‘হঠাৎ বৃষ্টি’ দিয়ে অভিনয় শুরু চিত্রনায়ক ফেরদৌসের। ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবি তাঁকে দেশের আপামর মানুষের মনে জায়গা করে দেয়। বাংলাদেশ ও ভারত মিলিয়ে অভিনয়ে এরই মধ্যে কাটিয়ে দিয়েছেন ২৫ বছর। কয়েক বছর ধরে অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিতেও বেশ সক্রিয় এই অভিনেতা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে সারা দেশের বিভিন্ন নির্বাচনে জনসংযোগে বেশ সরব দেখা গেছে তাঁকে। অভিনেতা ফেরদৌস এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে লড়তে চান। তারই প্রক্রিয়া হিসেবে ঢাকার দুটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তিনি। প্রথম আলোকে আজ শনিবার সকালে দুটি আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।
ফেরদৌস জানান, তফসিল ঘোষণার পরেই মনোনয়ন ফরম প্রদান কার্যক্রম শুরুর দ্বিতীয় দিনেই অনলাইনে তিনি ঢাকার দুই আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। পরদিন দুই আসনের মনোনয়ন ফরম জমাও দেন। ফেরদৌস ঢাকা–১০ ও ঢাকা–১৮—এই দুই আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
সশরীর না গিয়ে অনলাইনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার ব্যাপারে প্রথম আলোকে ফেরদৌস বলেন, ‘মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে ওখানে মানুষের অনেক ভিড় দেখেছি। এরপর আমার কাছে মনে হয়েছে, যেহেতু অনলাইন উইং খোলা হয়েছে, ওখানে না গিয়ে চাপ কমাই। ওখানে আমি যাওয়া মানে আরও ভিড় বাড়ানো। আমি মানুষের সেবা করতে চাচ্ছি, সেখানে উল্টো ভোগান্তি বাড়ানোর তো কোনো মানে হয় না। মনে হয়েছে, আমি না গেলে কিছু মানুষের ভিড় হয়তো কমবে। সেই জায়গা থেকে অনলাইনে নিয়েছি। জমাও দিয়েছি।’
জনপ্রিয় নায়ক ফেরদৌস কখনোই চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চাননি। মা–বাবাও চাইতেন না তাঁদের ছেলে সিনেমায় কাজ করুক। ফেরদৌসের স্বপ্ন ছিল বৈমানিক হয়ে আকাশপথে ওড়াউড়ি করবেন। স্বপ্নপূরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেওয়া শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ার সময়েই ভর্তি হন ফ্লাইং ক্লাবে। কিন্তু একটা সময় পড়াশোনা শেষ করে নাম লেখান ঢাকাই চলচ্চিত্রে। প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘হঠাৎ বৃষ্টির’ কল্যাণে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়ে যান ফেরদৌস। এরপর শুধু সামনের দিকে এগিয়ে চলা। এখনো সেই অভিনয় চলছে।
অভিনয়ের পাশাপাশি বেড়েছে রাজনৈতিক ব্যস্ততা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে তাঁর ভাবনা কী, জানতে চাইলে ফেরদৌস বলেন, ‘আমার জীবনের প্রথম ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে। এর পর থেকেই নানা উপলক্ষে তাঁর সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ হয়েছে। ওনার দর্শনে বিশ্বাসী হয়ে রাজনীতিতে আমার সক্রিয় অংশগ্রহণ। আমার মনে হয়েছে, আমি যদি ওনার সঙ্গে কাজ করি, যেকোনো দেশের অগ্রগতির জন্য সাংস্কৃতির বিপ্লবের বড় একটা প্রভাব থাকে। সেই জায়গা থেকে আমার সঙ্গে যেহেতু শিল্পী ও শিল্পাঙ্গনের সবার সঙ্গে একটা আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে, তাই মনে হয়েছে, আই শুড বি দেয়ার। এই ভাবনা থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া।’
রাজনীতিবিদ হিসেবে কী করার স্বপ্ন দেখেন, ফেরদৌস এমন প্রশ্নে বলেন, ‘দীর্ঘ অভিনয়জীবনে আমার উপস্থিতি দিয়েই তো মানুষের সেবাই করে গেছি। বিনোদন দিয়ে গেছি। প্রতিটা বাংলা সিনেমার একদম শেষে আমরা দেখতে পাই, দুষ্টের দমন হচ্ছে এবং আলোর পথ দেখাচ্ছি আমরা। হিরো সবকিছু জয় করে নিয়ে আসে। আমি যেই সিনেমাগুলোতে অভিনয় করেছি, কোনো না কোনো বিশ্বাসের জায়গা থেকেই করেছি। এ ছাড়া মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে আমার খুব ভালো লাগে। জনকল্যাণে মানুষের কাছে থেকে, পাশে থেকে যতটুকু সম্ভব আমি সব সময় চাই যে করতে। আমার দ্বারা যেন কারও কোনো ক্ষতি না হয়, উপকার করতে পারলে তো খুবই ভালো—এটা সব সময় মেনে চলি। রাজনীতিবিদ হিসেবে মানুষের সেবায় নিজেকে আরও ভালোভাবে নিয়োজিত করতে চাই।’