প্রবীর মিত্র
প্রবীর মিত্র

বিদায় প্রবীর মিত্র

গৌতম ঘোষের ‘শঙ্খচিল’-এ অভিনয় করেছেন, তা–ও ৯ বছর হয়েছে। এরপর আর বড় পর্দায় দেখা যায়নি, শরীরও সায় দিচ্ছিল না। বেশ কিছু শারীরিক জটিলতার কারণে ৮৩ বছর বয়সী অভিনেতাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় গত ২২ ডিসেম্বর। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। পরে কেবিনে স্থানান্তর করা হলে আবার অবস্থার অবনতি ঘটে। গত রোববার থেকে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে। সেদিন রাত ১০টা ১০ মিনিটে চিকিৎসকেরা প্রবীর মিত্রকে মৃত ঘোষণা করেন।

১৯৪১ সালের ১৮ আগস্ট চাঁদপুরের নতুনবাজার গুয়াখোলায় মামার বাড়িতে প্রবীর মিত্রর জন্ম। দাদার বাড়ি কেরানীগঞ্জে। পুরান ঢাকায় বেড়ে ওঠা প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকে নাট্যচর্চা করলেও অভিনয়ের চেয়ে খেলাধুলার প্রতিই আগ্রহ ছিল বেশি। অভিনেতা হবেন, এমনটা ভাবেননি তিনি। প্রথম বিভাগে হকি খেলেছেন, খেলেছেন ক্রিকেট।
১৯৬৯ সালে এইচ আকবরের জলছবি চলচ্চিত্রের জন্য প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান প্রবীর মিত্র। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে কয়েকটি চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন প্রবীর মিত্র। তবে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করেই দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন বেশি। ঋত্বিক ঘটকের তিতাস একটি নদীর নাম ছবির ‘কিশোর’ তাঁর অন্যতম স্মরণীয় চরিত্র। এ ছাড়া ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয় পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’সহ চার শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন প্রবীর মিত্র।

১৯৭৩ সালে মুসলিম পরিবারের মেয়ে অজন্তাকে ভালোবেসে বিয়ে করেন প্রবীর মিত্র। বিয়ের সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। নিজের নাম পাল্টে রাখেন হাসান ইমাম। তবে চলচ্চিত্রে প্রবীর মিত্র নামই বহাল থাকে। ২০০০ সালে স্ত্রী মারা যান। প্রবীর মিত্র দুই ছেলে (মিথুন মিত্র, সিফাত ইসলাম) ও এক মেয়ে (ফেরদৌস পারভীন) রেখে গেছেন। সামিউল ইসলাম নামে তাঁর আরেক ছেলে আগেই মারা গেছেন।

এফডিসিতে শেষবারের মতো প্রবীর মিত্রর মরদেহ আনা হলে গতকাল সোমবার তাঁকে শ্রদ্ধা জানান দীর্ঘদিনের সহকর্মী চিত্রনায়ক আলমগীর, উজ্জ্বল, ইলিয়াস কাঞ্চন, মিশা সওদাগর থেকে এ সময়ের ইমন, বাপ্পীরা। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠন। জোহরের নামাজের পর এখানেই অনুষ্ঠিত হয় তাঁর প্রথম জানাজা। চ্যানেল আইয়ে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে চারটায় আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত হন খ্যাতিমান এই অভিনেতা।