রোববার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘জয় বাংলা’র প্রিমিয়ার শো
রোববার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘জয় বাংলা’র প্রিমিয়ার শো

‘জয় বাংলা’র প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত

দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছর পেরোতেই নৌহাটি গ্রামের নাজমত উল্লাহ চেয়ারম্যানের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে থেকে সে পাকিস্তানপন্থী ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় সে গোপনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। তার পরামর্শে পাকিস্তানি সেনারা রাতের অন্ধকারে আশপাশের গ্রামে হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষদের হত্যা করেছে, নারী নির্যাতন করেছে, বাড়িঘর লুট করে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এক রাতে কিছু মুক্তিযোদ্ধা মিলিটারি ক্যাম্পে হামলা করে পাকিস্তানিদের হত্যা করে। ওখানে তখন নাজমত উল্লাহ উপস্থিত ছিল। তার পায়েও গুলি লাগে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সে দাবি করে, মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে সে আহত হয়েছিল।

শয়লা রহমান তিথির কাহিনি অবলম্বনে এবং তাঁরই পরিচালনায় ‘জয় বাংলা’ চলচ্চিত্রের পটভূমি এটি। গত রোববার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘জয় বাংলা’র প্রিমিয়ার শো। এদিন বিকেল পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত সিনেমাটির চারটি প্রদর্শনী হয়।

চলচ্চিত্রটির প্রযোজক কবি জসিম চৌধুরী। এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, ফারজানা চুমকি, নাজমুল হক, আনিসুর রহমান, শ্বাশত স্বপন, আমানুল হক হেলাল, ওয়ালিদ খান, মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন, ফজলে রাব্বি সম্রাট, শিমুল মিরবর, আমিরুল ইসলাম, মিরাজুল ইসলাম হাওলাদার এবং শিশুশিল্পী বিস্ময় মুগ্ধ ও অংকন।

এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান

প্রিমিয়ার শো উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমান। সঞ্চালনা করেন ছড়াকার মোস্তফা কামাল।

চলচ্চিত্রটির গল্পে একপর্যায়ে দেখা যায়, নাজমত উল্লাহর দাবি গ্রামের সরলপ্রাণ মানুষ কেউ কেউ বিশ্বাসও করে। কারণ, তার ছোট ভাই নজিবুল মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছে। একদিন শিশু-কিশোরেরা স্কুল মাঠে খেলছে।

‘জয় বাংলা’ চলচ্চিত্রের পরিচালনা করেছেন শয়লা রহমান তিথি

খেলার মাঝে থেকে থেকে দুটি কিশোর জয় বাংলা স্লোগান দিচ্ছে। নাজমতের শরীরে রক্তের সঞ্চালন বেড়ে গেল। জীবনের সবচেয়ে ঘৃণ্যতম শব্দ বারবার উচ্চারিত হওয়ায় ক্রোধ জেগে উঠল এবং সিদ্ধান্ত নেয় এই জয় বাংলার বাহিনীকে বাঁচিয়ে রাখবে না। ইতিমধ্যে জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া গ্রামের অনেককেই গোপনে হত্যা করে বাড়ির পাশের জঙ্গলে মাটিচাপা দিয়ে একটা করে গাছ রোপণ করে রেখেছে। এক এক করে অগণিত গাছ গজিয়ে উঠেছে সেখানে।

একসময় তার স্ত্রী সব জেনে ফেলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার চিন্তা করে। তখন স্ত্রীকেও মেরে ফেলে নাজমত। স্ত্রীকে মাটিচাপা দিয়ে ফেরার পথে হঠাৎ করে সমস্বরে জয় বাংলা স্লোগান শুনতে পায়।

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘জয় বাংলা’র শুটিং

পেছনে তাকিয়ে দেখে অনেক গাছ তার দিকে এগিয়ে আসছে জয় বাংলা স্লোগান দিতে দিতে। গাছের ডালপালা নাজমত উল্লাহর ওপরে পড়তে থাকে। ভয়ে নাজমত উল্লাহর চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চায়। চারদিকে তখনো ভেসে আসছে গাছপালার ‘জয় বাংলা’ স্লোগান।