অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ থাকা সিনেমা হল খুলে দেওয়ার জন্য প্রশাসক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে প্রযোজক পরিবেশক সমিতি। তবে প্রশাসক এই পরিস্থিতির মধ্যে এখনই হল খুলতে নারাজ। করোনার সংক্রমণের এই পর্যায়ে হল খুলে দিয়ে দর্শককে বিপদে ফেলতে রাজি নন তাঁরা। তবে প্রযোজকের লোকসান কমাতে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন হল প্রশাসক।
৭ জুন চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি থেকে সিনেমা হল প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ মার্চ থেকে সিনেমা হল বন্ধ আছে। তাতে চলচ্চিত্রের প্রযোজক, পরিবেশক ও প্রদর্শকেরা কোটি কোটি টাকা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন।
সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইতিমধ্যে আইন-আদালত, গণপরিবহন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, শপিং মল খুলে দেওয়া হয়েছে। সিনেমাকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিনেমা হল যত দ্রুত সম্ভব খুলে দেওয়ার অনুরোধ করেছে সমিতি।
চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও হল প্রশাসক আবদুল আউয়াল। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, 'সমিতির চিঠি পেয়েছি। তবে হল খোলার সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। এই পরিস্থিতিতে হল খোলার সিদ্ধান্ত দেওয়া কঠিন। প্রতিদিনই ভাইরাসটির আক্রমণে মৃত্যু, সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। এখনো দেশে অনেক মানুষ ভাইরাসটির ব্যাপারে সচেতন নন। হল খুলে দিলে অনেক দর্শকের অসচেতনতায় সংক্রমণ আরও ছড়াতে পারে। জেনেশুনে কাজটি করা ঠিক হবে না।'
কিন্তু প্রযোজকেরা বলছেন, অনেক ছবি মুক্তির জন্য প্রস্তুত, অনেক ছবি নির্মাণাধীন। হল না খুললে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে তাঁদের। শুধু তা–ই নয়, বহু হলমালিকও পথে বসে যাবেন।
এ ব্যাপারে প্রশাসক বলেন, 'অনেক ছবি মুক্তির জন্য প্রস্তুত আছে, অনেক ছবি নির্মাণাধীন। ছবিগুলোর একটা ব্যবস্থা করতে হবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ শুরু করেছি বিকল্প ব্যবস্থার জন্য। তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রয়োজন হলে ছবিগুলো টেলিভিশনে চালিয়ে আপাতত ক্ষতি পোষানোর ব্যবস্থা করা যায় কি না, দেখা হচ্ছে।'
প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, 'অনেক দিন হলো আমরা চিঠি দিয়েছি, কিন্তু প্রশাসক আমাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেন না, কী সিদ্ধান্ত, তা-ও জানাচ্ছেন না। খুব হতাশ আমরা।'
তবে এই দুর্যোগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে দ্বিমত নেই প্রযোজক নেতাদের। তাঁদের কথা, হল বন্ধ অবস্থায় ছবিগুলো নিয়ে টেলিভিশন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে চালানো খারাপ হবে না। এই আপৎকালীন সময়ে সরকার ছবিগুলো কিনে নিয়ে এই ব্যবস্থায় প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে পারে।
তবে হল খোলা নিয়ে মালিকদের মধ্যে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, হল খোলা হলেও নতুন ছবি না পেলে তাঁরা হলে ছবি চালাবেন না। আবার কেউ বলছেন, এই পরিস্থিতিতে হল খোলা হলে দর্শকেরা আসবেন না। মধুমিতা হলের মালিক ও প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, 'এই মুহূর্তে নতুন ছবি মুক্তি দিতে হবে। তা না হলে হল খুলে লাভ নেই। হল ব্যবসার মৃত্যু হয়ে গেছে। আর খুললেও সীমিত কমর্চারী নিয়ে কাজ চালাতে হবে।'
প্রদর্শক সমিতির সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, 'শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যেভাবে বসে ক্লাস করেন, সিনেমা হলেও একইভাবে পাশাপাশি বসে দর্শকদের সিনেমা দেখতে হয়। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে দর্শকেরা সিনেমা হলে আসবে বলে মনে হয় না। তাই আমাদের পক্ষ থেকে হল খোলার বিষয়ে এখনো কারও সঙ্গে যোগাযোগ করিনি।'