হলিউড কিংবা বলিউডে সিনেমা নির্মাণের পেছনের গল্পগুলোতে থাকে মজার ঘটনা। ঘটনাগুলো জানতে আগ্রহী থাকেন ভক্তরা। সিনেমার প্রচারণায় আলোচনায় স্থান পায় এই ‘মেকিং’। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুব বেশ সিনেমার নির্মাণের পছনের গল্প জানা যায় না। তবে এবার জানা গেল ‘তুফান’ নির্মাণ পেছনের অজানা গল্প। শাকিব খান, চঞ্চল চৌধুরী, নাবিলা, মিমি চক্রবর্তীদের নানা খুনসুটি ও আড্ডায় গল্পে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।
দেশের জনপ্রিয় ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকি ও হইচইয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে চলছে সুপারহিট সিনেমা ‘তুফান’। ঈদুল আজহায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পরে দর্শকদের মধ্যে তুমুল সাড়া জাগায়। আগের মতোই ওটিটিতে আগ্রহ, উন্মাদনা নিয়ে দেশি–বিদেশি দর্শক চরকিতে সিনেমাটি দেখছেন। সেসব প্রতিক্রিয়া জানা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এর আগে আলোচিত ‘লাগে উরাধুরা’ গান নির্মাণের গল্প শোনার পরে সিনেমাটি বানানোর গল্প জানতে চেয়েছিলেন ভক্তরা। ভক্তদের সেই আগ্রহের কথা মাথায় রেখে সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চার চরিত্রের চার অভিনয়শিল্পী শাকিব খান, নাবিলা, চঞ্চল চৌধুরী, মিমি চক্রবর্তীর একটি অভিজাত হোটেলে জমে ওঠে আড্ডা। সেখানে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হন এই শিল্পীরা। ‘তুফান’ মুক্তির আগেই সেই সেই আড্ডায় কী হয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর হয়তো খুঁজছেন ভক্তরা। কী হয়েছিল সেই ১২ জুন, সেগুলোই তুলে ধরা হলো?
শুটিং সেটে কে বেশি নার্ভাস ছিলেন?
‘তুফান’ সিনেমার মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর বড় পর্দায় ফেরা মাসুমা রহমান নাবিলা বলেন, ‘তুফানে আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, কর্মক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা আমার চেয়ে অনেক বেশি। তাই আমি বেশি নার্ভাস ছিলাম। এর আগে চঞ্চল ভাইয়ের (চঞ্চল চৌধুরী) সঙ্গে আমার কাজের অভিজ্ঞতা আছে, তাই তাঁর সঙ্গে নার্ভাসনেসটা কম ছিল। তবে শাকিব খানের সঙ্গে প্রথম দিন কাজ করতে গিয়ে খুব নার্ভাস ছিলাম। মিমির (মিমি চক্রবর্তী) সঙ্গে প্রথম শটের দিন আমি দূর থেকে তাঁকে দেখছিলাম। প্রথম দেখাতেই মিমি আমাকে হাত নেড়ে সম্বোধন করেন। সেটা আমার কাছে ওয়েলকামিং ছিল এবং নার্ভাসনেস কমিয়ে দিয়েছিল।’
নাবিলা আরও বলেন, ‘শাকিব খানের সঙ্গে প্রথম শটের আগে ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কারণ, সে সুপারস্টার, মেগাস্টার। সিনেমায় আমাদের দুজনের লাস্ট সিনটাই ছিল শুটিং সেটে আমাদের প্রথম সিন। আমি খুব নার্ভাস ছিলাম। তবে ধীরে ধীরে শাকিব খান আমাকে অনেক বেশি ইজি করে ফেলেন। তিনি লাভলি কো স্টার এবং তিনি তাঁর কাজটা সুন্দর করে ফেলেন।’ নাবিলার কথার কিছুটা বিরতির মধ্যেই চঞ্চল চৌধুরী প্রশ্ন।
শাকিব–চঞ্চল মুখোমুখি
সাংবাদিকদের মতোই শাকিব খানের উদ্দেশে চঞ্চল বলেন, ‘কোনো নায়িকা যখন বলেন সে নার্ভাস ফিল করছে, আপনি তখন কী করেন? নার্ভাসনেসটা কাটান কীভাবে?’ শাকিবের সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘এর উত্তর আমি দিতে পারব না। এটা নায়িকাদের জিজ্ঞেস করেন। শাকিবকে আবারও চঞ্চলের প্রশ্ন, ‘মিমি কি নার্ভাস ছিল?’ এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য দিয়েছেন শাকিব। ‘না, একদমই না। দেখে মনে হয়নি’, বলেন শাকিব। তিনি আরও যোগ করেন, ‘ইনফ্যাক্ট নাবিলা আজকে বলছে সে নার্ভাস ছিল। নাবিলাকে দেখে বোঝাই যায়নি।’ এ কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে নাবিলাও বলে ওঠেন, ‘আমি নার্ভাসনেস হাইড করতে অনেক পটু।’
দর্শকেরা জেনেই গেছেন শাকিব খান ও চঞ্চল একসঙ্গে প্রথমবার সিনেমার পর্দা ভাগাভাগি করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘শাকিব খানের সঙ্গে প্রথম যে দৃশ্যটি ছিল, সেটা শুটিং করতে গিয়ে আমি ওরকম কোনো আচরণই করিনি, যেটা দিয়ে বোঝা যায় আমার আর শাকিবের প্রথম স্ক্রিন শেয়ার করা। রেকর্ডে যাওয়ার আগে থেকেই আমি অভিনয়ে ঢুকে গেছি। একটা পর্যায়ে শাকিব খান ভেবেছিলেন আমি হয়তো অন্য কথা বলছি। কিন্তু ওটা রিহার্সাল ছিল।’ শাকিব খান বলেন, ‘অভিনয়শিল্পীদের নার্ভাসনেস কাজ করে অফস্ক্রিন। ধরুন, প্রথমবার দেখা হলো, প্রথম কাজ করার কথা হচ্ছে, তখন কিছুটা নার্ভাস লাগে। কিন্তু যখন ক্যামেরার সামনে চলে যাই, তখন আর কোনো নার্ভাসনেস কাজ করে না।’
মিমির অভিজ্ঞতা
পরিচালক রায়হান রাফীর পরিচালনায় শাকিব খান, চঞ্চল চৌধুরী, নাবিলা ও মিমি চক্রবর্তীর এটাই প্রথম কাজ। শুটিংয়ে অন্য রকম অভিজ্ঞতা ছিল মিমির। কারণ, নতুন একটি টিমে, নতুন সহশিল্পীদের সঙ্গে প্রথম কাজ। আড্ডায় চঞ্চল মিমির কাছে জানতে চান, ‘আমাদের সঙ্গে কাজ করে তোমার কেমন লেগেছে?’
মিমি খুবই স্বল্প কথায় উত্তর দেন। তিনি বলেন, ‘খুব ভালো।’ পরেই তিনি বলেন, ‘চঞ্চলদা আমার বাবার খুব প্রিয় অভিনেতা। কলকাতায় প্রথম দেখার দিনই এ কথা আমি চঞ্চলদাকে জানিয়েছি। আর শাকিব তো এখানে (বাংলাদেশে) মেগা স্টার। তাঁর সঙ্গে যখন শুটিং করছিলাম, একটিবারের জন্যও আমার মনে হয়নি যে আমরা প্রথমবার একসঙ্গে কাজ করছি। মনে হচ্ছিল অনেক দিনের পরিচিত। শাকিবের ডেডিকেশন অন্য লেভেলের। ৪৫ ডিগ্রিতে স্যুট পরে শুটিং করা সহজ ব্যাপার না। আর নাবিলা খুব সুন্দর মিষ্টি মেয়ে। তাঁর সঙ্গে আমার তেমন দৃশ্য ছিল না। যেগুলো ছিল, সেগুলোও খুব ছোট। নাবিলার সঙ্গে প্রথম কাজ কিন্তু অনেক ভালো লেগেছে।’
সহশিল্পী হিসেবে কার কাকে পছন্দ
এ প্রশ্নের উত্তর দিতে অনীহা সবার। তবে শাকিব খান বলেন, ‘আমি আমার সব সিনেমাতেই খুব অনেস্ট। যখন যে সিনেমা করেছি, সেই সিনেমার হিরোইন আমার প্রিয় সহশিল্পী।’ নিজের কথা না বললেও শাকিব–চঞ্চলের রসায়ন নিয়ে কথা বলেছেন নাবিলা। এই অভিনেত্রী বলেন, ‘“তুফানে” পছন্দের সহশিল্পীর নাম বলা আমাদের জন্য কঠিন হলেও শাকিব খানের ব্যাপারে বলতে পারি। তাঁর প্রিয় সহশিল্পী চঞ্চল চৌধুরী। অফস্ক্রিনে তাঁরা সারাক্ষণই ব্রাদারহুড মুডে ছিলেন।’
রায়হান রাফির কম্প্রোমাইজ
‘তুফান’ রায়হান রাফির স্বপ্নের সিনেমা। প্রথম দিন থেকেই এ কথা শুনেছেন শাকিব খান। শুটিংয়ের আগে থেকেই পরিচালক ও শাকিব খান একাধিকবার সিনেমাটি নিয়ে বসেছেন। গল্প, চরিত্র, গানসহ সিনেমার সব বিষয়ে তাঁদের কথা হয়েছে। শাকিব বলেন, ‘রাফি আমাকে বলেছে যে সে কোনো সেক্টরে কম্প্রোমাইজ করতে চায় না। ও যে স্বপ্নটা দেখেছে, সেটাই করেছে।’ রায়হান রাফির সঙ্গে শাকিব, চঞ্চল, নাবিলা, মিমি—চারজনেরই প্রথম কাজ। চঞ্চল জানান, শুটিং সেটে সংলাপে অনেক পরিবর্তন এসেছে। শাকিব কথার ফাঁকে যোগ করেন, ‘রাফি “তুফান”কে কমার্শিয়াল ও ক্ল্যাসিক্যাল ঢংয়ের বানাতে চেয়েছে। অনেক পরেও যদি সিনেমাটি কেউ দেখেন, তাহলে তাঁর এটা মনে হবে।’
খুঁতখুঁতে রাফি
নাবিলা একটি গল্প বলার মাধ্যমে বোঝালেন রাফি শুটিংয়ে কতটা খুঁতখুঁতে স্বভাবের ছিলেন। নাবিলার কথায়, ‘আমার ছোট একটা সিনে নির্দিষ্ট একটা প্রপস দরকার ছিল। কিন্তু প্রপসটা আসেনি। আমি রেডি, সেট রেডি—সব প্রস্তুত। অনেক দূরে শুটিং করছিলাম আমরা। প্রপসটা আসতে অনেক সময় লাগবে। এরপরও সেটার জন্য আমরা সারা দিন বসেছিলাম। সবাই রাফিকে বলার চেষ্টা করছিল যে প্রপসটা ছাড়াই রেকর্ড করি। কিন্তু রাফি নাছোড়বান্দা, ওটা তাঁর লাগবেই। ওই দিন আমার একটা শটই ছিল। একটা শটের জন্য আমি সারা দিন বসে ছিলাম।’
যেভাবে তৈরি হলো ‘তুফান, খুব ভয় পাইছি রে’ সংলাপ
সিনেমার ট্রেলার মুক্তির পরেই চঞ্চল চৌধুরীর মুখে ‘তুফান, খুব ভয় পাইছি রে’ এ সংলাপটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই সংলাপটি চিত্রনাট্যে লেখা ছিল না। তাহলে কীভাবে সিনেমার জনপ্রিয় সংলাপটি তৈরি হয়? এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন চঞ্চল চৌধুরী নিজেই। আড্ডায় তিনি বলেন, ‘এ সংলাপটা আগে কোথাও লেখা ছিল না। শুটিংয়ের সময় তাৎক্ষণিক রায়হান রাফি আমাকে বলল, “চঞ্চল ভাই, এই ডায়ালগটা আমার লাগবে।” পরে সেই ডায়ালগ যোগ করি। বেশ কয়েকবার রিহার্সাল করে সংলাপটি আমার নিজেরও ভালো লেগে যায়।’ পরক্ষণেই তুফান নায়িকা নাবিলা বলেন, ‘চিত্রনাট্যের বেশ কিছু জায়গায় স্পন্টিনিউয়াস পরিবর্তনের কারণেই আমাদের অভিনয়টাও স্পন্টিনিউয়াস হয়েছে, রিয়েলিস্টিক লেগেছে।’
সেটে কে হতেন প্রথম
তুফান সিনেমায় নায়কই নাকি ছিলেন ‘ক্লাসের ফার্স্ট বয়’। কারণ, তিনিই নাকি সবার আগে শুটিং সেটে আসতেন, এমনটাই জানালেন চঞ্চল। আর তিনি নাকি ছিলেন ফার্স্টের চেয়েও ফার্স্ট। চঞ্চল বলেন, ‘আমি কল টাইমের আগেই প্রস্তুত হয়ে বসে থাকতাম, নিজেই গাড়ি কল করতাম।’ এই সময় শাকিব বলেন, ‘কাজটার ব্যাপারে সবারই খুব ভালোবাসা ছিল, সবাই এক্সাইটেডও ছিল। আমাকে প্রতিদিন ওয়েদার রিপোর্ট দেওয়া হতো। একসময় আমি বলে দিয়েছিলাম, আমাকে ওয়েদার রিপোর্ট যেন আর না দেওয়া হয়। যখন হোটেল থেকে নেমে গাড়িতে উঠেছি, আবার গাড়ি থেকে নেমে ভ্যানে গিয়েছি, ওইটুকু সময়ে যে গরম লাগত, মনে হতো আজকে আর শুটিং করতে পারব না ভাই, ইম্পসিবল। কিন্তু যখন কাজে ঢুকে গেছি, তখন আর গরম লাগেনি।’
‘তুফান’ এবার চরকিতে
ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৭ জুন দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় শাকিব খান অভিনীত ‘তুফান’। দেশের বাইরেও ‘তুফান’ তোলে এ সিনেমা। আদনান আদিব খান, রায়হান রাফির গল্পে, আদনান আদিব খানের চিত্রনাট্যে ‘তুফান’ সিনেমায় শাকিব খানকে দ্বৈত চরিত্রে দেখা গেছে। নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ভারতের মিমি চক্রবর্তী এবং বাংলাদেশের নাবিলা। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে আলফা-আই স্টুডিওজ লিমিটেড; ডিজিটাল পার্টনার চরকি এবং ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে আছে এসভিএফ। চরকিতে ‘তুফান’–এর পেমেন্ট পার্টনার বিকাশ ও পেইন্ট পার্টনার এশিয়ান পেইন্ট।