২২ বছর পর

জ্যেষ্ঠ অভিনেত্রী শবনম সর্বশেষ অভিনয় করেছেন কাজী হায়াতের ‘আম্মাজান’ ছবিতে। এরপর তাঁকে আর কোনো চলচ্চিত্রে তো দেখা যায়নি, এমনকি ছিলেন না চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট কোনো অনুষ্ঠানেও। না থাকার পেছনে ছিল নানা অভিমান। তাই তাঁর এই দূরে থাকা। সেই অভিমান বোধ হয় ভেঙেছে। চলচ্চিত্রের কোনো এক আয়োজনে দেখা দিলেন ‘আম্মাজান’খ্যাত এই অভিনয়শিল্পী।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ইফতার উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শবনম এসেছিলেন
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ইফতার উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শবনম এসেছিলেন

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ইফতার উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শবনম এসেছিলেন। ঢাকার মগবাজারের একটি কনভেনশন সেন্টারে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় চলচ্চিত্রের পরিচিতজনদের সামনাসামনি দেখে তাঁর মনটা ভরে গেছে বলেও জানান শবনম। ছিলেন তাঁর অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্রের পরিচালক কাজী হায়াৎও।

শবনম

কিছুদিন আগে শবনম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আম্মাজান’ সিনেমার শুটিংয়ের পর কোনো স্টুডিওতে যাইনি, এফডিসিতে যাইনি, যাইনি কোনো অনুষ্ঠানেও। অনেক ব্যাপার আছে, প্রাণখুলে সেসব বলতে পারছি না। পারব না। আর বলে লাভও হবে না। আমার মুখ পুরোপুরি বন্ধ।’ ২২ বছর পর এমন একটি আয়োজনে আসতে পেরে তাই কিছুটা প্রাণ খুলে কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যে শবনম বলেন, ‘জীবনে অনেক অপ্রাপ্তি থাকলেও বহুদিন পর সিনেমার মানুষের কাছে এসে যে ভালোবাসা পেয়েছি, তাতে চিরঋণী আমি। দুই দশকের বেশি সময় সিনেমার বাইরে, তারপরও আপনারা আমাকে মনে রেখেছেন, এটাই আমার অনেক বড় প্রাপ্তি।’
শবনম বলেন, ‘পুরোনোদের অনেকেই তো এখন আর বেঁচে নেই। দেখা হলো মাহমুদ কলির সঙ্গে। আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গেও দেখা। পুরোনো দিনের অনেক টেকনিশিয়ানের সঙ্গে কথা হলো। নতুন অনেক নায়ক-নায়িকাকেও দেখলাম। সময়টা সুন্দর কেটেছে।’

কিছুদিন আগে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের বারিধারা পার্ক রোডের বাড়িতে চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী শবনম

শবনম জানান, ‘মাহমুদ কলি ও আমি একসঙ্গে একটি ছবিতে অভিনয় করেছিলাম। অশোক ঘোষের পরিচালনায় সেই ছবির নাম ‘আমার সংসার’। চলচ্চিত্রের কোনো অনুষ্ঠানে না যাওয়ার কারণে তাঁর সঙ্গেও দেখা হয় না অনেক দিন। দেখা হয়ে খুব ভালো লাগল। আরেকটু সময় থাকতে মন চেয়েছিল। কিন্তু ঢাকা শহরের রাস্তাঘাটের যে অবস্থা, একটু এদিক–সেদিক হলেই জ্যামের মধ্যে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। তাই দ্রুত চলে এসেছি।’
শবনম বলেন, ‘এই চলচ্চিত্রই তো আমার আরেকটা পরিবার। লম্বা সময় দূরে ছিলাম কিন্তু মনে পড়ত অনেকের কথা। আমি যে ঝর্ণা বসাক থেকে শবনম হয়েছি, সেটা চলচ্চিত্রের কারণে। তবে চলচ্চিত্রের কোনো আয়োজনে না থাকলেও রুনা লায়লার জন্মদিনে তাঁর বাড়িতে গেলেও কারও কারও সঙ্গে দেখা হতো। কিছুদিন আগে সুচন্দা আপার আমন্ত্রণে ববিতা, চম্পাসহ একটা অনুষ্ঠানে আমরা একত্র হয়েছিলাম। সেখানেও নিজেদের মতো সুন্দর সময় কেটেছে। মাঝেমধ্যে ঘরোয়া আয়োজনে কাছের কিছু মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। তাঁরাও আসেন, আমিও যাই, আলোচনা হয়। ভালোই লাগে। কিন্তু চলচ্চিত্রের কোনো আয়োজনে এবার গিয়ে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করেছে।’

২০১৯ সালে পাকিস্তানের একটি অনুষ্ঠানে বরেণ্য অভিনয়শিল্পী শবনম

এ আয়োজনে কিছুটা বিরক্তও হয়েছেন শবনম। তাঁর এই বিরক্তির কারণ মঞ্চের সামনে অনেকের মুঠোফোন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটা। শবনম বলেন, ‘মঞ্চে থেকে আমন্ত্রিত অতিথিদের কারও চেহারাই দেখতে পারছিলাম না। পরে জানতে পারলাম, ওখানে সাংবাদিক ছাড়াও অনেক ইউটিউবার ছিল। তারা কতশত ছবি যে তুলল আর ভিডিও করল। আরে বাবা, কিছু ছবি তুলে সরে গেলে তো হয়। এসবের কারণে সাংবাদিকদের সুনাম নষ্ট হয়। এভাবে মোবাইল ক্যামেরা তাক করে রাখা, এটা খানিকটা বিরক্তিকর লেগেছে।’