করোনাকালের লকডাউনকে ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন ছোট ও বড় পর্দার জনপ্রিয় মুখ অপর্ণা ঘোষ। করোনাকালে পরিচয়, এরপর বন্ধুত্ব, একটা পর্যায়ে পারিবারিকভাবে আলাপ।
তারপর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন লাক্স তারকাখ্যাত অভিনয়শিল্পী অপর্ণা ঘোষ। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামে আগ্রাবাদের একটি মন্দিরে সারলেন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। সে আয়োজনের কিছু ছবি চিত্রগল্প নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা হয়েছে অপর্ণার সঙ্গে। সেখান থেকে ছবিগুলো সংগ্রহ করা।
এই মুহূর্তে অপর্ণা আছে শ্বশুরবাড়িতে। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বিয়ে করে কেমন লাগছে, প্রথম আলোর এমন প্রশ্নের উত্তরে অপর্ণা বলেন, ‘অনুভূতিটা ভিন্ন। আমি তো মা–বাবার সঙ্গে ছিলাম। তাঁদের ছেড়ে ঢাকা শহরে একা ছিলাম। যেদিন ছেড়ে চলে আসছিলাম, অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছিল। কেমন যেন মনে হচ্ছে, কিছু একটা ফেলে চলে আসছি। একটু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে আরকি।’
অপর্ণার বরের নাম সত্রাজিৎ দত্ত। মার্চের ২০ তারিখে প্রথম কথা হয়, পরিচয় হয়। অপর্ণা বন্ধুদের সঙ্গে বন্ধুরা কথা বলছিল, তখন ভিডিও কলে ঢুকছিল সত্রাজিৎ। পেশায় তিনি আইটি ইঞ্জিনিয়ার। জাপানের এয়ারবাসে কর্মরত বলে জানালেন অপর্ণা। বিয়ে উপলক্ষে তিনি জাপান থেকে বাংলাদেশে এসেছেন।
বাগদানের পর প্রথম আলোকে অপর্ণা বলেছিলেন, ‘আমাদের এক বন্ধুর মাধ্যমে করোনাকালে ওর সঙ্গে পরিচয়। কথা বলতে বলতে একসময় ভালো লাগা তৈরি হয়। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। একটা পর্যায়ে জানতে পারি, ওর বাবা আর আমার বাবা ভালো বন্ধু। তারপর দুই পরিবার মিলে আমাদের বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।’
অপর্ণা জানান, তাঁর শ্বশুরবাড়ির মানুষ খুবই খোলামনের মানুষ। অপর্ণা যেমন, ঠিক তেমনভাবেই তাঁকে গ্রহণ করেছেন। ছেলে অপর্ণার সঙ্গে প্রেম করে জেনে ‘ভূবন মাঝি’, ‘সুতপার ঠিকানা’, ‘মেঘমল্লার’খ্যাত এই অভিনেত্রীর শ্বশুর বলেছিলেন, ‘এই অপর্ণা সেই অপর্ণা?’ অভিনয় করেন বলে তাঁকে নিয়ে গর্ব করেন শ্বশুর।
অপর্ণা জানালেন, ২০২১ সালের মে মাসে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। তখন বিনোদন অঙ্গনের বন্ধু-সহকর্মীসহ সবাইকে আমন্ত্রণ জানাবেন বলে কথা দিয়ছেন তিনি।
পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়েছে অপর্ণা ঘোষের।
অপর্ণার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়জীবন কেটেছে চট্টগ্রামে। স্কুলের পাট চুকে গেলেই নাটকের দল নান্দিকারের সঙ্গে যুক্ত হন। বাবার হাতে গড়া দলের মহড়া প্রায়ই নিজেদের বাসায় হতো। মগ্ন হয়ে সেসব মহড়া দেখতেন। বাবার সঙ্গে চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউটের মঞ্চেও যাওয়া-আসা করতেন।
২০০৩ সালে অপর্ণা প্রথম মঞ্চ অভিনয়ে নাম লেখান। এস এম সোলায়মানের ‘কোর্ট মার্শাল’ ছিল অপর্ণা অভিনীত প্রথম নাটক। এ নাটকে অভিনয় করতে দলের সবার সঙ্গে যেতে হয় চাঁদপুর। সেখানকার শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে প্রথম নাটকের অভিনয় করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই প্রথম সেমিস্টারে নাম লিখিয়েছিলেন ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতায়।
২০০৬ সালে প্রতিযোগিতা শেষে সেরা দশে জায়গা হয় তাঁর। এরপর ঢাকা-চট্টগ্রাম যাওয়া-আসার মধ্যে ছিলেন। এরপর বিজ্ঞাপনচিত্র, টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। কাজ করেছেন চলচ্চিত্রেও। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে ‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘মৃত্তিকা মায়া’, ‘মেঘমল্লার’, ‘সুতপার ঠিকানা’, ‘ভুবন মাঝি’, ‘গণ্ডি’ চলচ্চিত্রগুলো।
২০১৩ সালে ‘মৃত্তিকা মায়া’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন অপর্ণা ঘোষ।