েছে।’