সোহেল রানার কাছে কেন চিরঋণী অঞ্জনা

এই সময়ের অঞ্জনা ও সোহেল রানার সঙ্গে ১৯৭৬ সালের অঞ্জনা ও সোহেল রানা
কোলাজ : প্রথম আলো

ছোটবেলা থেকে দেশের নানা মঞ্চে নাচ করার আমন্ত্রণ পেতেন অঞ্জনা রহমান। ৯ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলে নৃত্য পরিবেশন করতে গিয়ে সোহেল রানার দৃষ্টি কাড়েন তিনি। সেদিন খুদে নৃত্যশিল্পী অঞ্জনাকে শুভকামনা জানিয়েছিলেন নায়ক সোহেল রানা। ১৪ বছর বয়সে আবার এক অনুষ্ঠানে দেখা হয় সোহেল রানা ও অঞ্জনার। তাঁকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন সোহেল রানা। এই সোহেল রানাই তাঁকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। আজ দেশবরেণ্য অভিনয়শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজক সোহেল রানার জন্মদিনে সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করলেন নৃত্যশিল্পী ও চিত্রনায়িকা অঞ্জনা।

সোহেল রানা

সোহেল রানা প্রযোজিত ‘দস্যু বনহুর’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে অঞ্জনার চলচ্চিত্রে অভিষেক। শামসুদ্দীন টগর পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে অঞ্জনা অভিনয় করেছিলেন সোহেল রানার বিপরীতে। ১৯৭৬ সালে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি সেই বছরের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায়। অঞ্জনা বললেন, ‘পারভেজ ভাই আমার চলচ্চিত্র জীবনের গুরু, তিনিই আমাকে হাত ধরে চলচ্চিত্রে নিয়ে এসেছেন। নাচের অনুষ্ঠানে দেখে যখন বললেন, তখন আমিও খুশি হই। এরপর শামসুদ্দীন টগরের সঙ্গে দেখা করতে বললেন। কিন্তু ‘দস্যু বনহুর’ চলচ্চিত্রে সাইন করার আগের দিন বাবুল চৌধুরীর ‘সেতু’ নামে একটি চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হই। শুটিংও শুরু করি। পরে অবশ্য পারভেজ ভাই কথা বলেন বাবুল চৌধুরীর সঙ্গে। কারণ, পারভেজ ভাই চেয়েছিলেন তাঁর চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েই যেন আমার অভিষেক হয়। এরপর ‘দস্যু বনহুর’ ছবির শুটিং দ্রুত শেষ করে মুক্তি দেন।’

চিত্রনায়িকা অঞ্জনা

কথায় কথায় অঞ্জনা জানান, ‘দস্যু বনহুর’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেই সময় ১০ হাজার টাকা সম্মানী পেয়েছিলেন। ওই চলচ্চিত্র তিনি বড় পর্দায় প্রথম দেখেন গুলিস্তান সিনেমা হলে। অঞ্জনা বলেন, ‘আমাকে তখন অনেক কৌশলও শিখিয়ে দিয়েছিলেন পারভেজ ভাই। সিনেমা দেখতে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, হলের সামনে গাড়ি থেকে নামার পর আমি যেন হাত নেড়ে দর্শকদের অভিবাদন জানাই। আরও কত কী যে শিখিয়েছেন তিনি। তাঁর কারণেই চলচ্চিত্রে এতটা পথ পাড়ি দিয়েছি।’
দীর্ঘ অভিনয় জীবনে অঞ্জনা ২১টি চলচ্চিত্রে সোহেল রানার বিপরীতে অভিনয় করেছেন। এই অভিনয়শিল্পীর দাবি, সব চলচ্চিত্রই ছিল সুপারহিট। সোহেল রানা ও অঞ্জনা অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে ‘আলাদীন আলীবাবা সিন্দাবাদ’, ‘আখেরি নিশান’, ‘রাজবাড়ি,’ ‘যাদুনগর’, ‘মহারাজা’, ‘আনারকলি’, ‘রাজমুকুট’, ‘অগ্নি শপথ’, ‘প্রতীক্ষা’, ‘রক্ত বন্ধন’, ‘লীলাবতী’, ‘আদম বেপারী’, ‘যাদু মহল’, ‘আকাঙ্ক্ষা’, ‘মরুর বুকে’, ‘বিচারপতি’, ‘অভিশপ্ত, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘মরণ বাজী’ ও ‘দোজখ’।

সোহেল রানা

সোহেল রানার ৭৬তম জন্মদিনে অঞ্জনা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি ড্যাশিং হিরো, যাঁর হাত ধরে বাংলা চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেছি। আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কিংবদন্তি প্রযোজক-পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সফল চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা ভাই। চলচ্চিত্রে আমার জুটি হয়ে অসংখ্য কালজয়ী দর্শকনন্দিত সুপারহিট ছবিতে আমরা একসঙ্গে অভিনয় করেছি। সারা জীবন আপনার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আপনার জন্যই অঞ্জনা হতে পেরেছি। সেদিন আপনি হাতটি ধরে একক এবং প্রধান চরিত্রে নায়িকা হিসেবে না নিয়ে এলে হয়তো আমার চলচ্চিত্রে পদার্পণের যাত্রাটা ১০০% সফলভাবে সুপ্রসন্ন হতো না। আজ আমার এই নাম–যশ–খ্যাতি–অর্থ–বিত্ত–সম্পদ সবকিছুই আপনার জন্য। আপনার এই ঋণ কোনো দিন শোধ করার মতো নয়। পারভেজ ভাই, আপনার কাছে আমি চিরঋণী।’