‘আমাদের সিনেমার লোকজন এখন দুই ভাগে বিভক্ত। যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা একটা গ্রুপ, আরেকটা হচ্ছে যাঁদের কোনো কাজ নাই। কাজ করার অংশ সারা বিশ্বেই কম হয়। বাইরের দেশে হয় ফিফটি-ফিফটি। আর আমাদের এখানে ১০ ভাগ কাজ করেন আর বাকি ৯০ ভাগ কাজ না করার দলে। বেকার লোক যাঁরা আছেন, যাঁদের কোনো কাজ নাই, তাঁরা প্রতি মুহূর্তে বাধার সৃষ্টি করছেন।’ ক্ষোভ আর কষ্ট থেকে বললেন চলচ্চিত্র প্রযোজক আবদুল আজিজ। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রথম আলোর মুখোমুখি হন তিনি।
বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ ৯১তম অস্কারে বিদেশি ভাষার ছবি বিভাগে প্রতিনিধিত্ব করতে এবার বাংলাদেশ থেকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘ডুব’। ছবিটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ছবি প্রযোজনা করলেও এবারই প্রথম প্রতিষ্ঠানটির কোনো ছবি বাংলাদেশ থেকে অস্কারে যাচ্ছে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত এই ছবিতে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের রোকেয়া প্রাচী, তিশা আর ভারতের ইরফান খান, পার্ণো মিত্র প্রমুখ।
‘ডুব’ ছবিটি অস্কারে বিদেশি ভাষার ছবি বিভাগে যাচ্ছে—এই খবরে আবদুল আজিজ একদিকে যেমন আনন্দিত, অন্যদিকে অনুভূতি প্রকাশের সময় তাঁর কণ্ঠে ক্ষোভ ঝরেছে। তিনি বলেন, ‘আমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ছবি “ডুব” অস্কারে যাচ্ছে, এটা আনন্দের সংবাদ। পাশাপাশি শঙ্কাও কাজ করে। আমাকে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে ছবি বানাতে হয়। হোক তা জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক, এমনকি যৌথ প্রযোজনার। এই ছবি সেন্সরে অনেক দিন আটকে ছিল। তারপর অনেক কষ্টে ছবিটি দর্শকের কাছে নিয়ে যেতে পেরেছি।’
‘ভালোবাসার রং’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় নাম লেখায় জাজ মাল্টিমিডিয়া। প্রতিষ্ঠানটি ছবি নির্মাণ করে চলছে। এই প্রতিষ্ঠানের ছবিতে অভিনয় করে আলোচনায় এসেছেন মাহিয়া মাহী, বাপ্পী চৌধুরী, সাইমন সাদিক, নুসরাত ফারিয়া, পূজা চেরী, সিয়াম, রোশানসহ অনেকে। যে শাকিব খান অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের সিনেমায় অভিনয় করছেন, তাঁকে একেবারে নতুনরূপে হাজির কররা হয় জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত ছবি ‘শিকারি’তে।
আবদুল আজিজ বলেন, ‘চলচ্চিত্রে একটা শ্রেণি আছে যারা আমার প্রতিষ্ঠানের ছবি নিয়ে জটিলতা তৈরি করে। অথচ এই আমি গত কয়েক বছর ধরে একটানা ছবি বানিয়ে চলছি। যে বা যাঁরা বড় বড় কথা বলেন, তাঁদের কাউকে ছয় বছরে কোনো ছবি বানাতে দেখিনি। “ডুব” ছবিটি নিয়েও আমাকে জটিলতায় পড়তে হয়েছে। সরকারের সব নিয়ম মেনে কাজ করার পরও কদিন আগে “বেপরোয়া” ছবির মুক্তি নিয়েও তাঁরা নানা জটিলতা তৈরি করেছেন। “প্রেম আমার ২” ছবির শুটিংয়ে ঝামেলা করেছে এই গ্রুপ। ছবির শুটিংয়ের সময় শুনলাম, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় শিল্পী ও কলাকুশলীদের নাকি এসবির (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) অনুমতি লাগে। তথ্য মন্ত্রণালয় যেখানে বলছে, এ নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, তাহলে কেন বারবার আমাদের ছবি বানানোর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে!’
আজিজ আরও বলেন, ‘আমরা যে ভালো সিনেমা বানাই, তা দেখুন। আমাদেরই ছবি “ডুব” মস্কোর উৎসবে সেরা ছবির সম্মান পেয়েছে। অথচ দেশে সেই অর্থে বড় কোনো সম্মান এখনো পায়নি। তবে দর্শকের ভালোবাসা ঠিকই পেয়েছে।’
চলচ্চিত্রের বেকার লোকদের বারবার বাধায় মাঝেমধ্যে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন বলে জানালেন আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, ‘আমরা যে শুধু প্রেম-ভালোবাসার সিনেমা বানাচ্ছি, তা নয়। আমাদের প্রতিষ্ঠানের ছবি দিয়ে সমাজের নানা সমস্যার কথাও তুলে ধরছি। আমাদের সামনে যে কয়টা ছবি আছে, যেমন ‘স্যাটারডে আফটারনুন’, ‘দহন’, ‘রাস্তা’—এগুলো মুক্তির পর দেশের দর্শক আরও উপলব্ধি করতে পারবেন। কিন্তু বেকারদের উটকো ঝামেলার কারণে ছবি বানানোর আগ্রহ মাঝেমধ্যে হারিয়ে ফেলি।’
এদিকে জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘নেকাব’ ২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের কলকাতায় একযোগে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ছবিটি মুক্তি পায়নি। বিষয়টি নিয়ে আবদুল আজিজ যেমন ক্ষিপ্ত, তেমনি ছবির প্রধান নায়ক শাকিব খানও বিরক্ত। আবদুল আজিজ বলেন, ‘এই ছবির মুক্তির জন্য ঈদের আগে সব কাগজ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করি। অনেক অপেক্ষার পর গত বুধবার রাতে অনুমতি পেয়েছি। তারপর চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে জমা দিয়েছি। এবার সংঘবদ্ধ মহল ছবিটা আটকানোর চেষ্টা করছে। নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এদিকে ছবির অভাবে একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছে। ঈদের পর নতুন কোনো ছবি মুক্তির খবর নেই। দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে যে ৭-৮ টি পুরোনো ছবি চলছে, সবই আমার প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু পুরোনো ছবি দিয়ে তো প্রেক্ষাগৃহ চলতে পারে না। নতুন সিনেমা লাগবে, এসব নিয়ে কেউ ভাবছে না। এক মাসে আমরা নিজেরাও নতুন কোনো সিনেমা উপহার দিতে পারছি না। নতুন সিনেমা যা আসবে, সেটা ওই মহল বন্ধ করে দিচ্ছে। নিজেরাও কিছু বানাচ্ছে না, আমাদেরও বানাতে দিচ্ছে না। শাকিব খানও প্রতিনিয়ত এই রোষানলে পড়ছেন। মহলটি নানা কুৎসা রটিয়ে দেশের প্রেক্ষাগৃহ বন্ধের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে!’