নতুন প্রেক্ষাগৃহ ও মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ এবং বন্ধ প্রেক্ষাগৃহ সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিকায়নের জন্য স্বল্প সুদে সরকার এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছিল। সেই ঋণ নিতে গত ৩০ মার্চ রূপালী ব্যাংকে জমা পড়েছে ৫৩টি আবেদন। সেসবের মধ্যে ২৩টি নতুন মাল্টিপ্লেক্সের, বাকিগুলো বন্ধ থাকা প্রেক্ষাগৃহ ও মাল্টিপ্লেক্স সংস্কারের। আবেদনকারীদের মধ্যে পুরোনো ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তাও আছেন।
নতুন মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ করতে ঋণ চাওয়া হয়েছে ১০ কোটি এবং সংস্কারের জন্য ৫ কোটি। জমা পড়া ৫৩টি আবেদনে মোট টাকার পরিমাণ ৩৮০ কোটি।
মুন্সিগঞ্জের স্বপ্নপুরী সিনেমা হলের স্বত্বাধিকারী ও সিনেমা হল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন তাঁর নিজের হলটিও সংস্কারের জন্য ঋণের আবেদন করেছেন। তিনি জানান, জমা পড়া আবেদনের বেশির ভাগই ঢাকার বাইরের। তিনি বলেন, ঢাকার বাইরের আবেদন বেশি, ব্যাপারটা ভালো। কারণ, ঢাকার বাইরেই বেশি হল বন্ধ হয়েছে। তা ছাড়া বর্তমানে ঢাকার বাইরে আধুনিক পরিবেশে সিনেমা দেখার সুযোগও কম। তিনি আরও বলেন, ‘এই ঋণ আবেদনের প্রক্রিয়া আগামী এক বছর চলমান থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সময় ছিল গত ৩১ মার্চ। কিন্তু আবেদনের সময় আরও এক বছর বাড়াতে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছি। কেননা, ২০২০ সালে বরাদ্দের ঘোষণার পর একটা বছর চলে গেছে করোনায়। আশা করছি আমাদের আবেদনে সাড়া দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।’ পরেরবার রূপালীর পাশাপাশি এই ঋণ নিতে সোনালী, অগ্রণী ও শিল্প ব্যাংকেও আবেদন জমা দেওয়া যাবে।
সিটি করপোরেশনের সীমানায় যে প্রেক্ষাগৃহ, সেগুলোর সুদ ৫ শতাংশ আর এর বাইরে সাড়ে ৪ শতাংশ। তবে হল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে এই সুদের হার কমিয়ে সিটি করপোরেশনের ভেতরে ৩ শতাংশ ও বাইরে ২ শতাংশ রাখার আবেদন জানানো হয়েছে।
ঋণের জন্য আবেদন করেছেন টেলিভিশন অভিনেতা ডি এ তায়েব। নিজের নামে মাল্টিপ্লেক্স করছেন তিনি। তায়েব বলেন, ‘আমি সিনেমা প্রযোজনা করি, সিনেমাতে অভিনয়ও করি। সিনেমাশিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকার সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। সেই সুযোগ নিয়ে আমি নিজের এলাকা টাঙ্গাইলে একটি আধুনিক সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করতে চাই। যেখানে হল করব, তার আশপাশের প্রায় ২০ কিলোমিটার কোনো সিনেমা হল নেই।’ রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সিনেমা হল-সংক্রান্ত এই ঋণের বিষয়টি দেখভাল করছেন ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মুর্তজা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অর্থছাড়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। সেটা হয়ে গেলে ঋণসুবিধা পেতে যাঁরা আবেদন করেছেন, সেসব যাচাই-বাছাই করা হবে। আশা করছি দ্রুতই সব হবে।’
গত এক যুগ বাংলাদেশে কমেছে সিনেমা হলের সংখ্যা। প্রায় ১ হাজার ৪০০ থেকে বর্তমান নিয়মিত প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০০। এমতাবস্থায় প্রদর্শক সমিতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালে ২৫ আগস্ট একনেকের সভায় বন্ধ সিনেমা হল সংস্কার ও নতুন সিনেমা তৈরিতে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। গত বছরের জানুয়ারি মাসে আবার সেই অঙ্ক বাড়িয়ে করা হয় এক হাজার কোটি টাকা।