চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মুক্তি পাওয়া সিনেমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রেক্ষাগৃহে চলেছে ‘গলুই’, ‘শান’ ও ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২’
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মুক্তি পাওয়া সিনেমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রেক্ষাগৃহে চলেছে ‘গলুই’, ‘শান’ ও ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২’

হল থেকে টাকা ওঠেনি, তবে...

বছরের প্রথম ছয় মাস শেষ হতে বাকি আর দুই দিন। শুরু হবে পরের ছয় মাসের নতুন হিসাব–নিকাশ। সবাই ব্যস্ত ঈদের ছবি মুক্তির প্রস্তুতিতে। প্রযোজক পরিবেশক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ৬ মাসে মুক্তি পেয়েছে ১৮টি চলচ্চিত্র। কোনোটিই প্রেক্ষাগৃহ থেকে বাজেটের পুরোটা তুলতে পারেনি। তবে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, টিভি স্বত্ব, ডিজিটাল স্বত্ব, স্পনসর ও দেশের বাইরে মুক্তি—ছবিগুলোর জন্য আয়ের বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। তাই প্রযোজকদের আশা, এসব ছবির পেছনে যে বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা লভ্যাংশসহ শিগগিরই উঠে আসবে।

ছবি মুক্তিতে বছরের শুরুটা ‘ছিটমহল’ দিয়ে। তবে প্রেক্ষাগৃহে চাঙা ভাব আসে ফেব্রুয়ারিতে ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ–২’ মুক্তির পর। পবিত্র ঈদুল আজহায় ছবিটি আবার মুক্তি পাবে বলে জানিয়েছে ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আরটিভি। ছবির পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস গতকাল প্রথম আলোকে জানালেন, ‘আমার বিশ্বাস, বাজেটের ৭৫ শতাংশ হল থেকেই আসবে। ইউটিউবে ছবির তিনটি গান থেকে ভালো আয় করেছে। পাশাপাশি আরটিভি ছবিটি যখন ওয়ার্ল্ড টিভি প্রিমিয়ার করবে, সেখানেও ভালো আয় হবে। সবকিছু মিলিয়ে শতভাগ লাভজনক প্রকল্প। তবে যদি আমার বাবার (দিলীপ বিশ্বাস) সময়ের মতো ৫০০-৬০০ হলে মুক্তি দিতে পারতাম, শুরুতেই বড় অঙ্কের টাকা ঘরে তুলতে পারতাম।’

ছিটমহল ইস্যু নিয়ে তৈরি ‘ছিটমহল’ ছবিটি অনেক আশা নিয়ে বছরের প্রথমে মুক্তি পেলেও তেমন ব্যবসা করতে পারেনি। চলতি বছরের গত ৬ মাসে দেশের প্রেক্ষাগৃহে আরও ১৭টি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এর মধ্যে বেশ কিছু প্রশংসিত হলেও প্রেক্ষাগৃহে বড় ব্যবসায়িক সফলতা পায়নি। প্রযোজক ও পরিচালকদের কেউ মনে করছেন, প্রেক্ষাগৃহে দর্শকবিমুখতার অন্যতম কারণ করোনা। তবে প্রেক্ষাগৃহে ব্যবসায়িক সফলতা পুরোপুরি না পেলেও এসব ছবি ডিজিটাল, টিভি, অ্যাপস, এয়ারলাইনস স্বত্ব ও বিদেশি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির দরজা খুলে যাওয়ায় ব্যবসায়িক ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই মনে করছেন তাঁরা। এই মুহূর্তে সফলতা না পেলেও কয়েক মাসের মধ্যে সব প্রযোজকই লভ্যাংশও ঘরে তুলবেন বলে আশা করছেন।

করোনাকাল এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। সম্প্রতি আবার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এরপরও গত ৬ মাসে মুক্তি পায় ১৮ চলচ্চিত্র—‘ছিটমহল’, ‘তোর মাঝেই আমার প্রেম’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’, ‘মাফিয়া-১’, ‘মুখোশ’, ‘শিমু’, ‘গুণিন’, ‘লকডাউন লাভ স্টোরি’, ‘জাল ছেঁড়ার সময়’, ‘গলুই’, ‘শান’, ‘বিদ্রোহী’, ‘বড্ড ভালোবাসি’, ‘পাপ পুণ্য’, ‘আগামীকাল’, ‘বিক্ষোভ’, ‘অমানুষ’ ও ‘তালাশ’। গত ঈদে মুক্তি পায় দেশের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা শাকিব খানের দুই ছবি—‘গলুই’ ও ‘বিদ্রোহী’। একই সময়ে মুক্তি পায় এ প্রজন্মের আরও দুই জনপ্রিয় তারকা সিয়াম-পূজার বড় বাজেটের চলচ্চিত্র ‘শান’। মূলত ঈদে মুক্তি পাওয়া এসব ছবির কারণে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ফিরতে শুরু করে। যা ছবি মুক্তি দিতে অন্য প্রযোজক, পরিচালকদের জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

সরকারি অনুদান পাওয়া ‘গলুই’-এর প্রযোজক খোরশেদ আলম। ছবির ব্যবসা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ছবির খরচ আড়াই কোটি, তার মধ্যে ৬০ লাখ টাকা অনুদান। এটুকু বলতে পারি, আমার খরচ উঠছে। কেবল তো দুই মাস চলছে। এরপর অনেক সময় পড়ে আছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রে চলছে। প্রেক্ষাগৃহ থেকে ভালো অঙ্কের অর্থ পেয়েছি। বিদেশের প্রেক্ষাগৃহে ভালো চললে লভ্যাংশ শেয়ারিংও হবে। অস্ট্রেলিয়া থেকেও যোগাযোগ করেছে। বর্তমান বাজার থেকে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৯০ লাখ তুলতে পেরেছি, এটাই অনেক বড় ঘটনা। আমি খুবই আশাবাদী। ১০০–এর কম হল নিয়ে এতটা আসতে পেরেছি, এটাই অনেক বড় বিষয়। হল বাড়লে এই সংকট থাকবে না।’

‘শান’-এর প্রযোজক ও কাহিনিকার আজাদ খান ছবির বাজেট কত, তা পরিষ্কার করে বলতে চাননি। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন চলতি বছরে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় বাজেটের। লগ্নির টাকা এখনো উঠে না এলেও এটা নিয়ে চিন্তিত নন প্রযোজক। আজাদ খান বললেন, ‘এত টাকা এত কম সিনেমা হল থেকে অল্প সময়ে তোলার কথা আশা করাই যায় না। তবে লগ্নি ফেরত অবশ্যই আসবে। ছবিটি দর্শক পছন্দ করেছে। এখনো সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখছে। ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে লগ্নি উঠে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।’
এই প্রযোজকের কথার প্রতিধ্বনি পাওয়া গেল ১৭ জুন মুক্তি পাওয়া ‘তালাশ’ ও ‘অমানুষ’-এর প্রযোজকের কথায়। ‘তালাশ’-এর পরিবেশক অভি কথাচিত্রের জাহিদ হাসান বলেন, ‘বর্তমানে হল থেকে ৩০–৫০ শতাংশ লগ্নি ফেরত আসা সম্ভব। বাকি লগ্নি ফেরত আসবে ওটিটি, ডিজিটাল মাধ্যম, স্পনসর, টিভি স্বত্ব, বিদেশে মুক্তির পর আয় থেকে।’