দীর্ঘদিন পরে ধারাবাহিক নাটক ‘এলএসডি’তে নাম লেখালেন চিত্রনায়ক অমিত হাসান। বর্তমানে ‘যন্ত্রণা’, ‘কিশোরী’ ‘বিট্রে’সহ বেশ কিছু সিনেমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে শোনা যাচ্ছে শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন। বর্তমান চলচ্চিত্রের অবস্থা ও শিল্পীদের নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুরুল আলম।
আপনি তো এর আগেও ধারাবাহিক নাটকে কাজ করেছেন...
এর আগেও কিছু কাজ করেছি। হাসান জাহাঙ্গীরসহ বেশ কয়জনের ঈদ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছি। সেগুলো কোনোটা ৪ পর্ব, কোনোটা ৮ পর্ব ছিল। আসলে সিনেমা নিয়েই তো ব্যস্ত থাকা হয়। কাছের অনেকেই অনুরোধ করলে না করতে পারি না। আর গল্প ভালো লেগে যাওয়ায় এবারও নাম লেখালাম। শুটিং এখনো শেষ হয় নাই। তবে ভালো গল্প পেলে সিনেমার পাশাপাশি নাটকে নিয়মিত কাজ করার ইচ্ছা আছে।
অনেক বছর ধরে আপনি চলচ্চিত্রে কাজ করছেন। সেই জায়গা থেকে এই সময়ে আপনার তো সিনেমাতেই বেশি ব্যস্ত থাকার কথা ছিল?
আমি তো নিয়মিত কাজ করছি। প্রতিবছর ৫–৬টা করে ছবি করছি। মাঝে আমি আমেরিকায় যাওয়া–আসার মধ্যে আছি, একটু দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। এক বছর থেকে ফিরেছি। এই সময়ে পাঁচ–ছয়টি সিনেমার কাজ ছাড়তে হয়েছে। এখন পাঁচ–ছয়টি সিনেমার শুটিং চলছে। আল্লাহর রহমতে কাজ করে যাচ্ছি।
আপনাদের সময়ে একসঙ্গে অনেক নায়ক ছিল। সবার সিনেমাই দর্শক দেখতেন। তৈরি হতো নতুন অভিনয়শল্পী। সেখানে এখন শুনতে হচ্ছে নায়কের সংকট। আপনার মন্তব্য কী?
আমার আগে আসছে মান্না, ওমর সানী, রুবেল ভাই, কাঞ্চন ভাই, বাপ্পাসহ আরও অনেকে। পরে এসেছে আমিন খানসহ অনেকে। একই সময়ে কিন্তু আমরা ৮–১০ জন হিরো কাজ করছি। আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল। সবার হাতে অনেক ছবি ছিল। আমরা ডুয়েট হিরো–হিরোইনের সিনেমা করছি। তিন হিরো এক সিনেমায় কাজ করেছি। কিন্তু এখনকার হিরোরা একা ছাড়া কাজ করতে ভয় পায়। তারা প্রতিযোগিতায় যেতে চায় না। দুজন হিরো থাকলে তো এর মধ্যে একজন ভালো করবে। এগুলো নিয়েই ভয়।
তারপরও তো শাকিব খানের পর কেউ উল্লেখযোগ্যভাবে জায়গা করে নিতে পারছে না, কারণ কী?
এখন সিনেমা হল কমে যাচ্ছে। এটা তরুণদের দুর্ভাগ্য। ডিরেক্টররাও তরুণ, যারা এসেছে তাদের নিয়ে সেই অর্থে কাজ করতে চান না। সবকিছু মিলে একটা ধোঁয়াশার মধ্যে আছি।
কখনো কি মনে হয়েছে তরুণদের মধ্যে চেষ্টার অভাব রয়েছে?
শাকিব খান তো তার জায়গা ধরে রেখেছে। পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে অনেকেই চেষ্টা করছে লাইম লাইটে আসার। ইমন, নিরব, সাইমন, বাপ্পী, আরিফিন শুভ তো জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে। আরও ভালো জায়গায় যাক, তারা তো অবশ্যই চায়। তারা কাজে সক্রিয়। অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু কেন যে তারা লাইমলাইটে আসতে পারছে না, বুঝতে পারছি না। তাদের জায়গায় তারা আছে, সেটা স্বীকার করতে হবে। আসলে তাদের লাক ফেবার করছে না।
ঢালিউড চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির দিকে তাকালে কী মনে হয়?
আমাদের ইন্ডাস্ট্রি অনেক পিছিয়ে গেছে। এখন হল নেই। সবাইকে নিয়ে বড় বাজেটের সিনেমা কেউ করতে পারছে না। এখন ডিজিটালে ছবি আসার পরে একটা গান, দুইটা ফাইট দিয়ে নাটকের মতো সিনেমা বানানো হচ্ছে। সুন্দর একটা নাম দিয়ে, ভালো একটা ট্রেলার দিয়ে দর্শক টানার চেষ্টা করছে। সিনেমা হলে গিয়ে দেখা যায়, গল্প ঠিক নাই। মনে হচ্ছে নাটক দেখছি। নাটক অবশ্যই ভালো। কিন্তু নাটক নাটকের জায়গায়, সিনেমা সিনেমার জায়গায়। নাটকের স্টাইলে ছবি বানালে চলবে না। ‘মনপুরা’, ‘আয়নাবাজি’ একটাই হয়। একই স্টাইলে ২০টা ছবি করলাম, তাতে লাভ নেই। কোনোটাই চলবে না। এসব কারণে সিনেমার মানই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ঢালিউডে মূলধারার সিনেমা বলতে যেটা বোঝায়, সেই সিনেমাও তো হচ্ছে?
আমরা যেভাবে মূলধারার সিনেমা করে আসছি, সেভাবে সিনেমা বানাতে হবে। এখন কী বলব, রোশানের প্রথম সিনেমা ‘রক্ত’। জাজের দারুণ একটা ছবি। কলকাতার সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায়। পরীমনি ছিল। কী ছিল না সিনেমায়? কিন্তু সিনেমাটি চলল না। আবার বাপ্পী জাজের সিনেমা করছে। বাইরেও সিনেমা করছে। কেউ কি বলতে পারবে বাপ্পীর ওই সিনেমাটি লাইমলাইটে গেছে? ইমন, নিরবের কোন সিনেমা আছে, যেটা দিয়ে কাঁপায়া দিয়েছে। কেউ বলতে পারবে তাদের সিনেমা হেভি ব্যবসাসফল হয়েছে। ইদানীং অপু বিশ্বাস জয়কে নিয়ে সিনেমা করছে। তাদের জুটি কি দর্শক গ্রহণ করেছে? আমার দৃষ্টিতে পর্দায় দর্শক তাদের পছন্দ করেন না। কারণ, জয় অপুর চেয়ে অনেক ছোট। তাদের সিনেমাটি দেখে মনে হয়েছে অপুর ছোট ভাই জয়।
তাহলে কি এসব চিত্রনায়কদের দুর্ভাগ্য?
জয়ের প্রথম সিনেমায় আমি নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছি। ছবিটা ভালো ছিল। কিন্তু চলল না। এখন এদের দুর্ভাগ্য, নাকি পরিচালকের, নাকি প্রযোজকের? এটাই আমরা আলোচনা করতে পারি। কারণ, এদের কোনো না কোনো সিনেমা তো দর্শক গ্রহণ করার কথা ছিল।
তারা যে সিনেমায় অভিনয় করছে, যে দর্শকদের টার্গেট করছে, সেই দর্শকেরা তো এখন নানান দেশের সিনেমা দেখছে...
হ্যাঁ, এই প্যাটার্নটা পরিবর্তন করতে হবে। এখন একই প্যাটার্নের সিনেমা হচ্ছে। কনটেন্ট ভেরিয়েশন নেই। তা ছাড়া একটা হিরো–হিরোইনদের সিনেমা দেখছে না। আমরা যখন অভিনয় করেছি, শাবানা আপা, আলমগীর ভাই, জসীম ভাই, রোজিনা ম্যাডাম। এ ছাড়া আমি, পপি, শাবনূর, মৌসুমী, আমিন খান, বাপ্পা, ওমর সানী, রুবেল ভাই আমরা যারা এখন মোটামুটি সিনিয়র, ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না পরে আমরা এসেছি। ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না ভাইয়ের পরে আমাদের কাজে লাগানো হচ্ছে না। আমাদের নিয়ে গল্প লেখা হচ্ছে না। লিখলে সিনেমায় অনেক ভেরিয়েশন আসবে। যে কারণে একই প্যাটার্নের সিনেমা দর্শক গ্রহণ করছে না। এখন দুইটা ফাইট স্লো মোশন দিয়ে মাদ্রাজি তামিল স্টাইলে সিনেমা হচ্ছে। এক কথা, একই প্যাটার্নের সিনেমা দর্শকেরা দেখবে না।
শোনা যাচ্ছে আপনি নিপুণের সঙ্গে শিল্পী সমিতির নির্বাচনে প্যানেল গঠন করছেন?
আমি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি নাই। আমার কিছু কাজের চাপ আছে। দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে ইলেকশন করতে পারব কি না, আগামী দুই দিন পরে জানাতে পারব।
এখন কোন কাজগুলোর শুটিং চলছে এবং মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে?
‘অপারেশন জ্যাকপট’, ‘কিশোরী’র শুটিং শেষ করেছি; ‘যন্ত্রণা’, ‘বিট্রে’সহ তিনটা কাজ চলছে। এই বছরেই পাঁচ–ছয়টি সিনেমা মুক্তি পাবে। আর ধারাবাহিক নাটকটি মনে হয়, ঈদের পরে এটিএন বাংলায় প্রচারিত হবে।